রাজশাহীর দুর্গাপুরে ছত্রাকনাশক ব্যবহারের পর ফুলকপি পচে যাওয়ার অভিযোগ
রাজশাহীর দুর্গাপুরে বিশেষ একটি ছত্রাকনাশক ব্যবহারের পর ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন চাষিরা। তাঁরা এ বিষয়ে দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাবরিনা শারমিনের কাছে অভিযোগ জানিয়ে ছত্রাকনাশক প্রতিষ্ঠানটির কাছে ৩৫ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ টাকা ক্ষতিপূরণ আদায়ের দাবি করেছেন। পরে পরীক্ষার জন্য ক্ষতিগ্রস্ত ফুলকপির নমুনা ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
গত সোমবার ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দেন দুর্গাপুর উপজেলার চুনিয়াপাড়া, গগনবাড়িয়া ও সাকোয়া গ্রামের ১৩ জন কৃষক। তাঁরা হলেন শফি কামাল, হযরত আলী, মো. ছেকেন্দার, মন্টু, লাল্টু, আজিবর, কামরুল, জারজিদ, রবিউল, ছাতারুল, আতাউর, শহিদুল ও হাসান। তাঁদের মোট ৪৬৯ শতক জমির ফুলকপি নষ্ট হয়েছে বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিযোগে কৃষকেরা জানান, তাঁরা সবাই গগনবাড়িয়া বাজারের একটি কীটনাশকের দোকান থেকে কার্বেনডাজিম গ্রুপের ‘নিউজিম’ নামে একটি ছত্রাকনাশক পাউডার কিনে জমিতে ছিটিয়ে দিয়েছিলেন। এটির বাজারজাত করেছে ব্লেসিং অ্যাগ্রোভেট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। প্যাকেটের গায়ে প্রস্তুতকারক হিসেবে লেখা আছে চীনের জিয়াংসু লাফেং বায়োকেমিক্যাল কোম্পানি লিমিটেডের নাম।
স্থানীয় কৃষকেরা আরও বলেন, ওই ছত্রাকনাশক ব্যবহারের পর ফুলকপির গাছ মরতে শুরু করে। পরে বিষয়টি স্থানীয় কীটনাশক বিক্রেতা ছাতাহার আলীর পাশাপাশি ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোতালেব হোসেনকেও জানানো হয়। কিন্তু মোতালেব হোসেন বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাননি। আর বিক্রেতা এবং ব্লেসিং অ্যাগ্রোভেটের রাজশাহীর আরএসএম জহুরুল হক কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে কালক্ষেপণ করেন। এর মধ্যেই বাজার থেকে পণ্যটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। তবে তাঁরা কোনো ক্ষতিপূরণই পাননি।
গত ১৬ অক্টোবর জমিতে ওই ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করেন। এক দিন পর লক্ষ করেন, গাছের রং হলদে হয়ে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে এ রং গাঢ় হতে শুরু করে। মাত্র তিন দিন পর গাছের কাণ্ড পচে খসে পড়তে শুরু করে।চুনিয়াপাড়া গ্রামের কৃষক শফি কামাল
নিজের তিন বিঘা জমিতে ওই ছত্রাকনাশক ব্যবহার করেছিলেন চুনিয়াপাড়া গ্রামের কৃষক শফি কামাল। তিনি বলেন, গত ১৬ অক্টোবর জমিতে ওই ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করেন। এক দিন পর লক্ষ করেন, গাছের রং হলদে হয়ে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে এ রং গাঢ় হতে শুরু করে। মাত্র তিন দিন পর গাছের কাণ্ড পচে খসে পড়তে শুরু করে।কয়েকজন চাষি লালশাক ও ঘাসে পরীক্ষামূলকভাবে ছত্রাকনাশকটি স্প্রে করেন। দেখা যায়, এগুলোও পচে মরে যাচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে তদন্তের জন্য উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা পারভীনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পরে গতকাল মঙ্গলবার ফসলের মাঠ পরিদর্শন করেন তিনি। এর আগে ওই ছত্রাকনাশক বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানটি এলাকাটির বিভিন্ন দোকান থেকে নিজেদের পণ্যটি প্রত্যাহার করে নেয়। কৃষকদের অভিযোগ, ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ওই কীটনাশক কোম্পানি কালক্ষেপণ করেছে। তাই তাঁরা এ অভিযোগ করেছেন।
জানতে চাইলে কৃষি কর্মকর্তা শাহানা পারভীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই ছত্রাকনাশক সাধারণত কলা চাষের জন্য ব্যবহার করা হয়। তবে অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে তাঁরা ফুলকপি খেতেও এটি ব্যবহার করেছেন। তবে বিষয়টি নিয়ে কৃষকেরা মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেননি। এখন নমুনা পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে। পরীক্ষায় যদি প্রমাণিত হয় যে ওই ছত্রাকনাশকের কারণেই ফুলকপির ক্ষতি হয়েছে; তাহলে কোম্পানির ঘাটতি খুঁজে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কীটনাশক বিক্রেতা ছাতাহার আলী বলেন, ‘সমস্যা জানানোর পর কোম্পানি সব নিউজিম নিয়ে চলে গেছে। আর বিক্রি করছি না।’ তবে নিউজিমে কোনো সমস্যা নেই বলে দাবি করেছেন বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা জহুরুল হক। তিনি বলেন, ‘রাজশাহীর অন্য জায়গাতেও একই নিউজিম বিক্রি করা হয়েছে। কোথাও কোনো সমস্যা হয়নি। দুর্গাপুরে কেন, তা বলতে পারব না।’
ওই ছত্রাকনাশক সাধারণত কলা চাষের জন্য ব্যবহার করা হয়। তবে অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে তাঁরা ফুলকপি খেতেও এটি ব্যবহার করেছেন। তবে বিষয়টি নিয়ে কৃষকেরা মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেননি। এখন নমুনা পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে।উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা পারভীন
একই কথা জানান ব্লেসিং অ্যাগ্রোভেটের প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট কর্মকর্তা মো. মাসুম। তাঁর দাবি, একই পণ্য একই ডোজে রংপুরে প্রয়োগ করা হয়েছে। সেখানে কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি।
অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে দুর্গাপুরের ইউএনও সাবরিনা শারমিন গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, কৃষি কর্মকর্তা গতকাল তাঁকে জানিয়েছেন, নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। পরীক্ষায় যদি ধরা পড়ে ছত্রাকনাশকের কারণেই ফসলের ক্ষতি হয়েছে, তাহলে কোম্পানির বিরুদ্ধে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।