মুন্সিগঞ্জে কৃষিজমি অধিগ্রহণ বন্ধের দাবিতে জমির মালিকদের বিক্ষোভ
মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলায় বিসিক মুদ্রণ শিল্পনগরীর জন্য তিন ফসলি জমি অধিগ্রহণ বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার চিত্রকোট ইউনিয়নের খারশুর এলাকার ঢাকা-দোহার সড়কে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
ঘণ্টাব্যাপী কর্মসূচিতে প্রকল্প এলাকার জমির মালিক ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা অংশ নেন। মানববন্ধন শেষে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তাঁরা। এ সময় পরিবেশ ও কৃষিজমি রক্ষায় বিভিন্ন স্লোগান দেন তাঁরা।
বিক্ষোভকারীরা জানান, ইউনিয়নটির খারশুর মৌজার খারশুর, লালপুর, নয়াগাঁও, গীরিনগর, খারখোলা, মরিচা, বেনুখালী গ্রামগুলোর অন্তত ৫০০ পরিবারের তিন ফসলি জমি রয়েছে। এসব জমিতে কৃষিকাজ করে এই পরিবারগুলোর জীবিকা চলে। এখানে ধান ছাড়াও সব ধরনের শাকসবজি উৎপাদন করা হয়। সরকার জমি অধিগ্রহণ করে নিলে এসব পরিবারের সবাই কর্মহীন হয়ে পড়বেন। জমি ভরাটের কারণে পরিবেশের ওপরও বিরূপ প্রভাব পড়বে। তাই খারশুর মৌজায় জমি অধিগ্রহণ বন্ধ করতে হবে।
২৬৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০২৭ সালের জুন মাসে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) বড়বর্তা মৌজায় ১০০ একর জমিতে বিসিক মুদ্রণ শিল্পনগরী প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। ওই বছর কাজ শুরু করে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এ সময় প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ১৩৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা। তবে বড়বর্তায় জমি অধিগ্রহণে সমস্যা দেখা দেওয়ায় ২০২২ সালের শুরুর দিকে খারশুর মৌজায় প্রকল্পটি করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। ২০২৩ সালে খারশুরে অনুমোদন হয়। ২৬৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০২৭ সালের জুন মাসে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া কৃষক ননি গোপাল বিশ্বাস বলেন, ‘যেখানে জমি অধিগ্রহণ করার কথা, সেখানে আমার ৬৩ শতক জমি আছে। ওই জমিতে আলু, শর্ষে, ধান, পাট, মৌসুমি শাকসবজির চাষাবাদ করি। এতে যা আয় হয়, তা দিয়ে আমার দুই ছেলে-মেয়ের পড়াশোনাসহ পাঁচজনের সংসার চলে। সরকার জমি নিয়ে গেলে আমাদের সব শেষ হয়ে যাবে।’
খারশুর কৃষিজমি রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক মাসুদ রানা বিপ্লব বলেন, ‘আমাদের ১৫২ শতক জমির এই প্রকল্প এলাকার ভেতরে পড়েছে। আমরা কৃষি পরিবারের সন্তান। কৃষিকাজ করে আমাদের জীবন চলে। অথচ প্রকল্পের নামে জোর করে আমাদের জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। এর পেছনে স্থানীয় দালালেরা সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কাজ করছে। আমরা আমাদের জমিতে কোনো মিল-কারখানা চাই না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টার কাছে আমাদের এই এলাকার মানুষের সবার প্রার্থনা, যেন দ্রুত জমি অধিগ্রহণ বন্ধ করে জমিগুলো ফসল আবাদের জন্য রাখা হয়। যদি জোর করে জমি ভরাটের পাঁয়তারা করা হয়, আমরা জীবন দিয়ে জমি রক্ষা করব।’
জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ নিজামউদ্দিন প্রথম আলোকে জানান, ‘যাঁরা জমির মালিক, তাঁরা দুই ফসলি-তিন ফসলি জমি দাবি করেছিলেন। কৃষি বিভাগের মাধ্যমে জমিগুলো তদন্ত করে দেখা হয়েছে। জমিগুলোতে সারা বছর পানি থাকে। এগুলো এক ফসলি জমি। ইতিমধ্যে আমাদের অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ প্রদানের কাজ শুরু হয়েছে। জমির মালিকদের চেক প্রস্তুত রয়েছে। আগামী সপ্তাহ থেকে বালু ভরাটের কথা রয়েছে। প্রশাসন আমাদের জমি বুঝিয়ে দিলেই আমরা সেখানে কাজ করব।’
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা মুদ্রণ শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে একটি ছাতার নিচে আনার জন্য এ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। রাজধানী ঢাকা থেকে শিল্পপ্রতিষ্ঠান সরিয়ে বিকেন্দ্রীকরণের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পরিবেশবান্ধব এ শিল্পনগরীতে স্থানান্তরিত হতে যাবতীয় সহায়তা করবে সরকার। সেখানে ৩০০টির মতো শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে। যার মাধ্যমে স্থানীয় মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে অর্থনীতি গতিশীল হবে বলে প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে।