মিক্সচার মেশিন পরিষ্কারের সময় হঠাৎ চালু, ক্ষতবিক্ষত দুই শ্রমিক

চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভাইয়ের লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন নিহত শ্রমিক কামরান ইসলামের বোনছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজারের চকরিয়ায় ইট ব্লক (হলো ব্লক) তৈরির মিক্সচার মেশিন পরিষ্কার করার সময় হঠাৎ চালু হয়ে দুই শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় মেশিনের পাখায় জড়িয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশ ক্ষতবিক্ষত হয় ওই দুই শ্রমিকের।

আজ বুধবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে চকরিয়া পৌরসভার তরছপাড়া এলাকায় মাস্টারমাইন্ড ব্লক ফ্যাক্টরিতে এ ঘটনা ঘটে। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে লাশ চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে বিষয়টি জানাজানি হয়।

নিহত শ্রমিকেরা হলেন চকরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের দক্ষিণ ঘুনিয়া এলাকার মো. শাহজাহানের ছেলে মো. শাহিন (১৮) এবং চকরিয়া পৌরসভার করাইয়াঘোনা এলাকার রুহুল কাদেরের ছেলে কামরান ইসলাম (২০)।

কারখানাটির কয়েকজন শ্রমিক বলেন, আজ সন্ধ্যা ছয়টার দিকে মিক্সচার মেশিনটি বন্ধ করে শাহিন ও কামরান পরিষ্কার করছিলেন। এ সময় হঠাৎ করে মেশিনটি অটো চালু হয়ে যায়। এতে মেশিনের ভেতরে থাকা শাহিন ও কামরান পাখার সঙ্গে জড়িয়ে ক্ষতবিক্ষত হন। পরে অন্য শ্রমিকেরা মেশিনটি বন্ধ করে ক্ষতবিক্ষত মরদেহ দুটি উদ্ধার করেন।

শ্রমিকেরা জানিয়েছেন, মেশিনে দুই শ্রমিকের মৃত্যুর বিষয়টি প্রথমে কারখানাটির মালিক গিয়াস উদ্দিন ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় শ্রমিকেরা সেটির প্রতিবাদ করেন এবং তাঁরা ওই দুই শ্রমিকের মরদেহ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। নিহত শ্রমিকদের চেহারা ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাওয়ায় তাঁদের শনাক্ত করতে সমস্যা হয় স্থানীয় লোকজনের। পরে নিহত দুই শ্রমিকের পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে পৌঁছে মরদেহ শনাক্ত করেন।

চকরিয়া উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, চকরিয়া পৌরসভায় দুটি ব্লক তৈরির কারখানা রয়েছে। দুটি কারখানাই অনুমোদনহীন। গত ২৪ অক্টোবর পশ্চিম বাটাখালী এলাকার ‘এলএইচবি অটো ব্লক সেন্টার’ নামের কারখানায় অভিযান চালিয়ে ব্লক উৎপাদন বন্ধ করে দেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. এরফান উদ্দিন।

স্থানীয় লোকজন বলেন, এলএইচবি অটো ব্লক সেন্টার বন্ধ করা হলেও অনুমোদনহীন অপর কারখানা তরছপাড়ার মাস্টারমাইন্ড ব্লক কারখানাটি চালু থাকে। সেই কারখানায় দুই শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

স্থানীয় লোকজন বলেন, ইট তৈরির মেশিনটি যখন চালু করা হয়, তখন মেশিনের বিকট শব্দের কারণে বাড়িতে কেউ ঘুমাতে পারে না। পাশের বাড়িগুলোতে অসুস্থ মানুষের ও বাচ্চাদের পড়াশোনার সমস্যা হচ্ছিল। এ কারণে লোকজন উপজেলা প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানালেও প্রশাসন ব্যবস্থা নেয়নি।

নিহত শ্রমিক কামরানের বড় ভাই জাহেদুল ইসলাম হাসপাতালে কান্না করতে করতে বলেন, ‘আমার ভাই অটো চালু হওয়া মেশিনে ক্ষতবিক্ষত হয়ে মারা গেছে নাকি অন্য কারণ আছে, তা খুঁজে বের করতে হবে প্রশাসনকে।’ এ সময় নিহত আরেক শ্রমিক শাহিনের মা হাসপাতালে এসে ছেলের মরদেহ দেখেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।

ঘটনার বিষয়ে মাস্টারমাইন্ড ব্লক কারখানার মালিক মো. গিয়াস উদ্দিনের বক্তব্য জানতে তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনজুর কাদের ভূঁইয়া বলেন, ঘটনাটি শুনেই হাসপাতালে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। মরদেহ উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।