পঞ্চগড়ে হিমাগার নেই, কমে যাচ্ছে টমেটোর আবাদ
হিমাগার না থাকা, ন্যায্যমূল্য না পাওয়াসহ কয়েকটি কারণে পঞ্চগড়ে টমেটোর আবাদ কমে গেছে। কৃষকেরা হিমাগার স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন।
কয়েক বছর আগেও দেশের সর্ব–উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে বিপুল পরিমাণ জমিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ হতো। এ জেলার মাটি এবং আবহাওয়া গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষের উপযোগী হওয়ায় কৃষকেরা এই সবজি চাষে ঝুঁকে পড়েছিলেন। কিন্তু এখন এ জেলায় টমেটোর আবাদ কমে গেছে। সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার টমেটো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করতে না পারাসহ বিভিন্ন কারণে জেলায় টমেটো চাষ কমে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা টমেটো সংরক্ষণ করার জন্য হিমাগার স্থাপন করার দাবি জানিয়েছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত ৬ বছরে (২০১৭ থেকে ২০২২) ২ হাজার ৪০৭ হেক্টর জমিতে টমেটোর আবাদ কমেছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩ হাজার ১১৪ হেক্টর জমিতে টমেটো আবাদ হয়েছিল। ওই বছর টমেটোর ফলন হয়েছিল ৯৭ হাজার ১৯৪ মেট্রিক টন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৯৩০ হেক্টর জমিতে ৪০ হাজার ৯৬৩ মেট্রিক টন টমেটো হয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭৭২ হেক্টর জমিত চাষ করে ৩১ হাজার ৮৭৪ মেট্রিক টন টমেটো পাওয়া যায়। সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে মাত্র ৭০৭ হেক্টর জমিতে ২৯ হাজার ২৭৮ মেট্রিক টন টমেটো উৎপাদিত হয়।
৬ বছরে পঞ্চগড়ে ২ হাজার ৪০৭ হেক্টর জমিতে টমেটোর আবাদ কমেছে। এ জেলার মাটি ও আবহাওয়া টমেটো চাষের উপযোগী হওয়ায় কৃষকেরা এই সবজি চাষে ঝুঁকে পড়েছিলেন।
টমেটোচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি টমেটো চাষ হয় সদর উপজেলায়। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে গ্রীষ্মকালীন টমেটোর বীজ বপন করা হয়। জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে শুরু করে প্রায় এক মাস চলে টমেটোর চারা রোপণ। মার্চ মাসের শুরুর দিকে অল্প কিছু ফল আসতে শুরু করে। টমেটো উৎপাদনের ভরা মৌসুম এপ্রিল ও মে মাস। তবে কিছু উঁচু জমিতে জুন মাসেও টমেটো সংগ্রহ চলে। প্রতি বিঘা টমেটোর খেত থেকে ২০০–২৫০ মণ টমেটো সংগ্রহ করা যায়।
পঞ্চগড়ে কয়েকটা কারণে দিন দিন টমেটো চাষ কমে যাচ্ছে। তবে চলতি মৌসুমে পঞ্চগড়ের কৃষকেরা ভালো দামে টমেটো বিক্রি করেছেন।
ব্যবসায়ীরা বলেন, প্রতি মৌসুমে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে টমেটো ব্যবসায়ীরা এসে জেলা সদরের বিভিন্ন এলাকায় আড়ত ভাড়া নেন। স্থানীয় কিছু ব্যবসায়ীর সহযোগিতায় তাঁরা প্রতিদিন চাষিদের খেত থেকে কাঁচা টমেটো কিনে আড়তে সংরক্ষণ করেন। পরে আড়তে রাখা টমেটো পাকা পর্যন্ত শ্রমিকদের দিয়ে চারবার বাছাই করে ঝুড়িতে ভরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করেন। প্রতিটি ঝুড়িতে ২৬ কেজি টমেটো ধরে। তবে খুব সহজেই নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে কৃষকের কাছ থেকে প্রতি মণ টমেটোতে দুই কেজি বেশি নেন ব্যবসায়ীরা। অর্থাৎ ৪২ কেজিতে মণ কেনেন তাঁরা। গড়ে প্রতি ৪২ কেজিতে ৬ কেজি টমেটো পচে যায়। সেই হিসেবে পচে যাওয়া টমেটোর হার দাঁড়ায় ১৪ শতাংশ। জেলায় টমেটো সংরক্ষণের জন্য কোনো হিমাগার থাকলে বা স্থানীয়ভাবে কোনো প্রক্রিয়াকরণ কারখানা গড়ে উঠলে এত বিপুল পরিমাণ টমেটো নষ্ট হতো না।
কৃষকদের অভিযোগ, মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে সবাই খেত থেকে টমেটো তোলায় দাম কমে যায়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক শাহ আলম মিয়া বলেন, পঞ্চগড়ে কয়েকটা কারণে দিন দিন টমেটো চাষ কমে যাচ্ছে। এর মধ্যে টমেটো খেতে রোগবালাই বেড়ে যাওয়া, মরিচ ও ভুট্টাসহ অন্যান্য ফসলের দিকে ঝুঁকে যাওয়া, টমেটো সংরক্ষাণাগার বা প্রক্রিয়াকরণ কারখানা না থাকা, দিনাজপুরসহ অন্য জেলাগুলোতেও টমেটোর চাষাবাদ বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়গুলো রয়েছে। তবে চলতি মৌসুমে পঞ্চগড়ের কৃষকেরা ভালো দামে টমেটো বিক্রি করেছেন।