বালিয়াকান্দিতে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে আহত ৫, পাল্টাপাল্টি মামলা
রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে দুই দফা হামলায় মোট পাঁচজন আহত হয়েছেন। এ সময় একটি মাইক্রোবাস ভাঙচুর করা হয়েছে। এ ঘটনায় আজ শনিবার বালিয়াকান্দি থানায় পাল্টাপাল্টি মামলা করা হয়েছে।
বালিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দুজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রার্থীরা হলেন আবুল কালাম আজাদ (আনারস প্রতীক) ও এহসানুল হাকিম ওরফে সাধন (মোটরসাইকেল প্রতীক)। আবুল কালাম আজাদ উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। এহসানুল হাকিম উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। এহসানুল হাকিমের আপন চাচাতো ভাই রেলমন্ত্রী ও রাজবাড়ী-২ আসনের (পাংশা, বালিয়াকান্দি ও কালুখালী) সংসদ সদস্য মো. জিল্লুল হাকিম।
মামলার এজাহার ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল রাতে আনারস প্রতীকের সমর্থকেরা নির্বাচনী প্রচারণা করে বেরুলি বাজার দিয়ে ফিরছিলেন। বেরুলি বাজারের নবাবপুর ইউপি কার্যালয়ের সামনে আসার পর তাঁদের মোটরসাইকেল লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। ইটপাটকেলের আঘাতে তুহিন বিশ্বাস, এ বি এম কাইমুজ্জামান, হাসান খান, সুজন শেখসহ চারজন আহত হন। এ সময় তাঁরা দ্রুত তাঁদের প্রার্থী আবুল কালাম আজাদের বাড়িতে চলে আসেন। ওই বাড়ির পাশেই একটি বাড়িতে প্রতিদ্বন্দ্বী মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী এহসানুল হাকিমের উঠানবৈঠক চলছিল। তখন রাস্তার ওপর এহসানুল পক্ষের একটি মাইক্রোবাস থাকায় সেটি সরাতে বলেন আবুল কালাম আজাদের কর্মীরা। এ কথা বলতেই আবুল কালাম আজাদের কর্মী মো. আবদুল্লাহর ওপর হামলা চালানো হয়। তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে বালিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
দুই দফা হামলার শিকার হয়ে ক্ষুব্ধ আবুল কালাম আজাদের কর্মীরা সংঘবদ্ধ হয়ে এহসানুল পক্ষের মাইক্রোবাসটি ভাঙচুর করেন। পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনায় ভাঙচুরের শিকার মাইক্রোবাসের মালিক ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আহম্মদ আলী বাদী হয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থী আবুল কালাম আজাদের ছেলে সুমনকে প্রধান আসামি করে ১৪ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত ৫০ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছেন। অন্যদিকে, হামলায় আহত মো. আবদুল্লাহর বাবা তোফাজ্জেল হোসেন মোল্লা বাদী হয়ে আহম্মদ আলীসহ আটজনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত ১৫ জনের বিরুদ্ধে অপর মামলাটি করেছেন।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত মো. আবদুল্লাহ বলেন, ‘বেরুলি বাজারে আমাদের ওপর প্রথম দফা হামলার পর আমরা দ্রুত আমাদের প্রার্থীর বাড়িতে চলে আসি। পাশেই নবাবপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বাচ্চুর বাড়িতে প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান প্রার্থী এহসানুল হাকিমের উঠানবৈঠক চলছিল। আমাদের দেখেই এহসানুল হাকিমের কর্মীরা আমাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। জীবন নামের ছাত্রলীগের এক কর্মী আমার মাথায় আঘাত করেন। আমি মাটিতে পড়ে যাই। আমার মাথায় চারটি সেলাই লেগেছে।’
চেয়ারম্যান প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘১০০-১৫০টি মোটরসাইকেল নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান প্রার্থী শোডাউন দিচ্ছেন। কিন্তু প্রশাসন থেকে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। দুই দফায় আমাদের কর্মীদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। আমার বাড়িতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। ছাত্রলীগ নামধারী কয়েকজনের নেতৃত্বে এই হামলা চালানো হয়েছে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে।’
অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অপর চেয়ারম্যান প্রার্থী এহসানুল হাকিম। তিনি বলেন, ‘আমরা একই দল করি। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর ছেলে সুমনের নেতৃত্বে আমার সমর্থক ইসলামপুর ইউপির চেয়ারম্যান আহমদ আলীর মাইক্রোবাসে হামলা চালানো হয়েছে। পাটকেল ছুড়ে তাঁর গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। পরে আমাদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। আমরা বিষয়টি থানাসহ সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছি।’
বালিয়াকান্দি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, থানায় পাল্টাপাল্টি মামলা করা হয়েছে। তদন্ত করে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে।