দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন
রূপগঞ্জে থাকবে সতর্ক দৃষ্টি
সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ নিশ্চিতে রূপগঞ্জে এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে আলোচনায় নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসন। প্রচারণার শুরু থেকে প্রার্থীদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ আর মামলা–হামলার মধ্য দিয়ে বারবার আলোচনায় এসেছে আসনটি। এ পর্যন্ত বড় কোনো অঘটন না ঘটলেও ভোটের দিনের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা আছে ভোটারদের মনে। আর রিটার্নিং কর্মকর্তা বলছেন, রূপগঞ্জকে আলাদা গুরুত্ব দিয়ে এরই মধ্যে নেওয়া হয়েছে বাড়তি সতর্কতা।
সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ নিশ্চিতে রূপগঞ্জে এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। শুক্রবার সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশের টহল ছিল চোখে পড়ার মতো। সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্বিগুণ সদস্য মোতায়েনের পরিকল্পনা রয়েছে নির্বাচন–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের।
আসনটির বর্তমান সংসদ সদস্য পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক)। টানা চতুর্থবারের মতো তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন। ভোটাররা বলছেন, তাঁর সঙ্গে লড়াই হবে রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও তিনবারের সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহাজাহান ভূঁইয়ার (কেটলি)। এ ছাড়া তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকারসহ আরও সাতজন প্রার্থী রয়েছেন। এর মধ্যে প্রচারণার সময় শেষ হলেও অনলাইনে বিভিন্নভাবে প্রার্থীদের ভোটের প্রচার চলছে।
প্রচারে গোলাম দস্তগীর গাজী ও শাহাজাহান ভূঁইয়ার উত্তেজনা ভোটারদের মনেও প্রভাব ফেলছে। কায়েতপাড়া এলাকায় কথা হয় দুজন নারীর সঙ্গে। ভোট নিয়ে তাঁদের ভাবনা জানতে চাইলে এই দুই ভোটার শুরুতে কথা বলতে চাননি। পরে পরিচয় গোপন রাখার নিশ্চয়তা দেওয়া হলে তাঁরা জানান, সুষ্ঠু ভোট হবে কি না, সে বিষয়ে তাঁদের সন্দেহ আছে। এমন সন্দেহের কারণ জানতে চাইলে জানান, ওই এলাকার মোশাররফ হোসেনের লোকজন তাঁদের ভোটকেন্দ্রে না যেতে হুমকি দিয়েছেন।
পরিস্থিতি বিবেচনায় রূপগঞ্জকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। অন্যান্য আসনের তুলনায় রূপগঞ্জে দ্বিগুণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং ম্যাজিস্ট্রেট থাকছেন।
রূপগঞ্জ থানা সূত্রে জানা যায়, মোশাররফ হোসেন পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী। তাঁর বিরুদ্ধে ৪০টির বেশি মামলা রয়েছে। সর্বশেষ কায়েতপাড়ায় নৌকার নির্বাচনী ক্যাম্প পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়। এর পর থেকে মোশাররফ এলাকার বাইরে রয়েছেন।
এদিকে উপজেলার মুড়াপাড়া ঋষিপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় সনাতন ধর্মাবলম্বী ভোটারদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ রূপগঞ্জ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতাদের। গতকাল এ বিষয়ে তাঁরা রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগে বলা হয়েছে, রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউনিয়নের নাওড়া এলাকার মোশাররফ হোসেন, মুড়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য আবদুল জব্বার ও মানিক হোসেন নিজ নিজ এলাকার ভোটারদের স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান ভূঁইয়াকে ভোট দিতে হুমকি দিচ্ছেন।
আসনটির নৌকা প্রতীকের প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজী প্রথম আলোকে বলেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীরা নৌকাতেই ভোট দেন। সে কারণে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীরা এই ভোটারদের হুমকি দিচ্ছে। তবে ভোট শান্তিপূর্ণ হবে বলে আশা আওয়ামী লীগের এই প্রার্থীর। তিনি মনে করেন, রিটার্নিং কর্মকর্তার নেতৃত্বে প্রশাসন শক্ত অবস্থানে আছেন।
ভোটের পরিবেশ প্রসঙ্গে কেটলি প্রতীকের শাহজাহান ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, রূপগঞ্জে বিভিন্ন সন্ত্রাসী বাহিনী ও অস্ত্রধারীদের আনাগোনা বেড়েছে। প্রশাসন যেন এ বিষয়ে সতর্ক থাকে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নারায়ণগঞ্জের একজন জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে জানান, দৃশ্যত রূপগঞ্জে আওয়ামী লীগের দুই নেতার মধ্যে ভোটের লড়াই হচ্ছে। তবে এই দুই প্রার্থীর সঙ্গে দেশের কিছু শীর্ষ শিল্প গ্রুপ নির্বাচনে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। এর ফলে ভোটের দিন বৈধ–অবৈধ অস্ত্রধারী এবং পেশি শক্তির ব্যবহার হওয়ার শঙ্কা আছে। বিভিন্ন গোষ্ঠীর চাপ উপেক্ষা করেই তাঁদের কাজ করতে হচ্ছে বলে দাবি এই পুলিশ কর্মকর্তার।
জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আসনটিতে মোট ৩ লাখ ৮৫ হাজার ৬১৬ জন ভোটার আছেন। সাতটি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভার ১২৮টি কেন্দ্রের ৮১৭টি কক্ষে এবার ভোট গ্রহণ হবে। ৬৩টি ভোটকেন্দ্রকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বা অতিগুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
রূপগঞ্জ নিয়ে নিজেদের বিশেষ ভাবনার কথা জানালেন নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, পুরো নারায়ণগঞ্জ নিয়েই তাঁরা সতর্ক অবস্থানে আছেন। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় রূপগঞ্জকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। অন্যান্য আসনের তুলনায় রূপগঞ্জে দ্বিগুণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং ম্যাজিস্ট্রেট থাকছেন।
সনাতন ধর্মাবলম্বী ভোটারদের হুমকির বিষয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘আমরা এই বিষয়ে এরই মধ্যে কাজ করছি। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যা করণীয়, তার সবই করা হচ্ছে।’