শুকিয়েও পাঠযোগ্য করা যাচ্ছে না বান্দরবান গণগ্রন্থাগারের ২৮ হাজার বই
বান্দরবান সরকারি গণগ্রন্থাগারে গত আগস্ট মাসের বন্যায় কাদাপানিতে ডুবে ক্ষতিগ্রস্ত অন্তত ২৮ হাজার বই এবং ৩৫ বছরের সংরক্ষিত পত্রিকা আবার পাঠ উপযোগী করা সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থায় এসব বইয়ের বেশির ভাগই যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পরিত্যক্ত ঘোষণা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই বলে মনে করছেন গণগ্রন্থাগারের কর্মকর্তারা।
সম্প্রতি জেলা শহরের নোয়াপাড়া এলাকায় গ্রন্থাগারটিতে গিয়ে দেখা যায়, একতলা ভবনের বারান্দা, পাঠকক্ষসহ সবখানেই ভেজা ও কাদাযুক্ত বই এবং পত্রিকার স্তূপ। ভবনের বাইরেও শুকানোর জন্য রাখা হয়েছে বেশ কিছু বই। এসব বইয়ের পাতা উল্টানোর মতো অবস্থাও নেই। প্রতিটি পাতা একটির সঙ্গে অন্যটি লেগে আছে। কিছু আধা শুকানো বই আলমারিতে রাখার উদ্দেশ্যে পাঠকক্ষের ভেতরে টেবিলে রাখা হয়েছে। পুরোপুরি না শুকানোর কারণে বইগুলো তুললেই টেবিলে কাদার প্রলেপ পড়ে যাচ্ছে।
একটি কক্ষের টেবিলে রাখা বেশ কিছু বইয়ের পরিচর্যা করছিলেন গণগ্রন্থাগারটির কর্মচারী মে প্রু মারমা।
তিনি বলেন, বইগুলো কিছুতেই পুরোপুরি শুকানো সম্ভব হচ্ছে না। বাইরে রোদে শুকানোর পর ভেতরে নিয়ে এলে দেখা যায় এসব বই থেকে আবারও কাদা ঝরে পড়ছে। বইয়ের পাতা শুষ্ক রাখার জন্য রাতেও ফ্যান ছেড়ে রাখতে হচ্ছে।
গ্রন্থাগারের কম্পিউটার অপারেটর পুনম চৌধুরী বলেন, ডুবে যাওয়া বই ও সংরক্ষিত পত্রিকা পুনরায় পাঠযোগ্য করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে মনে হয় না এসব আর পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে।
গ্রন্থাগার ভবনের খসে পড়া পলেস্তারা দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘বন্যার পানি দেয়ালের যতটুকু উঠেছে, ততটুকুতে ইট ছাড়া সিমেন্ট ও বালু খসে পড়ছে। কাদাযুক্ত পাহাড়ি ঢলের পানিতে যেখানে দেয়াল টিকছে না, সেখানে বই টিকবে কী করে?’
বন্যায় গ্রন্থাগারের কম্পিউটার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় নতুন দুটি কম্পিউটার বরাদ্দ করা হয়েছে জানিয়ে পুনম চৌধুরী বলেন, ভবনের যে পরিবেশ, তাতে কম্পিউটার ব্যবহার করতেও কষ্ট হচ্ছে।
গ্রন্থাগারের কর্মকর্তারা জানান, ১৯৮২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় সরকারি গণগ্রন্থাগারটি। এতে ৩৪ হাজার বই তালিকাভুক্ত থাকলেও ২০১৯ সালে বন্যায় বেশ কিছু বই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে বেশ কিছু বই নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত আগস্টের দিকে গ্রন্থাগারে বই ছিল ২৮ হাজারের মতো। গ্রন্থাগারে এ ছাড়া ৩৫ বছরের সংবাদপত্র সংরক্ষণে ছিল।
গত আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে বান্দরবানে ভয়াবহ বন্যায় জেলা শহরের ৬০ শতাংশ এলাকা পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে যায়। এ সময় বান্দরবান সরকারি গণগ্রন্থাগারটিও ৭ ও ৮ আগস্ট টানা দুই দিন আট ফুট কাদাপানিতে ডুবে ছিল। কাদাপানিতে গ্রন্থাগারের বই, সংরক্ষিত সংবাদপত্র, কম্পিউটার ও দাপ্তরিক কাগজপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পানি নামার পর দুই মাসের বেশি সময় ধরে কাদাপানিতে ক্ষতিগ্রস্ত বই পাঠযোগ্য করার চেষ্টা করছেন গ্রন্থাগারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
বান্দরবান সরকারি গণগ্রন্থাগারের ভারপ্রাপ্ত গ্রন্থাগারিক মাসুথুই চাক বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত বই কয়েক দফা শুকানোর পর তালিকা করা হচ্ছে। এর মধ্যে একেবারে ব্যবহার অনুপযোগী বইগুলো চিহ্নিত করে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণের মাধ্যমে সরিয়ে ফেলতে হবে। নতুন করে বই রাখা ও সংবাদপত্র সংরক্ষণের জন্য বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত গ্রন্থাগারের সংস্কার করা জরুরি। নতুন করে গ্রন্থাগারে ১ হাজার ২০০ বই এলেও তা খোলা সম্ভব হচ্ছে না।