বাড়ি থেকে বের হলেন হাসিমুখে, দুপুরে মিলল লাশ
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় লিটন চন্দ্র বর্মণ (৩৫) নামের মুঠোফোনের এক দোকানির রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। আজ বুধবার বেলা তিনটার দিকে উপজেলার গজরা বাজারে অবস্থিত ওই দোকানির মুঠোফোনের দোকান থেকে পুলিশ ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে। লিটন স্থানীয় কিছু লোকের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা পেতেন। তাঁরও অনেক টাকার ঋণ ছিল।
লিটন চন্দ্র বর্মণের বাড়ি উপজেলার গজরা ইউনিয়নের গজরা গ্রামে। তিনি গজরা বাজারে একটি দোকান দিয়ে সেখানে মুঠোফোন বিক্রি করতেন। তাঁর ৯ মাসের একটি বাচ্চা রয়েছে। দুই বছর আগে পরপর তাঁর দুটি শিশুসন্তান মারা যায়।
পুলিশ, পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সকাল নয়টায় বাড়ি থেকে রওনা দিয়ে নিজের দোকানে আসেন ওই দোকানি। বেলা একটার পর থেকে তাঁর ভাই সুমন চন্দ্র বর্মণ ও পরিবারের অন্য সদস্যরা মুঠোফোনে কল করে তাঁকে পাচ্ছিলেন না। মুঠোফোনটির সংযোগ বন্ধ পান। বেলা দুইটায় পরিবারের সদস্যরা তাঁর দোকানে গিয়ে দেখতে পান, দোকানের দরজা খোলা এবং ভেতরে বাঁশের আড়ার সঙ্গে তাঁর নিথর দেহ ঝুলছে। তাঁরা বিষয়টি পুলিশকে জানান। পরে বেলা তিনটায় ওই দোকান থেকে পুলিশ তাঁর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে।
লিটন চন্দ্র বর্মণের ছোট ভাই সুমন চন্দ্র বর্মণ বলেন, তাঁর ভাইয়ের সঙ্গে এলাকার অনেক লোকের পাওনা-দেনা ছিল। তাঁর ভাই বিভিন্ন লোকের কাছে ২০–২২ লাখ টাকা পেতেন। এসব টাকা তিনি ধার হিসেবে দিয়েছিলেন। বারবার ওই টাকা চেয়েও পাননি। উল্টো তাঁকে নানাভাবে হুমকি দিতেন দেনাদারেরা। তাঁর ভাইও কিছু টাকা ঋণ করেছেন। বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে এবং একটি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) থেকে ওই টাকা ঋণ করেছেন। ব্যবসায় মন্দাভাব থাকায় ওই ঋণের কিস্তি শোধ দিতে পারছিলেন না। যাঁদের কাছ থেকে টাকা পেতেন, তাঁরাও তাঁকে পাত্তা দেননি।
সুমন চন্দ্র বর্মণ আরও বলেন, সকালে তাঁর ভাই বাড়ি থেকে হাসিমুখে বের হয়ে দোকানে এলেন। আর এখন পাওয়া গেল তাঁর লাশ। ঠিক কী কারণে, এ ঘটনা ঘটল, তা বুঝতে পারছেন না। তাঁর ভাই আত্মহত্যা করার মতো লোক নন। দুটি বাচ্চা মারা যাওয়ার পর এখন ৯ মাসের যে বাচ্চা রয়েছে, তার প্রতি তাঁর অনেক টান। তাঁর ভাইয়ের মৃত্যুটি রহস্যজনক মনে হচ্ছে। যেহেতু অনেকের সঙ্গে তাঁর টাকার লেনদেন রয়েছে, সেহেতু কেউ তাঁকে হত্যা করতে পারে। হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে আত্মহত্যার নাটক সাজাতে পারে। বিষয়টি পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসবে।
এ বিষয়ে মতলব উত্তর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সানোয়ার হোসেন বলেন, ময়নাতদন্তের জন্য লিটন চন্দ্রের লাশ চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। এটি হত্যা না আত্মহত্যা, প্রতিবেদন পাওয়ার পর তা নিশ্চিত হওয়া যাবে। এ ঘটনায় থানায় আপাতত একটি অপমৃত্যু মামলা প্রক্রিয়াধীন।