বিএমডব্লিউ নিয়ে জালিয়াতি, চার বছর পর যা জানা গেল

জব্দ করা বিএমডব্লিউ ব্র্যান্ডের গাড়িটিছবি: সংগৃহীত

চার বছর আগে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বিএমডব্লিউ ব্র্যান্ডের একটি গাড়ি আমদানি করে চট্টগ্রামের দেওয়ানহাটের নাগোয়া করপোরেশন। গাড়িটি বিক্রিও করা হয়। মালিকানাও পরিবর্তন হয় দুই দফা। সড়কেও চলেছে। তবে চার বছর পর বেরিয়ে এসেছে যে গাড়িটি আমদানির সময় মডেল, তৈরির সালসহ সবকিছুই জালিয়াতি করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

সরকারকে শুল্ককর কম দেওয়ার জন্য এই কৌশল নিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি। কারণ, চার বছর গোপন থাকার পর গাড়িটি আমদানিতে জালিয়াতি উদ্‌ঘাটন করেছেন কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। গত বুধবার ঢাকার তেজগাঁও শিল্প এলাকা থেকে গাড়িটি জব্দ করা হয়েছে। জব্দ করা গাড়ির কাগজপত্র যাচাই করতে গিয়ে নতুন করে অনিয়মের খোঁজ পেয়েছেন কর্মকর্তারা।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের তথ্যে দেখা যায়, ২০২০ সালের শুরুতে জার্মানিতে তৈরি বিএমডব্লিউ ফাইভ সিরিজ ঘোষণা দিয়ে নতুন হিসেবে এই গাড়ি আমদানি করে নাগোয়ো করপোরেশন। গাড়িটি ২০১৯ সালে তৈরি বলে নথিপত্র দেয় আমদানিকারক। আমদানি করা হয় জাপানের ‘আশরাফ কো. লিমিটেড’ থেকে।

তবে গাড়িটি জব্দ করার পর কর্মকর্তারা দেখেন যে গাড়িটির তৈরি করার প্রকৃত সাল ২০১৭। আবার গাড়িটির মডেল ফাইভ সিরিজ নয়, সেভেন সিরিজের। অর্থাৎ গাড়িটি যখন আমদানি করা হয়, তখন নতুন ছিল না। পুরোনো গাড়ি। পুরোনো গাড়ি হিসেবে তৃতীয় দেশ থেকে আমদানির সুযোগ নেই।

অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. মিনহাজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, গাড়ির মডেলের মিথ্যা ঘোষণার খবর পেয়ে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়েছিল। তবে জব্দ করার পর বেরিয়ে এসেছে যে শুধু মডেলই নয়, গাড়িটির তৈরির সাল নিয়েও মিথ্যা ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

গাড়িটি যখন জব্দ করা হয়, তখন এটি চৌধুরী ফ্যাশন নামে একটি প্রতিষ্ঠানের নামে চলছিল। গাড়িটির বর্তমান মালিকও বিষয়টি জানতেন না। গাড়িটি জব্দ করার সময় সর্বশেষ ক্রেতা গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের বলেন, ‘এ রকম জালিয়াতি জানলে তো কিনতাম না।’ গাড়িটির প্রথম মালিক ছিলেন চট্টগ্রামের অনুপ বিশ্বাস নামের এক ব্যক্তি। তিনি মারা যাওয়ার পর তাঁর স্ত্রীর মালিকানায় আসে গাড়িটি।

কর্মকর্তারা জানান, গাড়িটির আমদানি মূল্য দেখানো হয়েছিল ২০ হাজার মার্কিন ডলার (তৎকালীন বিনিময় মূল্য হিসেবে ১৭ লাখ টাকা)। অথচ একই সময়ে এই মডেলের গাড়ির আমদানি মূল্য ছিল তিনগুণের বেশি। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ অবশ্য আমদানিকারকের ঘোষণা আমলে নেয়নি। তারা ৪১ লাখ ৮০ হাজার টাকা শুল্কায়ন মূল্য ধরে শুল্ককর আদায় করেছিল। সব মিলিয়ে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানটি ৫৩ লাখ টাকা শুল্ককর দিয়েছিল। চার বছর পর ফাঁকি শনাক্ত হওয়ায় এখন জরিমানাসহ নানা আইনি পদক্ষেপের মুখে পড়তে হবে আমদানিকারককে।