বাগেরহাট পৌরসভা
অধিকাংশ সড়কই বেহাল
পৌর এলাকায় সড়ক আছে ৭৮ দশমিক ৩০ কিলোমিটার। আর ড্রেনেজ ব্যবস্থা রয়েছে ৫৫ কিলোমিটারে। মোট সড়কের প্রায় ৭০ ভাগই ঝুঁকিপূর্ণ।
সড়কজুড়ে বড় বড় গর্ত। বৃষ্টি হলেই এসব গর্তে পানি জমে থাকে। গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে সড়কগুলো কাদাপানিতে একাকার। একটি-দুটি নয়, বাগেরহাটের পৌরসভার অধিকাংশ সড়কে এভাবে খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। এতে এসব সড়ক যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এরপর বিকল্প না থাকায় ভাঙাচোরা সড়ক দিয়ে চলাচল করতে প্রতিদিন ভোগান্তি পোহাচ্ছেন মানুষেরা।
বাগেরহাট পৌরসভার সড়কগুলোর অবস্থা যে কত খারাপ, তা রিকশাচালক মো. রফিকুল ইসলামের বক্তব্যেই ফুটে ওঠে। তিনি বলেন, ‘রাস্তার কথা কী আর কব, একে কি রাস্তা বলেন? নদীর পাড়ের শহর রক্ষা বাঁধটা একটু ভালো আছে। তা-ও বটতলা দিয়ে গর্ত গর্ত হয়ে গেইছে। এ বাদে শহরের একটা রাস্তাও গাড়ি চালানোর মতো নেই। এর চেয়ে গ্রামের রাস্তা অনেক ভালো। এ হোচ্চে জঘন্য রাস্তার শহর।’
পৌরসভার খারাপ সড়কগুলো মেরামত করার জন্য গত মাসে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। টানা বৃষ্টির কারণে সংস্কারকাজ শুরু করা যাচ্ছে না।খান হাবিবুর রহমান, মেয়র, বাগেরহাট পৌরসভা
রাস্তা নিয়ে এই রিকশাচালকের মতো ক্ষোভ বাগেরহাট শহরের অধিকাংশ বাসিন্দার। ১৫ দশমিক ৮৯ বর্গকিলোমিটার আয়তনের পৌরসভাটির অধিকাংশ রাস্তাঘাট ভাঙাচোরা এক দশকের বেশি সময় ধরে। জোড়াতালি দিয়ে চললেও চলতি বর্ষায় অবস্থা এতটাই খারাপ হয়েছে যে অনেক সড়কে রিকশা চলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে। তার ওপর একটু বৃষ্টিতেই সড়কগুলোতে পানি জমে মানুষের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।
সরেজমিনে শহরের দশানী, নূর মসজিদ মোড়, পুরাতন বাজার, মুনিগঞ্জ, মালোপাড়া, সাধনার মোড়, খারদ্বার এলাকার কয়েকটি সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তাগুলোতে সৃষ্টি হওয়া বড় বড় গর্তে বৃষ্টির জমে আছে পানি। কোথাও প্যাচপেচে কাদা। আবার কোথাও পিচের রাস্তার ওপর দেওয়া হয়েছে ইটের সলিং। সেখানে হেলেদুলে চলছে ইজিবাইক, রিকশাসহ অন্যান্য যানবাহন। কাদাপানিতে অনেক রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলাও দুষ্কর। আবার অনেক রাস্তায় পানিতে না ভিজে গন্তব্যে যাওয়ার সুযোগ নেই।
শহরের খারদ্বার এলাকার ফারজানা রিমি বলেন, একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তা পানি জমে যায়। কয়েক দিন বৃষ্টি হলে তো হাঁটুপানি জমে রাস্তায়। পানি জমে থাকায় এখন রাস্তার পিচ–খোয়াও উঠে যাচ্ছে।
শহরের পুরাতন বাজার এলাকার আরিফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নদীতে জোয়ার হলেই রাস্তা ডুবে, বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই। রাস্তার পিচ-খোয়া উঠে একটা কাদামাটিতে একাকার অবস্থা। এই সড়কের নাম হলো বাজার মেইন রোড। মেইন রোডের অবস্থাই এমন, তাহলে অন্য রাস্তার অবস্থা বোঝেন।’
রাস্তার কথা বলতে গিয়ে মহিদুল গাজী বলেন, ‘কয়েক দিন আগে মোংলা গিয়েছিলাম, ওই পৌরসভার রাস্তাও কত ভালো। আর আমাগো বাগেরহাট পৌরসভার রাস্তার কতা কী কব। আমি চালাই ভ্যান, রাস্তা এত ভালো যে হ্যান্ডেল ধরি একদিক আর গাড়ি টাইনে লইয়ে যায় আরেক দিক। কারে কব কন, দেহার কি কেউ নেই?’
বাগেরহাট পৌরসভা সূত্র জানায়, ১৯৫৮ সালে বাগেরহাট পৌরসভা যাত্রা শুরু করে। ১৯৯১ সালে প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় উন্নীত হয়। ১৫ দশমিক ৮৮৮ বর্গকিলোমিটারের এই পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের ১৭টি মহল্লায় প্রায় দেড় লাখ লাখ মানুষের বসবাস। পৌর এলাকায় সড়ক আছে ৭৮ দশমিক ৩০ কিলোমিটার। আর পয়োনিষ্কাশনের জন্য ড্রেনেজ ব্যবস্থা রয়েছে ৫৫ কিলোমিটার। মোট সড়কের প্রায় ৭০ ভাগই ঝুঁকিপূর্ণ।
পৌরসভার হিসাব ও প্রকৌশলী বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে সড়কসহ পৌর এলাকার অবকাঠামো উন্নয়নে তিনটি প্রকল্প চলমান আছে। এর মধ্যে কোস্টাল টাউন্স ক্লাইমেট রেসিলিয়েন্স প্রজেক্টে (সিটিসিআরপি) ১২৪ কেটি টাকা, গুরুত্বপূর্ণ নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে (আইইউআইডিপি) ২০ কোটি এবং কোভিড-১৯ প্রকল্পের আওতায় ৫ দশমিক ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কসহ পৌর এলাকার অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ চলছে।
বাগেরহাট পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) টি এম রেজাউল হক রিজভী বলেন, তিনটি প্রকল্পের আওতায় ১৫৩ দশমিক ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে পৌরসভার সড়কসহ উন্নয়নকাজ চলমান আছে। ৫ বছরের মধ্যে এই কাজ শেষ হবে। বর্তমানে ৭০ ভাগ রাস্তারই সংস্কার প্রয়োজন। তিনটি প্রকল্পের অধীনে সড়ক সংস্কারের কাজ চলমান আছে।
ভাঙাচোরা সড়কগুলো সংস্কার করার বিষয়ে জানতে চাইলে বাগেরহাট পৌরসভার মেয়র খান হাবিবুর রহমান বলেন, পৌরসভার খারাপ সড়কগুলো মেরামত করার জন্য গত মাসে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। টানা বৃষ্টির কারণে সংস্কারকাজ শুরু করা যাচ্ছে না। শিগগিরই সড়কগুলোর মেরামতকাজ শুরু করা হবে।
জরুরি ভিত্তিতে শহরের সড়কগুলো সংস্কার করার দাবি জানিয়েছেন এক কলেজশিক্ষক। তিনি বলেন, ‘বহু শহরে থাকছি-ঘুরছি। কিন্তু শহরের রাস্তা এত খারাপ দেখিনি। ১০ বছরের বেশি সময় ধরে পিসি কলেজ, মহিলা কলেজের রাস্তা ভাঙা। মহিলা কলেজ রোড দিয়ে বাসা পাল্টাইছি শুধু এই ভাঙাচোরা রাস্তার কারণে। কারণ, ওই দিকে কোনো রিকশাও যাইতে চায় না। অধিকাংশ রাস্তা এতটাই খারাপ যে ইজিবাইকে এক জায়গা দিয়ে অন্য জায়গায় যেতে ঝাঁকুনিতে কোমর ব্যথা হয়ে যায়।’