মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের বিরুদ্ধে ‘কটূক্তি’ করা আওয়ামী লীগের নেতাদের ‘অনুপ্রবেশকারী’ বলে তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
আজ বুধবার সন্ধ্যায় জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় বক্তারা এ হুঁশিয়ারি দেন। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীকে কটূক্তির প্রতিবাদে মেহেরপুর পৌর কমিউনিটি হলে এ সভার আয়োজন করে জেলা আওয়ামী লীগের একাংশের নেতা-কর্মীরা।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ খালেক, যুগ্ম সম্পাদক ইব্রাহিম শাহিন, সহসভাপতি আবদুস সালাম, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বোরহান উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক মোমিনুল ইসলাম, বুড়িপোতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজামাল হোসেনসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকেরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় ফরহাদ হোসেনের পক্ষে নেতা-কর্মীদের স্লোগান দিতে দেখা যায়।
আওয়ামী লীগ নেতা এম এ খালেক বলেন, সম্প্রতি আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে ফরহাদ হোসেন সম্পর্কে বাজে কথা বলেছেন। তাঁরা জামায়াত-বিএনপির মতো আচরণ করছেন। তাঁরা দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। ফরহাদ হোসেনের বিরুদ্ধে কথা বলা মানে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কথা বলা। কোনো অভিযোগ ছাড়াই তাঁরা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির সম্মানহানি করার চেষ্টা করেছেন। অবশ্যই তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সহসভাপতি আবদুস সালাম বলেন, মুজিবনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি জিয়াউদ্দিন বিশ্বাস দলের সহসভাপতি হয়ে হঠাৎ সভাপতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। তিনি দীর্ঘদিন ফরহাদ হোসেনের অনুসারী ছিলেন। এখন জামায়াত-বিএনপির মতো তলেতলে ষড়যন্ত্র করছেন। তিনি ক্ষমা না চাইলে তাঁর বিরুদ্ধে দল ব্যবস্থা নেবে। তাঁরা আওয়ামী লীগের নেতা হতে পারেন না। তাঁরা জামায়াত-বিএনপির অনুসারী।
যুগ্ম সম্পাদক ইব্রাহিম শাহিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে দেশের উন্নয়ন করে চলেছেন, তখন জেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা সংসদ সদস্য ফরহাদ হোসেন যাতে মনোনয়ন না পান সেই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তাঁরা দলের মধ্যে বিশ্বাসঘাতক। শেখ হাসিনাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি তাঁরা ভঙ্গ করেছেন।
অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন ফরহাদ হোসেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী কয়েকজন দলের শৃঙ্খলাবিরোধী কথাবার্তা বলছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পষ্ট করে নেতা-কর্মীদের বলেছেন, কোনো সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে বাজে কথা বলা যাবে না। যাঁরা অসত্য কথা বলছেন, তাঁরা দলের গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করেছেন। তাঁরা লিখিতভাবে ক্ষমা না চাইলে আগামী মিটিংয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের একাংশের নেতা সদর উপজেলার সাবেক সভাপতি গোলাম রসুল বলেন, মতবিনিময় সভায় আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতারা মেহেরপুরে ফরহাদকে মনোনয়ন না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক দল। দলের প্রতিটি ব্যক্তির চাওয়া-পাওয়া থাকতে পারে। দীর্ঘদিন কোণঠাসা হয়ে থাকা আওয়ামী লীগের নেতারা অভিযোগ-অনুযোগ সভানেত্রীকে জানাতে চাচ্ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য সভাটি করা হয়।
মঙ্গলবার বিকেলে পৌর কমিউনিটি হলে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মেহেরপুরে ফরহাদ হোসেনকে মনোনয়ন না দেওয়ার দাবিতে মতবিনিময় সভা করেন আওয়ামী লীগের একাংশের নেতা-কর্মীরা। সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মিয়াজান আলী, সহসভাপতি ইয়ারুল ইসলাম, সহসভাপতি জিয়াউদ্দিন বিশ্বাস, সদর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি গোলাম রসুল, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান, যুগ্ম আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম, সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল মান্নান প্রমুখ বক্তব্য দেন।