রাজশাহীতে ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ফাইনালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলোয়াড়দের ওপর হামলা
আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হামলার শিকার হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলোয়াড়েরা।
আজ সোমবার বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটের দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ কামাল স্টেডিয়ামে খেলা চলাকালে এ ঘটনা ঘটে। পরে মানবঢাল তৈরি করে পুলিশি পাহারায় খেলোয়াড়দের মাঠ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়।
এ ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেট দলের অন্তত চার খেলোয়াড় আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন ওই দলের প্রধান কোচ। এদিকে হামলার ঘটনা খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
আহত ব্যক্তিরা হলেন খেলোয়াড় সিফাত, ইমন, তূর্য ও রোকন। তাঁরা রাজশাহীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের পরিচালক মাহমুদ আলম এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান, এ ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা যায়, আজ দুপুরে আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ফাইনালে স্বাগতিক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেট দলের মুখোমুখি হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেট দল। ম্যাচে টসে জিতে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেট দল। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ১৫০ রানের টার্গেট দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেট দল। জবাবে খেলতে নেমে ভালো সূচনা করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেট দল।
খেলার ১৩তম ওভারে এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্তকে ঘিরে আম্পায়ারদের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলোয়াড়েরা। পরে দুই দলের কোচ ও শিক্ষকদের হস্তক্ষেপে আবার খেলা শুরু হয়।
এরপর দ্রুত উইকেট হারাতে থাকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেট দল। ১৮ ওভার শেষে তাদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৭ উইকেটে ১৩০ রান। পরের ওভারের প্রথম বলে লং অনে উড়িয়ে মারেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ব্যাটসম্যান। বলটি বাউন্ডারি লাইনে ড্রাইভ দিয়ে তালুবন্দী করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলোয়াড় সাকিব। আউট হয়েছে কি না সেই সিদ্ধান্ত দেওয়ার আগে মাঠে ঢুকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলোয়াড়দের ওপর হামলা করেন।
পরে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যসহ প্রশাসন ও শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের সহযোগিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলোয়াড়দের প্যাভিলিয়নে আনা হয়। এ সময় মাইকে আলোক স্বল্পতার কারণ দেখিয়ে উভয় দলকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করেন ম্যাচ রেফারি। পরে মানবঢাল তৈরি করে পুলিশি পাহারায় মাঠ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। এ সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ‘রাবি-ঢাবি ভাই ভাই, ভয়ের কোনো কারণ নাই’ স্লোগান দিতে দেখা যায়।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিকেট দলের প্রধান কোচ শাহাদাত হোসেন বলেন, মাঠে তাঁদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা ছিল। বিষয়টি প্রশাসনকে জানালেও তারা আমলে নেয়নি। এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গের কথাও বলেছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কথা দিয়েছেন যে মাঠের ভেতরে কোনো দর্শক থাকবে না। অথচ ম্যাচের শুরুতে শিক্ষার্থীরা প্রবেশ গেট ভেঙে মাঠে প্রবেশ করেন। তারা যখন ম্যাচ হারার পথে ছিল, তখনই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা খেলার মাঠে প্রবেশ করে খেলোয়াড়দের ওপর আক্রমণ করেন। এ ঘটনায় অন্তত চারজন খেলোয়াড় আহত হয়েছেন। আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান তিনি।
তবে নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনার বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসহাবুল হক বলেন, খেলা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সকল প্রকার নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। মাঠে সহকারী প্রক্টর, পুলিশ প্রশাসন মোতায়েন করা হয়। কিন্তু আম্পায়ারের একটি সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। খানিকের মধ্যে বিষয়টি ব্যাপক আকার ধারণ করে। তারপরও খেলোয়াড়দের নিরাপদে মাঠ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
হামলার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, ‘আমরা নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে প্রথমে শিক্ষার্থীদের গ্যালারিতে বসার ব্যবস্থা করেছিলাম। আমরা তাঁদের মাঠে প্রবেশ করতে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু শিক্ষার্থীরা গেট ভেঙে মাঠে ঢুকে পড়ে। হামলার ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত। ইতিমধ্যে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’