মানিকগঞ্জে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে নতুন দুটি মামলা, আসামি শতাধিক
ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে মানিকগঞ্জে দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে নতুন করে দুটি মামলা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের স্থানীয় দুই নেতা দৌলতপুর ও সাটুরিয়া থানায় পৃথক মামলা দুটি করেন। এসব মামলায় বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের ২৩ নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ ও ৮০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। দুই মামলায় এ পর্যন্ত সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বিএনপির নেতারা বলছেন, ঢাকার সমাবেশে বাধাগ্রস্ত করতে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে এসব ‘গায়েবি’ মামলা করা হয়েছে। তবে মামলার বাদীরা দাবি করেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁরা এ মামলা করেছেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল দৌলতপুর থানায় বিএনপির ১৮ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেন উপজেলা শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক মো. সাইফুল ইসলাম। মামলায় আসামি হিসেবে উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক তোজাম্মেল হক, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ ঘটু মিয়া, উপজেলার স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক আহ্বায়ক নুরুজ্জামান রাশেদসহ ১৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ৪০ থেকে ৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে ঘটু মিয়া ও নুরুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মামলার এজাহারে বাদী শ্রমিক লীগ নেতা মো. সাইফুল ইসলাম অভিযোগ করেন, আসামিরা গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে দৌলতপুর উপজেলা সদরে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর করেন। এ ছাড়া দৌলতপুর-বরঙ্গাইল সড়ক অবরোধ করে এলোপাতাড়ি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন তাঁরা। এ সময় একটি অটোরিকশা ভাঙচুর করা হয়।
এ ছাড়া সাটুরিয়া থানায় মামলাটি করেছেন সাটুরিয়া সদর ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হাকিম ওরফে রেজা। এ মামলায় উপজেলার ফকুরহাটি ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি তমিজ উদ্দিন, হরগজ ইউনিয়ন বিএনপির ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, ফকুরহাটি ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি বাদশা মিয়া, একই ইউনিয়ন যুবদলের কর্মী মোতালেব হোসেন, ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক রাইসুল ইসলামসহ অজ্ঞাতনামা আরও ২০ থেকে ৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় গত বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ বিএনপির ওই পাঁচ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে।
যুবলীগের নেতা আজিজুল হাকিমের করা মামলার এজাহারে বলা হয়, গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে সাটুরিয়া বাজারে পাট বিক্রির ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা নিয়ে স্থানীয় এক ইউপি সদস্যকে নিয়ে তিনি (আজিজুল) বাজার থেকে বের হন। এরপর বিএনপির ওই পাঁচ নেতা-কর্মীসহ অজ্ঞাতনামা আরও ২০ থেকে ৩০ জন তাঁদের মারধর করে চোখমুখ বেঁধে পার্শ্ববর্তী দরগ্রাম পাকা সড়কে নিয়ে পাট বিক্রির টাকা নিয়ে যান। পরে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীরা চলে যান।
সাটুরিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কুদ্দুস মজলিশ খান প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের হয়রানি ও নির্যাতন করে আসছেন। এ মামলা দুটিও নির্যাতনমূলক ও গায়েবি মামলার বহিঃপ্রকাশ।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার সমাবেশকে কেন্দ্র করে গত তিন দিনে জেলায় বিএনপির অন্তত ২০ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে নতুন দুটি মামলাসহ পুরোনো মামলায় দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়।
দলীয় নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার এবং গ্রেপ্তার নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবি জানিয়ে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এস এ জিন্নাহ কবির বলেন, মানুষের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধাদান, নির্যাতন ও হয়রানি করতেই দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হচ্ছে এবং তাঁদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। বাড়িতে বাড়িতে অভিযান চালিয়ে নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। দমন–পীড়ন, নির্যাতন ও মামলা করে গণতান্ত্রিক আন্দোলন ঠেকানো যাবে না বলে মন্তব্য এই বিএনপি নেতার।
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) সুজন সরকার প্রথম আলোকে বলেন, কোনো দলের নেতা-কর্মী হিসেবে নয়, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ অথবা গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এ ছাড়া মামলা দুটি পুলিশ নয়, ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা করেছেন।