দুই ছাত্রীর পারিবারিক বিরোধে সংঘর্ষ
এবার বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস আটকে দিলেন বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের দুই ছাত্রীর পারিবারিক বিরোধের জেরে দুই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে বিএম কলেজের চারটি বাস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। বাসগুলো মেরামতে তখন অর্থ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ঘটনার প্রায় এক মাস পেরিয়ে গেলেও প্রতিশ্রুত অর্থ না দেওয়ায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি বাস আটকে দিয়েছেন বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে আন্ধারমানিক ও নয়নভাঙ্গানী নামের বাস দুটিকে আটকে কলেজের মহাত্মা অশ্বিনী কুমার ছাত্রাবাস প্রাঙ্গণে রেখেছেন শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। দুটি প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ বলছে, দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে আটক বাসগুলো মুক্ত করার চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া বাস আটকের ঘটনাকে কেন্দ্র করে যাতে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়, সেদিকে নজর রাখছে পুলিশ।
শিক্ষার্থীরা জানান, গত ৩ সেপ্টেম্বর রাতে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রীর পারিবারিক বিরোধ ঘিরে রাতভর সংঘর্ষে জড়ান বিশ্ববিদ্যালয় ও বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা। তখন দফায় দফায় সংঘর্ষের সময় বিএম কলেজের চারটি বাস ভাঙচুর করেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ প্রশাসনের সমঝোতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। তখন যার যা ক্ষতি হয়েছে, সেটি দেওয়ার কথা থাকলেও বিএম কলেজের ক্ষতিপূরণ এখনো দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ভাঙাচোরা অবস্থায় কলেজের চারটি বাস গ্যারেজে পড়ে থাকায় শিক্ষার্থীরা নানা ভোগান্তিতে পড়েন। সমস্যা সমাধানে একাধিকবার উদ্যোগ নিলেও জরিমানার বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বাধ্য হয়ে আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস দুটি আটকে দিয়েছেন কলেজের শিক্ষার্থীরা।
বিএম কলেজের অধ্যক্ষ মো. তাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সকাল ৯টার দিকে খবর আসে, বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি বাস শিক্ষার্থীরা আটকে রেখেছেন। মূলত যে বাসগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভেঙেছিলেন, সেগুলো মেরামতের ব্যবস্থা না করায় ক্ষোভে এমনটা করেছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে। ৩ সেপ্টেম্বর দুই পক্ষের সংঘর্ষে বিএম কলেজের ৫ লাখ ৮০ ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ লাখ ৮০ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলেও জানান অধ্যক্ষ।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর রাহাত হোসেন ফয়সাল বলেন, ভুল–বোঝাবুঝির কারণে এমনটা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে উচ্চপর্যায়ে কথা বলেছে। দ্রুত বিষয়টি সমাধান করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে বরিশাল মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির বলেন, একটি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়। কিন্তু জুলাই-আগস্টে এই দুই প্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আন্দোলন করে স্বৈরাচার সরকারের পতন ঘটিয়েছেন। তাই দ্রুত তাঁদের মধ্যে আবার যেন ঐক্য ফিরে আসে, সে ব্যাপারে তাঁরা কাজ করছেন।
জানতে চাইলে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার শওকত আনোয়ার ইসলাম বলেন, বিষয়টি মীমাংসার জন্য দুই প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা হয়েছে। যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সজাগ আছে।