পাটুরিয়ায় ফেরিডুবির কারণ নিয়ে পাওয়া যাচ্ছে তিন ধরনের ভাষ্য
মানিকগঞ্জের পাটুরিয়ায় ‘রজনীগন্ধা’ ফেরিডুবির কারণ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) কর্তৃপক্ষ বলছে, বালুবাহী বাল্কহেডের ধাক্কায় ফেরিটি ডুবে যায়।
অন্যদিকে নদীতে ডুবোচরে ধাক্কা খেয়ে ফেরির তলা ফেটে গিয়ে এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে নৌ পুলিশ। তবে ফেরিতে থাকা প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা বলছেন, ফেরিতে পানি উঠে কাত হয়ে ধীরে ধীরে ফেরিটি তলিয়ে যায়।
গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত একটার দিকে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাট থেকে পাটুরিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে আসে ইউটিলিটি (ছোট) ফেরি রজনীগন্ধা। ফেরিতে ছোট-বড় ৯টি ট্রাক ছিল। ঘন কুয়াশায় রাত দেড়টার দিকে পাটুরিয়ার ৫ নম্বর ঘাটের অদূরে পদ্মা নদীতে ফেরিটি আটকে যায়। এ সময় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকে। আজ সকাল আটটার পরপরই ফেরিটি ডুবে যেতে থাকে। তখন যানবাহনের চালক, সহকারী ও ফেরিতে কর্মরত লোকজন দ্রুত নদীতে ঝাঁপ দেন।
খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও প্রশাসনের লোকজন ট্রলার নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। এর আগে নদীতে ঝাঁপ দেওয়া কয়েকজন সাঁতরে নদীর তীরে ওঠেন। এ ছাড়া ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ছয়জনকে উদ্ধার করে তীরে নিয়ে আসেন। ততক্ষণে ফেরিটি যানবাহন নিয়ে পানিতে তলিয়ে যায়।
নৌ পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় ফেরির দ্বিতীয় ইঞ্জিন চালক হুমায়ুন কবির নিখোঁজ আছেন। ফেরিতে থাকা জীবিত ২০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁদের অধিকাংশই মালবাহী ট্রাকের শ্রমিক। বিআইডব্লিউটিএর উদ্ধারকারী জাহাজ হামজার মাধ্যমে একটি ট্রাক উদ্ধার করা হয়েছে।
ফেরিডুবির কারণ নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। বিআইডব্লিউটিসির আরিচা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) শাহ মোহাম্মদ খালেদ নেওয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, ঘন কুয়াশার কারণে ফেরিটি নদীতে নোঙর করা ছিল। সকাল আটটার দিকে বালুবাহী একটি বাল্কহেড ফেরিটিকে সজোরে ধাক্কা দিলে এক পাশ কাত হয়ে ফেরিটি নদীতে ডুবে যায়। ঘন কুয়াশায় বাল্কহেডটি চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি।
তবে নৌ পুলিশের ফরিদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, ফেরিটি দৌলতদিয়া থেকে পাটুরিয়া ঘাটের আসার পথে ডুবোচরে ধাক্কা লাগে। এতে ফেরির তলা ফুটো হয়ে গেলে পানি ঢুকতে থাকে। কুয়াশায় পথ দেখতে না পেয়ে পাটুরিয়া ঘাটের ২০০ থেকে ২৫০ গজ অদূরে রজনীগন্ধা ফেরিটি নোঙর করে। এরপর ধীরে ধীরে পানি ঢুকে সকাল আটটার দিকে ৯টি ট্রাকসহ ফেরিটি নদীতে ডুবে যায়।
ফেরিতে থাকা প্রত্যক্ষদর্শী ট্রাকচালক মজনু মিয়া বলেন, আজ ভোর চারটার দিকে ফেরিতে পানি উঠতে থাকে। এ সময় ফেরির লোকজন পানিনিষ্কাশনের চেষ্টা করতে থাকেন। ধীরে ধীরে এক পাশ কাত হয়ে ফেরিটি ডুবতে থাকে। একপর্যায়ে সকাল আটটার দিকে সব মালবাহী ট্রাকসহ ফেরিটি পানিতে তলিয়ে যায়। এ সময় তাঁরা যে যাঁর মতো নদীতে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতরে তীরে ওঠেন।
ফেরিতে থাকা আরেক প্রত্যক্ষদর্শী ফজর আলী বলেন, পাটুরিয়া ঘাটের অদূরে ফেরিটি নোঙর করে রাখা হয়। তখন তিনি ফেরিতেই ছিলেন। সকাল ছয়টার দিকে ফেরির একজন বলতে থাকেন, ‘ফেরিতে পানি উঠছে।’ তখন ফেরির নোঙর খুলে দেওয়া হয়। কিছুক্ষণ পর ফেরিটি চালু করা হলেও ততক্ষণে পানি ওঠে ফেরিটি কাত হয়ে ডুবতে থাকে। এরপর সকাল আটটার দিকে ফেরিটি পানিতে তলিয়ে যায়। ফজর আলীর দাবি, অন্য কোনো ফেরি বা নৌযানের ধাক্কার কোনো ঘটনা ঘটেনি। ফেরিতে পানি উঠে কাত হয়ে তলিয়ে যায়।
ফেরিডুবির ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসন ও বিআইডব্লিউটিসির পক্ষ থেকে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সানজিদা জেসমীনকে প্রধান করে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। সাত কার্যদিবসের মধ্যে তাঁদের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান মতিউর রহমান বলেন, দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে ৫ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আজ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত জেলা প্রশাসক রেহানা আকতার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ও খোঁজখবর নেন। ফেরিডুবির কারণ সম্পর্কে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কী কারণে ফেরিটি ডুবেছে, তা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।