গরু চুরির অভিযোগে ‘খাওয়ানো হয়’ চুন-বালুর মিশ্রণ, মৃত্যুর ঘটনায় ইউপি সদস্য আটক
সিলেটের গোয়াইনঘাটে গরু চুরির অভিযোগে পানির সঙ্গে চুন-বালু খাওয়ানোর পর এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় এক ইউপি সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ।
নিহত হেলাল উদ্দিন (৪০) উপজেলার ডৌবাড়ী ইউনিয়নের ঘোষগ্রামের বাসিন্দা। আটক হওয়া নুরুল ইসলাম মধ্য জাফলং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য।
এ বিষয়ে গতকাল বুধবার রাতে গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরকার তোফায়েল আহমেদ বলেন, হেলাল উদ্দিনের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন। ইউপি সদস্য নুরুল ইসালমকে সন্দেহভাজন হিসেবে গতকাল রাতে আটক করা হয়েছে। তিনি হেলাল উদ্দিনকে চুরির অভিযোগে আটকের পর সালিসে অংশ নিয়েছিলেন। ওই মৃত্যুর ঘটনায় সংশ্লিষ্ট অন্যদের আটক করতে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।
এর আগে গত মঙ্গলবার দুপুরে মধ্য জাফলং ইউনিয়নের পাতাতিখেল বাগান এলাকা থেকে গরুসহ এক কিশোর (১৬) ও হেলাল উদ্দিনকে আটক করেন স্থানীয় লোকজন। তাঁদের বিরুদ্ধে গরু চুরির অভিযোগ আনা হয়। পরে তাঁদের রাধানগর বাজারে নিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়। পরে ওই রাতে সালিসের মাধ্যমে দুজনকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
গতকাল দুপুরে ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে জানিয়েছিলেন, তিনি সালিসে গিয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে আরেক ইউপি সদস্য নোয়াব আলী ছিলেন। তাঁরা উপস্থিত হওয়ার পর আটক দুজনকে মারধর করতে দেখেননি। তবে তাঁদের গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছিল। চুন ও বালুর মিশ্রণ খাওয়ানোর ঘটনাও তিনি দেখেননি। আটক কিশোরের পরিবার থানায় উল্টো অপহরণের অভিযোগ দিয়েছিল। পরে চুরির ঘটনা ও অপহরণের অভিযোগ সালিসের মাধ্যমে সমাধান করা হয়েছে। হেলাল উদ্দিনের অভিভাবকদের কেউ সালিসে আসেননি। কিশোরের মা, ফুফাতো ভাই, দুই বোন গিয়ে তাঁদের জিম্মায় নিয়ে যান। মুচলেকায় তাঁরা দুজনকেই সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে যাচ্ছেন বলেও উল্লেখ করেছেন। এ ঘটনার ভিডিও রয়েছে।
নিহত হেলাল উদ্দিনের চাচা মোহাম্মদ আলীর অভিযোগ, তাঁর ভাতিজা হেলাল উদ্দিন পেশায় বালু-পাথরের শ্রমিক ছিলেন। ওই কিশোরের সঙ্গে প্রায়ই কাজে যেতেন। ঘটনার দিনও কাজের উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন। কিন্তু তাঁদের চক্রান্ত করে চুরির অপবাদ দিয়ে দুটি গরুসহ আটক দেখানো হয়েছে। পরে মারধর করে হেলাল উদ্দিনকে চুন ও বালুমিশ্রিত পানি খাইয়ে দেওয়া হয়েছে।
মোহাম্মদ আলী বলেন, হেলাল উদ্দিনকে মারধর করা হয়েছে, তাঁর অবস্থা গুরুতর বিষয়টি জানায় পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ তাঁকে নিতে যাননি। বিষয়টি স্থানীয় ইউপি সদস্যকে অবহিত করেছিলেন মধ্য জাফলং ইউপির এক সদস্য। সে সময় তাঁদের এলাকা (মধ্য জাফলং) থেকে চুরি হওয়া সব গরুর বিষয়ে তাঁদের দায় নিতে বলা হয়েছিল। এ জন্য তাঁরা আর যাননি।