গাইবান্ধার ২টি আসনে ছাড় পেয়েও লাঙ্গলের ভরাডুবি

শামীম হায়দার পাটোয়ারী ও আবদুর রশিদ

গাইবান্ধায় মোট পাঁচটি সংসদীয় আসন। এর মধ্যে গাইবান্ধা-১ ও গাইবান্ধা-২ আসন জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। ছাড় পেয়েও আসন দুটিতে জাতীয় পার্টির ভরাডুবি হয়েছে। দলটির দুই প্রভাবশালী প্রার্থী হেরে গেছেন আওয়ামী লীগের শক্তিশালী দুই প্রার্থীর কাছে।

ভরাডুবির কারণ হিসেবে জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা মনে করেন, জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ মতবিরোধ, দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ না করা ও আওয়ামী লীগের সহায়তা না পাওয়ায় এই পরাজয়।

গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনে নৌকা পেয়েছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফরোজা বারী। তাঁকে প্রত্যাহার করে জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেওয়া হয়। এখানে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বর্তমান সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে ২২ হাজার ৫৬০ ভোটের ব্যবধানে হেরে যান।

জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা মনে করেন, শামীম হায়দার দলের নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন করেননি। বিএনপি-জামায়াতের লোকজনের সঙ্গে তাঁর সখ্য ছিল বেশি। এ ছাড়া বেশির ভাগ সময় তিনি ঢাকায় থাকতেন। ফলে দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব তৈরি হয়। এসব কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে দলের অনেক নেতা-কর্মী স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাতীয় পার্টির এক নেতা বলেন, জাতীয় সংসদে শামীম হায়দার ভালো ভালো কথা বললেও এলাকায় দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন করেননি। তাই সাধারণ ভোটাররা তাঁর প্রতি নাখোশ ছিলেন। ফলে তাঁর পরাজয় ঘটে।

জাতীয় পার্টির আরেক নেতা বলেন, এখানে আফরোজা বারী প্রার্থী না থাকলেও তাঁর বড় মেয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সাবেক সদস্য আবদুল্লাহ নাহিদ নিগারকে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করান। আওয়ামী লীগ ছাড়াও জাতীয় পার্টির বেশির ভাগ নেতা-কর্মী তাঁর পক্ষে কাজ করেন। নিগার তাঁর মামা সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত মনজুরুল ইসলাম ও মায়ের পরিচিতিকে কাজে লাগিয়ে গণসংযোগ করে জয়ী হন।

এ বিষয়ে পরাজিত প্রার্থী শামীম হায়দারের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

এদিকে গাইবান্ধা-২ (সদর) আসনে জাতীয় সংসদের হুইপ মাহাবুব আরা বেগমকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয়। পরে তাঁকে প্রত্যাহার করে জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেওয়া হয়। এখানে জাতীয় পার্টি ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে নির্বাচিত সংসদ সদস্য আবদুর রশিদ সরকারকে দলীয় মনোনয়ন দেয়। ২০১৮ সালে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যাওয়া আবদুর রশিদ এবার জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তিনি ৩ হাজার ১৫৩ ভোটের ব্যবধানে হেরে যান।

আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেওয়া হলেও এখানে জয়লাভ করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, সদ্য পদত্যাগ করা উপজেলা চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশের গণপরিষদের প্রথম স্পিকার শাহ আবদুল হামিদের নাতি শাহ সারোয়ার কবীর।

এসব বিষয়ে পরাজিত প্রার্থী আবদুর রশিদের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে জেলা জাতীয় পার্টির সহসভাপতি শাহজাহান খান বলেন, দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ভুলক্রটি ছিল। তাঁরা দলীয় প্রার্থীর পক্ষে আন্তরিক হয়ে কাজ করেননি, ফলে এ পরাজয় ঘটে।

স্বতন্ত্র প্রার্থীর জয়ের বিষয়ে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মতিয়ার রহমান বলেন, হুইপ মাহাবুব আরা বেগমের প্রতি দলের অনেক নেতা-কর্মী ক্ষুব্ধ ছিলেন। হুইপ জাতীয় পার্টির প্রার্থীর পক্ষে প্রকাশ্যে প্রচারণা চালান। এতে হুইপের প্রতি যাঁরা ক্ষুব্ধ ও অসন্তুষ্ট ছিলেন, তাঁরাই শাহ সারোয়ার কবীরের পক্ষে কাজ করেন। লাঙ্গলকে হুইপ সমর্থন দেওয়ার কারণেই জাতীয় পার্টির প্রার্থীর পরাজয় ঘটে। ফলে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়লাভ করেন।

নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য শাহ সারোয়ার কবীর বলেন, ‘গত ১৫ বছরে উপজেলার দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন হয়নি। আমি উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনকালে এলাকার অনেক উন্নয়ন করেছি। এ কারণে ভোটাররা আমাকে আস্থায় নিয়েছেন। আমার পক্ষে গণজোয়ার তৈরি হয়েছিল, ফলে আমি জয়ী হয়েছি।’