ছেলেকে না পেয়ে বৃদ্ধ মাকে আটক করার অভিযোগ ইউএনওর বিরুদ্ধে
গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমাম আল রাজী টুলুর বিরুদ্ধে রাশেদা খানম নামের বৃদ্ধ এক নারীকে নিজ কার্যালয়ে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে। উচ্ছেদ অভিযানকে কেন্দ্র করে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় ছেলেকে আটক করতে গিয়ে ওই নারীকে আটক করে আনা হয় বলে অভিযোগ। গতকাল বুধবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
গতকাল বুধবার মুকসুদপুর উপজেলার জালিরপাড় বাজারে ওই উচ্ছেদ অভিযান চালাতে গিয়ে এ ঘটনা ঘটে। ওই নারীর বাড়িও জালিরপাড় বাজার এলাকায়। আজ বৃহস্পতিবার ঘটনাটি জানাজানির পর উপজেলার সর্বত্র আলোচনা-সমালোচনা চলছে। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, সরকারি সম্পত্তি উদ্ধার করতে গিয়ে ইউএনওর গাড়িতে হামলা হয়। হামলার পেছনে ওই নারীর ইন্ধন থাকায় আটক করা হয়েছিল। তবে নারী হওয়ায় মানবিক কারণে তাঁকে মামলা থেকে বাদ দেওয়ার পাশাপাশি ছেড়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বুধবার সকালে উপজেলার জালিরপাড় বাজারে মিজান শেখ নামের এক ব্যক্তির চায়ের দোকান উচ্ছেদ করতে যায় উপজেলা প্রশাসন। চায়ের দোকানদার গরিব উল্লেখ করে ব্যবসায়ীরা ইউএনওকে উচ্ছেদ না করার অনুরোধ করেন। কিন্তু ইউএনও ব্যবসায়ীদের অনুরোধ রাখেননি। এ নিয়ে উপজেলা প্রশাসন ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে কথা–কাটাকাটি হয়। এ সময় ইউএনওর গাড়িতে হামলা করেন বিক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা।
কয়েক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ওই চায়ের দোকানের পাশে রকিব শেখ নামের একজনের রড-সিমেন্টের একটি দোকান আছে। বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রশাসনের লোকজনের বাগ্বিতণ্ডার সময় রকিবও তর্কে জড়ান। এতে রকিবের ওপর ক্ষুব্ধ হন ইউএনও। একপর্যায়ে ইউএনও তাঁর সঙ্গে থাকা আনসার সদস্যদের বিক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তারে বাজার এলাকায় অভিযান চালাতে বলেন। আনসার সদস্যরা রকিবদের বাড়িতে গিয়ে কাউকে না পেয়ে তাঁর ষাটোর্ধ্ব মাকে গাড়িতে তুলে ইউএনও কার্যালয়ে নিয়ে যান। পাঁচ ঘণ্টা আটকে রাখার পর সন্ধ্যা সাতটার দিকে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে ইউএনও ইমাম আল রাজী টুলুর মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল করলেও তিনি ধরেননি। বিষয়বস্তু জানিয়ে খুদে বার্তা পাঠালেও তিনি সাড়া দেননি। জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, অবৈধ দখল উচ্ছেদ করতে গিয়ে ইউএনওর গাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়। হামলার পেছনে ওই নারীর ইন্ধন ছিল। তাই তাঁকে আটক করা হয়েছিল। কিন্তু নারী হওয়ায় মানবিক কারণে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয় এবং মামলা থেকে বাদ দেওয়া হয়। ইউএনওর কোনো অপরাধ থাকলে তাঁরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করতে পারতেন।
এদিকে ইউএনওর গাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে মামলা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অজ্ঞাতনামা ৩০ থেকে ৪০ জনের বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়েছে।
মুকসুদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাতেই ইউএনওর গাড়িচালক শংকর কুমার বাদী হয়ে সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে একটি মামলা করেন। মামলাটি তদন্তাধীন। এ ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।