সেতুটি শুধু কালের সাক্ষী
সেতুটি তিনটি গ্রামের বাসিন্দাদের নৌপথে যাতায়াতে দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে সেতুটি ব্যবহার না হওয়ায় জরাজীর্ণ হয়ে গেছে।
খালের ওপর পিলারে দাঁড়িয়ে আছে ৫০ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি সেতু। কোন প্রতিষ্ঠান, কবে সেতুটি নির্মাণ করেছে, এ–সংক্রান্ত কোনো তথ্য সরকারি দপ্তর থেকে পাওয়া যায়নি। তবে এলাকার বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিরা জানান, সেতুটির বয়স অন্তত ২৫ বছর। এত দিন পেরিয়ে গেলেও সেতুটি এক দিনের জন্যও স্থানীয় মানুষের কাজে আসেনি। কারণ, সেতুর দুই পাশে সংযোগ সড়ক নেই। কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া এ সেতুর কোনো কাজ নেই।
জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার ঘোষেরপাড়া ইউনিয়নের বীর ঘোষেরপাড়া এলাকার গোলডোবা খালের ওপর এই সেতুর অবস্থান। সেতুটি তো কোনো উপকারে আসছেই না, বরং বর্ষাকালে তিনটি গ্রামের বাসিন্দাদের নৌপথে যাতায়াতে দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায় এটি।
সেতুরটির বয়স অন্তত ২৫ বছর। সংযোগ সড়ক না থাকায় এটি স্থানীয় মানুষের কাজে আসছে না।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, গোলডোবা খালের ওপর নির্মিত সেতুর দুই পাশে কোনো রাস্তা নেই। সেতুর একটি পিলারের কাছে সামান্য পানি। শুকনা মৌসুম হওয়ায় খালে পানি না থাকার কারণে লোকজন সেতুর পশ্চিম পাশের সরু একটি মাটির রাস্তা দিয়ে চলাচল করছে। সেতুর চার পাশে ফসলের মাঠ। দীর্ঘদিন ধরে সেতুটি ব্যবহার না হওয়ায় জরাজীর্ণ হয়ে গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বর্ষায় বদলে যায় চিত্র। পুরো খালে স্রোত বয়ে যায়। সরু মাটির রাস্তাটিও তলিয়ে থাকে। তখন যাতায়াতে দুর্ভোগের শেষ থাকে না বীর ঘোষেরপাড়া, হরিপুর ও চান্দ্রের হাওরা গ্রামের বাসিন্দাদের। সেতু থাকলেও রাস্তার অভাবে সেটি কাজে লাগাতে পারেন না তাঁরা।
কোন প্রতিষ্ঠান, কবে সেতুটি নির্মাণ করেছে, এ–সংক্রান্ত তথ্য জানতে উপজেলা পরিষদ, এলজিইডি ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু ওই সব দপ্তর থেকে এ বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় ২৫ বছর আগে ওই খালের ওপর ৫০ ফুট দৈর্ঘ্যের সেতুটি নির্মাণ করা হয়। সেতু নির্মাণের পর কোনো সংযোগ সড়ক হয়নি। এভাবেই কেটে গেছে সিকি যুগ। যেটুকু মাটি সেতুর দুই পাশে ছিল, বন্যায় সেই মাটিও ভেসে গেছে।
ঘোষেরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি যেটুকু জানি, নির্মাণের পর কিছুদিন সেতুটি ব্যবহার করা হয়েছিল। পরে বন্যায় সেতুর দুই পাশের মাটি বিলীন হয়ে গেছে। এর পর থেকে সেই অবস্থায় এটি পড়ে আছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা, ওই এলাকায় সরকারি কোনো সড়ক নেই। স্থানীয় লোকজনের জমি থাকায় সেখানে রাস্তাও নির্মাণ করা যায়নি। তবে শুনেছি, ওই সেতু থেকে একটু সামনেই এলজিইডি একটি বড় সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করছে।’
ওই সেতুর বিষয়ে মেলান্দহ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো.কামরুজ্জামানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তিনি এই বিষয়ে মুঠোফোনে কথা বলতে রাজি হননি।
বীর ঘোষেরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা রুবেল মাহমুদ বলেন, তিনি ছোট থেকে দেখে আসছেন, সেতুটি এই অবস্থায় পড়ে আছে। অপরিকল্পিতভাবে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছিল। বন্যাকবলিত গ্রাম এটি। প্রতিবছর বন্যার পানিতে রাস্তাঘাট তলিয়ে থাকে। স্রোতের কারণে মাটির রাস্তাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ওই সময় যোগাযোগব্যবস্থা একদম ভেঙে পড়ে। ওই সেতু ঠিক থাকলে লোকজন বর্ষা মৌসুমে ব্যবহার করতে পারত। বহু বছর থেকে একাই দাঁড়িয়ে আছে সেতুটি। কিন্তু ২৫ বছর কেটে গেলেও কাউকে কখনো সেতুটি ব্যবহারের উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি।
ঘোষেরপাড়া এলাকার বয়োজ্যেষ্ঠ কৃষক আলম মিয়া বলেন, ‘অনেক আগে থেকেই দেখি, এই অবস্থায় সেতুটি। মাটি থেকে সেতুটি অনেক উঁচু। তাই কখনোই সেতুটিতে কেউ উঠতেও পারে না। এককথায় গ্রামের কারও উপকারে আসেনি সেতুটি। নির্মাণের পর থেকে এভাবেই পড়ে আছে।’
জামালপুর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মো.সায়েদুজ্জামান সাদেক বলেন, খোঁজখবর নিয়ে যেটুকু জানা গেছে, সেতুটি হয়তো উপজেলা পরিষদের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় নির্মাণ করা হয়েছিল। এর বেশি কিছু জানা নেই।