চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফেরার পথে প্রাণ গেল মা–বাবা ও দুই ভাইয়ের
চিকিৎসার জন্য পক্ষাঘাতগ্রস্ত বাবাকে নিয়ে সম্প্রতি রাজধানী ঢাকায় গিয়েছিলেন দুই সন্তান। সঙ্গে ছিলেন মা। চিকিৎসা শেষে আজ সোমবার সপরিবারে তাঁদের বাড়ি ফেরার কথা ছিল। তবে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন একই পরিবারের এই চার সদস্য। সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলায় ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষে মাইক্রোবাসে থাকা ওই চারজন নিহত হন। গতকাল দিবাগত রাত তিনটায় ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের হাটিকুমরুল গোলচত্বর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত চারজন হলেন জসিম উদ্দিন (৬৫), তাঁর স্ত্রী নার্গিস বেগম (৬০), তাঁদের দুই ছেলে জামাল হোসেন (৪৫) ও কামাল হোসেন (৩৬)। তাঁরা সবাই রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার নরসিংহপুর গ্রামের বাসিন্দা। এ দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত চালক আশিক হোসেনকে (২৮) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসের কর্মী ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, জসিম উদ্দিনের উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজধানী ঢাকায় নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় পরিবার। গত শনিবার একটি মাইক্রোবাস ভাড়া করে তাঁকে সেখানে নেওয়া হয়। এ সময় সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তান। চিকিৎসা শেষে ওই মাইক্রোবাসে করেই গ্রামের বাড়িতে ফিরছিলেন তাঁরা। তাঁদের বহনকারী মাইক্রোবাসটি গতকাল দিবাগত রাত তিনটার দিকে হাটিকুমরুল এলাকার গোলচত্বরে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা মালবাহী ট্রাকের সঙ্গে সেটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই মাইক্রোবাসের ওই চার যাত্রী নিহত হন। এ ছাড়া চালক গুরুতর আহত হন।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স উল্লাপাড়া কার্যালয়ের স্টেশন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে বলেন, খবর পেয়ে লাশগুলো উদ্ধার করে হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। গুরুতর আহত চালককে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
লাশগুলো পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান সলঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এনামুল হক। তিনি বলেন, এ ঘটনায় সড়ক দুর্ঘটনা আইনে মামলা হবে।
খবর পেয়ে থানা থেকে লাশগুলো গ্রহণ করেন স্বজনেরা। আজ দুপুরে গ্রামটিতে গিয়ে আত্মীয়স্বজন ও এলাকার লোকজনকে বিলাপ করতে দেখা গেছে। স্থানীয় গোরস্তানে পাশাপাশি চারটি কবর খনন করা হয়েছে। বিকেলে জানাজা শেষে সেখানে তাঁদের দাফন করা হবে।
একই পরিবারের চারজনের এমন মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ হয়ে পড়েছে পুরো গ্রাম। গ্রামের বাসিন্দা ও ভবানীগঞ্জ মহিলা ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক রফিকুল ইসলাম জানান, দুর্ঘটনার পর ওই পরিবারে জামালের (জসিম উদ্দিনের ছেলে) স্ত্রী ও শিশুকন্যা ছাড়া আর কেউ থাকল না।
আবুল হোসেন নামের এক প্রতিবেশী বলেন, জসিম অসুস্থ হওয়ার পর থেকে সন্তানেরা এলাকায় চিকিৎসা করিয়েছেন। তাঁরা চেয়েছিলেন বাবাকে উন্নত চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তুলবেন। তবে তা আর হলো না। একসঙ্গে চলে যেতে হলো গোটা পরিবারকে। আজ বিকেল পাঁচটায় লাশগুলোর দাফন করা হবে।