ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ মোকাবিলায় বরিশালে প্রস্তুত ৫৪১ আশ্রয়কেন্দ্র
ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ মোকাবিলায় বরিশালে প্রস্তুতি শুরু করেছে প্রশাসন। জেলায় প্রস্তুত করা হয়েছে ৫৪১টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র। এর প্রতিটিতে ৫০০ করে মোট ২ লাখ ৭০ হাজার ৫০০ লোক আশ্রয় নিতে পারবেন। এর বাইরে প্রয়োজনে আরও লোকজনকে নিরাপদে আশ্রয় দেওয়ার জন্য ৭৯৮টি মাধ্যমিক, ১ হাজার ৫৯০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
বরিশালের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভায় এ তথ্য জানিয়েছেন। ঘূর্ণিঝড় দানা মোকাবিলায় আজ বুধবার সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে ওই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক।
সভায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন জানান, ঘূর্ণিঝড় দানা মোকাবিলায় ১২ লাখ টাকা, ৫৬৯ টন চাল, শিশুখাদ্যের জন্য ৫ লাখ টাকা, গোখাদ্যের জন্য ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া জেলার ১০টি উপজেলায় মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) ৩২ হাজার স্বেচ্ছাসেবক এবং রেড ক্রিসেন্টের ২০০ স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছেন। এর সঙ্গে স্কাউট সদস্য ও বিএনসিসি সদস্যদের যুক্ত করার কথা বলা হয়েছে।
সভায় উপস্থিত ছিলেন বরিশালের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) লুসিকান্ত হাজং, সিভিল সার্জন মারিয়া হাসান, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসাইন, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা রনজিৎ কুমার সরকারসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় দানা প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। এর প্রভাবে ইতিমধ্যে দেশের চার বন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়া বিভাগের আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, এখন পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় দানার যে গতিপ্রকৃতি, তাতে এর আছড়ে পড়ার সম্ভাব্য এলাকা ভারতের ওডিশার উপকূল। এর প্রভাব পড়তে পারে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলা খুলনা ও বরিশালের বিভিন্ন এলাকায়। যদিও ঘূর্ণিঝড়টি ঠিক কোথায় আঘাত হানতে পারে, তা নিশ্চিত করে বলার সময় এখনো আসেনি বলে আবহাওয়াবিদেরা জানিয়েছেন।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া সর্বশেষ বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগর ও এর কাছাকাছি এলাকায় থাকা ঘূর্ণিঝড় দানা আরও পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিকে এগিয়েছে। এটি আজ সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থান করছিল। এটি আরও পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিকে এগোতে পারে এবং ঘনীভূত হতে পারে।
সর্বশেষ আবহাওয়ার বার্তায় বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার। এটি দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছাকাছি এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বরিশালে গতকাল মঙ্গলবার দিনে ও রাতে ভাপসা গরম অনুভূত হয়। আজ সকাল থেকে মেঘলা আবহাওয়া বিরাজ করে এবং কোথাও কোথাও স্বল্পস্থায়ী গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়। বিকেল গড়ানোর আগেই শুরু হয়েছে দমকা হাওয়া।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে আজ সকাল থেকে বঙ্গোপসাগর উত্তাল হয়ে ওঠে। বর্তমানে ইলিশ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা থাকায় সমুদ্রগামী মাছ ধরার ট্রলারগুলোর বেশির ভাগই উপকূলে রয়েছে।