বিএনপির অবস্থান কর্মসূচির পাশেই আওয়ামী লীগের অস্ত্রের মহড়া, জনমনে আতঙ্ক
ঢাকার উত্তরায় বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি কেন্দ্র করে দেশীয় অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে মহড়া দিয়েছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের কয়েক শ নেতা-কর্মী। আজ শনিবার দুপুর সোয়া ১২টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত উত্তরার বিএনএস সেন্টার এলাকায় চলে এমন মহড়া। এতে জনমনে দেখা দেয় ব্যাপক আতঙ্ক।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, আজ বেলা সাড়ে ১১টার পর উত্তরার বিএনএস সেন্টারের সামনে জড়ো হন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এ সময় পুলিশ শব্দবোমা ও কাঁদনে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। একপর্যায়ে দেশীয় অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে সড়কে নামেন কয়েক শ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে।
সরেজমিন দেখা যায়, বিএনপির নেতা-কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার পর আজ দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ও উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরের ২৮ নম্বর সড়কে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা অবস্থান নেন। এ সময় পুলিশ বিএনএস সেন্টারের সামনে অবস্থান নেয়। একপর্যায়ে ১২টা ২৩ মিনিটে দক্ষিণ দিক থেকে ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়ক ধরে আওয়ামী লীগের কয়েক শ নেতা-কর্মী বিএনএস সেন্টারের সামনে আসেন। তাঁদের অনেকের হাতে দা, ছোরা, চাপাতি, লম্বা ছুরি, রড, পাইপ ও লাঠিসোঁটা ছিল। তাঁরা অস্ত্র উঁচিয়ে মহাসড়ক ধরে হাঁটছিলেন, দৌড়াচ্ছিলেন।
একপর্যায়ে পুলিশের সামনেই দুই ভাগ হয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরের বিভিন্ন সড়কে অস্ত্র নিয়ে ছোটাছুটি করেন। দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের অস্ত্রের মুখে দৌড়ে পালান বিএনপির নেতা-কর্মীরা।
এসব বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের উত্তর ডিভিশনের ডিসি মোরশেদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, এখন পরিস্থিতি শান্ত। লোকজন নেই, যান চলাচল স্বাভাবিক। এক জায়গায় বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে হাতাহাতি হয়েছে। পরে পুলিশ মাঝখানে থেকে তাদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে। অস্ত্র নিয়ে মহড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা সত্য না। আমরা এমন কিছু দেখিনি।’
আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের অস্ত্র হাতে মহড়া দেখে আশপাশের দোকানি, সড়কের যানবাহন চালক ও যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় আধা ঘণ্টার জন্য ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বন্ধ হয়ে যায় যানবাহন চলাচল। এ সময় যাত্রীদের অনেকে যানবাহন ছেড়ে নিরাপদ জায়গায় চলে যান। আর বিএনপির নেতা-কর্মীদের কেউ কেউ আশ্রয় নেন আশপাশের বাসাবাড়িতে। বেলা একটার দিকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা রাস্তা ছেড়ে চলে যান। এরপর আবার বিএনএস সেন্টারের সামনে অবস্থান নেয় পুলিশ।
আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা চলে যাওয়ার সময় অনেকটা দলছুট হয়ে হাঁটছিলেন দা হাতে একজন। এ সময় সাংবাদিক পরিচয় কথা বলতে চাইলে ওই ব্যক্তি কোনো কথা না বলে হাঁটতে থাকেন। এর মধ্যে তাঁর মুঠোফোনে একটি কল আসে। তিনি কলটি ধরে অল্প সময়ের জন্য কারও সঙ্গে কথা বলেন। এরপর তিনি এই সংবাদদাতার কোনো কথার জবাব না দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যান। এমন পরিস্থিতির মধ্যে অস্ত্রধারী ওই ব্যক্তির নাম-ঠিকানা কিছু জানা যায়নি। তবে তাঁর বয়স ৩০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে হবে।