মেঘনায় ড্রেজারডুবিতে নিখোঁজ তিনজন আজও উদ্ধার হয়নি
ভোলার মেঘনায় ড্রেজারডুবির ঘটনায় নিখোঁজ তিনজনকে উদ্ধারে আজ বুধবারও অভিযান চালানো হয়। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) এবং ড্রেজারমালিক পক্ষের ডুবুরি দল তল্লাশি চালায়।
তবে নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, উদ্ধারকাজে সরকারি সংস্থার গাফিলতির কারণে তাদের স্বজনদের এখনো পাওয়া যায়নি। তাঁরা দ্রুত তাঁদের স্বজনদের উদ্ধারের দাবি জানান।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, গত রোববার দিবাগত রাতে ইলিশা ইউনিয়ন ও কাচিয়া ইউনিয়নের সীমানায় গাজীপুর চরসংলগ্ন মেঘনা নদীতে ড্রেজারটি ডুবে যায়। রাতে মালবাহী কোনো লাইটার জাহাজের ধাক্কায় ড্রেজারটি ডুবে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওই সময় চালক-কর্মকর্তাসহ পাঁচজন আর ড্রেজার থেকে বের হতে পারেননি। গত সোমবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে মালিকপক্ষের ভাড়া করা ডুবুরি দল ডুবন্ত ড্রেজারটি থেকে দুজনের লাশ উদ্ধার করলেও তিনজন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
ডুবে যাওয়া ড্রেজার থেকে সোমবার যে দুজনের লাশ উদ্ধার হয়েছে, তাঁরা হলেন সদর উপজেলার পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের বাঘারহাট গ্রামের বাসিন্দা নুরে আলম (৪১) ও আরিফুল ইসলাম (২১)। অন্যদিকে নিখোঁজ ব্যক্তিরা হলেন ড্রেজারের শ্রমিক মো. সিয়াম (২২), হারুনুর রশিদ (৪০) ও মো. তানজিল (২১)। উদ্ধার হওয়া নুরুদ্দীন ও আরিফুল ইসলামের লাশ ময়নাতদন্তের পর মঙ্গলবার আসরের নামাজের পর পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
নিখোঁজ থাকা সিয়াম, হারুনুর রশিদ ও মো. তানজিলের স্বজনেরা বলেন, উদ্ধারকারীদের অলসতার কারণে তাঁদের নিখোঁজ স্বজনদের এখনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। ড্রেজার ডুবেছে রোববার। ফায়ার সার্ভিস ও কোস্টগার্ডের সদস্যরা নদীতে নেমেছেন এক দিন পরে সোমবার। সোমবার সারা দিন তাঁর শুধু ডুবে যাওয়া ড্রেজারের সন্ধান পেয়েছেন। তাঁরা ড্রেজারের ভেতরে কেবিনে তল্লাশি করেননি। সোমবার বিকেলে তল্লাশি চালালে হয়তো নিখোঁজ ব্যক্তিদের আরও আগে পাওয়া যেত। তাঁরা নিখোঁজ স্বজনদের দ্রুত ফিরে পেতে চান। তাঁদের আর কোনো দাবি নেই।
ভোলা সদর উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, নিখোঁজ ব্যক্তিদের উদ্ধারকাজ আজ বুধবারও চলমান। মালিকপক্ষের তিনজন ডুবুরি আছেন। বিআইডব্লিউটিএর আছে তিনজন। মঙ্গলবার বেলা তিনটা–চারটার দিকে ভাটার সময় ডুবুরি নেমে তল্লাশি চালিয়ে আবার উঠে এসেছেন। ডুবুরিরা বলেছেন, ড্রেজারের বেশির ভাগ অংশ বালুতে ঢাকা পড়ে আটকে আছে। তাঁরা যে পর্যন্ত যেতে পারেন, সে পর্যন্ত তল্লাশি চালিয়েছেন। জোয়ারের চাপ খুব বেশি। নদীর গভীরে যেতে সমস্যা হচ্ছে। আজ বিকেল চারটায় উদ্ধার অভিযান শেষ হয়।
ড্রেজারমালিক শাহে আলম জানান, ‘একবার শুনছি উদ্ধারকারী জাহাজ আসবে । আবার শুনছি মালিকপক্ষকেই উদ্ধার করতে হবে। সরকারি উদ্ধারকারী জাহাজ এলে ১৫ লাখ টাকা লাগবে। ড্রেজারের দাম ২০ লাখ টাকা। উদ্ধার করতে ১৫ লাখ টাকা লাগলে অন্য চেষ্টা করতে হবে। কারণ আমাদের এত টাকা দেওয়ার সামর্থ্য নেই।’
মালিকপক্ষ আরও জানায়, ঘটনাস্থলে সর্বক্ষণ থেকে নৌ পুলিশ সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে। তবে কোস্টগার্ড ও ফায়ার সার্ভিসের লোকজন সোমবার বিকেলে ড্রেজারটি চিহ্নিত করে যাওয়ার সময় ছবি তুলে চলে গেছেন। তাঁরা আর আসেননি।
বিআইডব্লিউটিএ ও মালিকপক্ষের ডুবুরি দল নিখোঁজ তিনজনকে উদ্ধারের চেষ্টা করছে; কিন্তু নদীতে প্রবল স্রোত। নামা যাচ্ছে না। ডুবুরিরা আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। ড্রেজারের সব জায়গায় তাঁরা খুঁজে দেখেছেন। কাউকে পাওয়া যায়নি।
ভোলার ইলিশা নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিদ্যুৎ কুমার বড়ুয়া বলেন, বিআইডব্লিউটিএ ও মালিকপক্ষের ডুবুরি দল নিখোঁজ তিনজনকে উদ্ধারের চেষ্টা করছে; কিন্তু নদীতে প্রবল স্রোত। নামা যাচ্ছে না। ডুবুরিরা আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। ড্রেজারের সব জায়গায় তাঁরা খুঁজে দেখেছেন। কাউকে পাওয়া যায়নি। ডুবুরিরা বলেছেন, ড্রেজারের ইঞ্জিনরুম ও কেবিন কোথাও নিখোঁজ ব্যক্তিদের অস্তিত্ব নেই। নদীতে তীব্র স্রোতের কারণে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে।
ওসি আরও বলেন,ড্রেজারটির দৈর্ঘ্য ৯৮ ফুট ও প্রস্থ ১৬ ফুট। এটা তুলতে গেলে রুস্তম বা হামজা দরকার। বড় ধরনের ক্রেন ছাড়া তোলা সম্ভব হবে না।
বিআইডব্লিউটিএর নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের যুগ্ম পরিচালক মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ‘মঙ্গলবার দুজনকে উদ্ধার করা হয়েছে। আজ বুধবার শেষবারের মতো ডুবুরিরা উদ্ধারকাজ চালু রেখেছেন। শেষবারের মতো ড্রেজারটি উদ্ধারের চেষ্টা করা হচ্ছে।’
মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ‘আমরা আর উদ্ধারকাজ চালাব না। ডুবুরিরা বলেছেন মঙ্গলবারই তাঁরা ড্রেজারের ভেতরে ভালো করে অনুসন্ধান চালিয়েছেন। ভেতরে আর লাশ নেই। এমন হতে পারে, লাশ ভেসে যেতে পারে। নদীতে তীব্র স্রোত। ভেসে গেলে অনেক দূরে চলে গেছে। কেবিনের ভেতরে দুটি লাশ পাওয়া গেছে। সেখানে যে সবাই ঘুমিয়ে ছিল, তা নয়। গরমের দিন অনেকে বাইরে ছাদের ওপর ঘুমাতে পারে।’
বিআইডব্লিউটিএর নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের যুগ্ম পরিচালক মোহাম্মদ সেলিম আরও বলেন, ‘নীতিমালা অনুসারে উদ্ধারকাজ করবে মালিকপক্ষ। আমরা তাদের সহযোগিতা করব। সহযোগিতা বলতে আমরা বুদ্ধি–পরামর্শ দেব। আজই আমরা মালিকপক্ষকে ১৫ দিনের মধ্যে ড্রেজারটি উদ্ধারের জন্য চিঠি দেব।’