চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল
নতুন আরও একটি নাবি জাতের আমের সন্ধান
আমটি গাছ থেকে পেড়ে নেওয়ার পর পুরো পাকা অবধি আরও ১০ দিন পর্যন্ত সতেজ থাকে। এটি নাচোলের ফুলকুঁড়ি গ্রামের এক আমচাষির বাগানে পাওয়া গেছে।
আরও একটি নাবি জাতের সুস্বাদু নতুন আম আগামী বছর আসতে পারে বাজারে। মৌসুমের শেষ দিকের এ আমটির খোঁজ পাওয়ার পর দুই বছর ধরে গবেষণা চালাচ্ছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের (আম গবেষণা কেন্দ্র) বিজ্ঞানীরা। তাঁদের মতে, আমপ্রেমীদের মন জয় করবে অসময়ের এই আম। সেই সঙ্গে এই আম চাষ করে লাভবান হবেন আমচাষিরা।
আম গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবু সালেহ মো. ইউসুফ আলী প্রথম আলোকে বলেন, মো. রফিকুল ইসলাম (৪২) নামের একজন আমচাষির বাগান থেকে এই আমের খোঁজ পাওয়া যায়। নাচোলের ফুলকুঁড়ি গ্রামে তাঁর আমবাগানে একটি গাছে এই আম প্রথম ফলে। আমটি যে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের, তা নজরে আসে আমচাষির। একটি গাছ থেকে তিনি ওই বাগানে ১৮টি গাছ তৈরি করেন। ভালো ফল পেয়ে দুই বছর আগে নাচোলের কেন্দুয়ায় ৫০০ গাছ লাগিয়েছেন। সেই সঙ্গে এ তথ্য গবেষণা কেন্দ্রকে জানান তিনি। এবার প্রায় সব গাছে মুকুল আসে। তবে বাকি গাছগুলোর মুকুল ভেঙে দিয়ে তিনি বেশি বয়সী ১০০টি গাছের মুকুল ফলনের জন্য রাখেন।
আমের গুণাবলি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আবু সালেহ মো. ইউসুফ আলী বলেন, আমটির সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে সংগ্রহ শুরু হয়। তবে পুরো সেপ্টেম্বর মাসজুড়ে থাকবে। গাছ থেকে পেড়ে নেওয়ার পর পুরো পাকা অবধি আরও ১০ দিন পর্যন্ত সতেজ থাকে। অর্থাৎ এর সংরক্ষণ গুণ চমৎকার। মিষ্টতাও অনেক বেশি।গড় ওজন ৩০০ গ্রাম। তবে এ আম ৪০০ গ্রামের বেশি ওজনের হয়। এর ভক্ষণযোগ্য অংশ ৭৬ শতাংশ। শাঁস আঁশবিহীন ও শক্ত। এটি আমের একটি ভালো গুণাবলি, যা আমপ্রেমীদের দারুণ পছন্দের। এর আরও একটি ভালো গুণ হচ্ছে, এর বোঁটা শক্ত। গাছ থেকে সহজে ঝরে পড়বে না।
আম গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. মোখলেসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ আমটি পেয়ে আমরা খুবই আনন্দিত। এর গুণাবলিতে আমরা মুগ্ধ। নাবি জাতের আমে এটি হবে একটি দারুণ সংযোজন।’ তিনি বলেন, দুই বছর ধরে গবেষণা কাজ চলছে। ইতিমধ্যেই আমের নমুনা রাজশাহীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি ও ঢাকায় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে (বারি) পাঠানো হয়েছে। আশা করছেন, নাবি জাতের এই আমটির কথা সামনের বছর সরকারিভাবে ঘোষণা করা হবে। তখন থেকে সারা দেশে চাষ করা যাবে এ আম।
নাচোলের আমচাষি রফিকুল ইসলাম বলেন, তাঁর ১৩ বিঘার একটি বাগানে একটিমাত্র গাছে দেখা যায়, মৌসুমের শেষের পরও অনেক দিন আম থাকছে। এরপর আমটি পাঁচ বছর থেকে পর্যবেক্ষণ করছেন। এতে রোগবালাই নেই বললেই চলে। যত পাকে, ততই মিষ্টতা বাড়ে। গাছ থেকে পাড়ার পর ১০ দিন পর্যন্ত সতেজ থাকে।
রফিকুল জানান, রাজশাহী কলেজ থেকে ব্যবস্থাপনায় স্নাতকোত্তর পাস করেছেন তিনি। তবে তিনি চাকরি না খুঁজে ২০০৫ সাল থেকেফল চাষে নেমে পড়েন। আমচাষে শুরু থেকেই আশাব্যঞ্জক সাফল্য পেতে শুরু করেন তিনি।