এবার শিক্ষার্থীদের আরেকাংশের মানববন্ধন, ছাত্রাবাসে আসন বরাদ্দ নিয়ে ক্ষোভ

চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে হামলার প্রতিবাদে আজ শিক্ষার্থীদের আরেকটি অংশ বিক্ষোভ করে। আজ বেলা একটায় ষোলোশহর রেলওয়ে স্টেশনেছবি: জুয়েল শীল

চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে গত বৃহস্পতিবার ছাত্রাবাসের আসন বরাদ্দ নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে এবার বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীদের আরেকটি অংশ। আজ রোববার বেলা একটার দিকে নগরের ষোলোশহর রেলওয়ে স্টেশনে ‘বৈষম্যবিরোধী কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের’ ব্যানারে মানববন্ধন করেন তাঁরা। এ সময় তাঁরা দাবি করেন, মেধা ও দূরত্বের ভিত্তিতে ছাত্রাবাসে আসন বরাদ্দ না দিয়ে ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বসে তাঁদের চাপে অধ্যক্ষ আসন বরাদ্দ দিয়েছেন।

মানববন্ধনে থাকা পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদুল হাই সাজ্জাদ বলেন, ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা অধ্যক্ষকে চাপ দিয়ে ছাত্রাবাসে আসন বরাদ্দ নিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার ক্যাম্পাসের ছাত্রাবাস দখল নিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর শিবির হামলা করেছে তিনি দাবি করেন।

ইনস্টিটিউটের পাওয়ার টেকনোলোজি বিভাগের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী টিউলিপ ফয়সাল বলেন, মেধা ও দূরত্বের ভিত্তিতে না দিয়ে ছাত্রশিবিরের কথামতো আসন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ছাত্রশিবিরের ১১ জনকে আসন দেওয়া হয়। পাশাপাশি কুমিল্লা, চাঁদপুরের শিক্ষার্থীদের আসন না দিয়ে বরাদ্দ দেওয়া হয় চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীদের। একই কথা বলেন পুরকৌশল বিভাগের চতুর্থ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী মতুয়াচ্ছিম মাহমুদ।

এ সময় শিক্ষার্থীরা বলেন, আল আমিন ভূঁইয়া নামের এক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবিরের রাজনীতি ফিরিয়ে আনতে ছাত্রাবাসে তাঁদের সমর্থিতদের আসন পাইয়ে দিয়েছেন অধ্যক্ষকে চাপ দিয়ে।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইনস্টিটিউটের পুরকৌশল বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী আল আমিন ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ‘মেধা ও দূরত্বের ভিত্তিতেই প্রশাসন আসন বরাদ্দ দিয়েছে। আমার কোনো হাত নেই।’

এ বিষয়ে জানতে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ মো. ইয়াসিনের বক্তব্য নিতে গেলে তিনি বৈঠকে আছেন জানিয়ে বক্তব্য দেননি। পরে বেলা দুইটার দিকে তাঁর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

আজ চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে পাল্টাপাল্টি মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচির ঘোষণা দেয় দুটি আলাদা সংগঠন। শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগতদের হামলার প্রতিবাদে এদিন সকালে দেশের সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে কর্মসূচির ডাক দেয় কারিগরি ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ। অন্যদিকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর জামায়াত-শিবিরের হামলার প্রতিবাদে একই কর্মসূচির ঘোষণা দেয় বৈষম্যবিরোধী কারিগরি ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ।

দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির কারণে চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে পুলিশ আজ কাউকে বিক্ষোভ করতে দেয়নি। আজ সকালে কম্পাসের ফটকে
ছবি: জুয়েল শীল

দুই পক্ষের কর্মসূচির খবরে এদিন ভোর থেকেই ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে পুলিশের অবস্থান ছিল। পুলিশের পক্ষ থেকে এদিন ইনস্টিটিউটে কোনো পক্ষকে কর্মসূচি পালন করতে দেওয়া হয়নি। সাধারণ শিক্ষার্থী দাবি করা কয়েকজন দুপুর ১২টার দিকে প্রবেশ ফটকের সামনে জড়ো পুলিশ তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে বৈষম্যবিরোধী কারিগরি ছাত্র আন্দোলন নগরের ষোলোশহর রেল স্টেশনে তাঁদের কর্মসূচি পালন করে।

নগর পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (উত্তর) মুহাম্মদ ফয়সাল আহম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, সকাল থেকে চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে পুলিশের ফোর্স রয়েছে। সেখানে কেউ কর্মসূচির জন্য আসেননি। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক।

চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ছাত্রাবাসের আসন বরাদ্দকে কেন্দ্র করে ‘ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের’ হামলার প্রতিবাদে গত শুক্রবার বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে নগরের ষোলোশহর রেলস্টেশন এলাকায় ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, চট্টগ্রাম’-এর ব্যানারে এই কর্মসূচি পালন করা হয়। একই দিন বেলা সাড়ে তিনটায় নগরের কাজীর দেউড়ির মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের আরেক দল শিক্ষার্থী।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার ছাত্রাবাসের আসন বরাদ্দের জেরে চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে শিক্ষার্থীদের একটি পক্ষের সঙ্গে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে চারজন আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীদের একটি পক্ষ দাবি করে, ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা প্রতিষ্ঠানের ভেতরে ঢুকে তাঁদের ওপর হামলা করেন। আর ছাত্রদল দাবি করেছে, ছাত্রশিবিরের কর্মীরা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছেন। এর আগে বুধবার সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ছাত্রাবাসে আসন বরাদ্দের তালিকা প্রকাশ করে প্রশাসন।