ভোরের আলো ফোটার আগেই ওএমএসের চাল–আটা কিনতে মানুষের দীর্ঘ লাইন

খোলাবাজারে (ওএমএস) চাল-আটা কিনতে লাইনে দাঁড়িয়েছেন দরিদ্র মানুষ। আজ রোববার সকালে ঝালকাঠি জেলা শহরের বসুন্ধরা এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

ঝালকাঠি পৌর শহরের বসুন্ধরা এলাকায় ওএমএসের চাল কিনতে রিকশাচালক নুর উদ্দিন (৫০) ফজরের আজানের পরপরই লাইনে দাঁড়িয়েছেন। কয়েক দিন এসেও চাল কিনতে পারেননি। তাই আজ রোববার ভোরে এসেই লাইনের শুরুর দিকে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি।

আজ সকালে আড়দ্দার পট্টি ডিলার পয়েন্টে লাইনে দাঁড়ানো বিকনা গ্রামের গোলাপী বেগম বলেন, ‘কেলি বেইন্ন্যা হলে (খুউব সকালে) বাড়ি দিয়া আইয়া লাইনে খারাইছে (দাঁড়িয়েছি)। হেইয়ার পরেও সামনে জায়গা পাই নাই। চাউলও কফালে আছে কি না, জানি ন।’

ঝালকাঠিতে প্রতিদিন খাদ্য অধিদপ্তরের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় খোলাবাজারে বিক্রি (ওএমএস) হওয়া চাল-আটা কিনতে ভোরের আলো ফোটার আগেই লাইনে ভিড় লেগে যাচ্ছে। শহরের কলাবাগান এলাকার সোবাহান মৃধা (৭৫) ফজরের নামাজ পড়েই চাল কেনার লাইনে এসে দাঁড়ান। সুলভ মূল্যে চাল-আটা কিনতে সোবাহানের মতো বসুন্ধরাসহ বিভিন্ন বিক্রয়কেন্দ্রে স্বল্প আয়ের মানুষ লাইনে দাঁড়িয়েছেন। কেউবা আবার সঙ্গে আনা বাজারের ব্যাগ বিছিয়ে বসে পড়েছেন।

শহরের বসুন্ধরা এলাকায় ডিলার পয়েন্টে আসা সাহেরা খাতুন (৪৫) বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও সংসারের আয় কমে যাওয়ায় কষ্টকর পরিস্থিতি সহ্য করেও লাইনে দাঁড়াই। কোনো দিন পাই, আবার কোনো দিন খালি হাতে ফিরি।’

চাহিদার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি মানুষের ভিড় ও বরাদ্দ-স্বল্পতার কারণে অনেকেই চাল-আটা না পেয়ে বিক্রয়কেন্দ্র থেকে ফিরে যাচ্ছেন। মানুষের ভিড়ের কারণে পরপর কয়েক দিন লাইনে দাঁড়িয়েও পণ্য পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ অনেক ক্রেতার। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে অনেককেই ফিরতে হচ্ছে খালি হাতে। পরিবেশকদের বিক্রয়কেন্দ্রগুলোতে হুড়োহুড়ি আর অসন্তোষ প্রতিদিনের চিত্র। বরাদ্দ ও পরিবেশকের সংখ্যা বাড়ালে দুর্দশা কমবে দরিদ্র মানুষের।

সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ৫ কেজি করে চাল বা আটা সকাল ৯টা থেকে দেওয়া শুরু হলেও ভোরের আলো ফোটার আগেই লাইনে দাঁড়ানোর প্রতিযোগিতা লেগে যায়। ৩০ টাকা কেজি দরে চাল ও ১৮ টাকা কেজি দরে আটা কিনতে বিক্রয়কেন্দ্রগুলোতে রীতিমতো হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। দিনে একেক জন সর্বোচ্চ ৫ কেজি চাল বা আটার কেনার সুযোগ পান।

খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলা সদরে ৫টি, নলছিটি পৌরসভায় ৩টি এবং জেলার অন্য ২ উপজেলায় ২টি করে মোট ১২ জন পরিবেশক (ডিলার) প্রতিদিন ১২ টন চাল বরাদ্দ পান। তবে আটার বরাদ্দ কেবল জেলা সদরের জন্য প্রতিদিন ৫ টন করে। মাসে ২২ দিন করে জেলায় মোট ৫২ হাজার ৮০০ জন চাল ও ২২ হাজার মানুষ খোলা বাজারে আটা কেনার এ সুযোগ পাচ্ছেন।

ঝালকাঠি জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. নাজমুল হোসাইন বলেন, জেলার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর চাহিদা বিবেচনায় বরাদ্দ ও বিক্রয়কেন্দ্র বাড়ানোর জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হবে। তবে যেকোনো অনিয়ম ঠেকাতে খাদ্য বিভাগ প্রতিদিন ডিলার পয়েন্টে নজর রাখে।

সুলভ মূল্যে চাল-আটা কিনতে বিক্রয় কেন্দ্রে মানুষের দীর্ঘ সারি। রোববার সকালে ঝালকাঠি জেলা শহরের বসুন্ধরা এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

আজ রোববার সকালে সরেজমিনে বসুন্ধরা ও আড়দ্দার পট্টি এলাকায় দেখা যায়, দূরদূরান্ত থেকে নিম্ন আয়ের মানুষ লাইনে দাঁড়িয়েছেন। লজ্জায় কেউ কেউ নাক-মুখ কাপড় দিয়ে ঢেকে রেখেছেন। লাইনে দাঁড়ানো একজন বললেন, সবকিছুর দাম বেড়েছে, আয় বাড়েনি। ফলে বাধ্য হয়ে এখানে এসেছেন।

ডিলার নান্না মিয়া বলেন, এত অল্প বরাদ্দে অসংখ্য নিম্ন আয়ের মানুষের চাহিদা মেটানো সম্ভব হয় না। ফলে প্রতিদিনই খালি হাতে ফিরে যেতে হয় অনেককে। চাহিদা মেটাতে সরকারকে বরাদ্দ বাড়াতে হবে।