সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত তানাজ জিপিএ-৫ পেয়েছে, পরিবারে কান্নার রোল
শেরপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল মাশুরা মোকাদ্দেস তানাজ (১৬)। দেড় মাস আগে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে সে। ওই দুর্ঘটনায় তার ছোট ভাই আনাছ আহনাফও (২) মারা যায়। গতকাল রোববার প্রকাশিত এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায়, জিপিএ-৫ পেয়েছে তানাজ। ফল জানার পর থেকে তানাজের পরিবারে কান্নার রোল পড়ে গেছে।
তানাজ কুয়েতপ্রবাসী মোকাদ্দেসুর রহমান তোরাব ও মনিরা বেগম দম্পতির মেয়ে। মোকাদ্দেসুর কয়েক মাস হলো দেশে এসেছেন। তাঁদের গ্রামের বাড়ি শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার চরশিমুলচড়া গ্রামে। তবে বর্তমানে তাঁর পরিবার শেরপুর শহরের নওহাটা এলাকার বাড়িতে বসবাস করে। এই দম্পতির তিন মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে সবার বড় তানাজ। দ্বিতীয় সন্তান রিতাজ (১৩) শেরপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ছে। তৃতীয় সন্তান লিজা (৯) একটি মাদ্রাসায় তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ছে। সবার ছোট আহনাফ আনাছ (২) বড় বোন তানাজের সঙ্গেই চলে গেছে না ফেরার দেশে।
সড়ক দুর্ঘটনায় আহত তানাজের মা মনিরা বেগম এখনো পুরোপুরি সেরে ওঠেননি। অসুস্থ অবস্থায়ই মেয়ে ও ছেলের কথা মনে করে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন। আর বারবার মেয়ে তানাজ ও ছেলে আহনাফের কথা বলছিলেন।
পরিবারের সদস্যরা জানান, গত ৩১ মার্চ ময়মনসিংহের তারাকান্দায় মাইক্রোবাস ও একটি যাত্রীবাহী বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে মারা যায় তানাজ ও আনাছ। একই দুর্ঘটনায় তাদের মা–বাবা মোকাদ্দেসুর রহমান, মনিরা বেগমসহ আরও কয়েকজন আহত হন।
আজ সোমবার দুপুরে শহরের নওহাটা এলাকায় মাশুরাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পুরো বাড়িতে সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত তানাজের মা মনিরা বেগম এখনো পুরোপুরি সেরে ওঠেননি। অসুস্থ অবস্থায়ই মেয়ে ও ছেলের কথা মনে করে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন তিনি। আর বারবার মেয়ে তানাজ ও ছেলে আহনাফের কথা বলছিলেন। এ সময় মনিরা বেগমের মা কামরুন্নাহার ও স্বজনেরা মনিরাকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন।
অন্যদিকে মেয়ের ছবি, এসএসসি পরীক্ষার প্রবেশপত্র ও স্কুলের পরিচয়পত্র বের করে অশ্রুসিক্ত চোখে বারবার হাত বুলিয়ে দেখছেন বাবা মোকাদ্দেসুর রহমান। মেয়েকে চিকিৎসক বানানোর স্বপ্ন ছিল তাঁদের। কিন্তু একটি সড়ক দুর্ঘটনা কেড়ে নিয়েছে তাঁদের সেই স্বপ্ন।
মোকাদ্দেসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার মেয়ের অনেক শখ ছিল, পরীক্ষার ফল বের হওয়ার পর মিষ্টি নিয়ে দাদার বাড়িতে (শ্রীবরদীর গ্রামের বাড়ি) যাবে। সবাইকে মিষ্টি খাওয়াবে। ওর ইচ্ছা ছিল, বড় হয়ে চিকিৎসক হবে। কিন্তু দুর্ঘটনায় সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে।’ মোকাদ্দেসুর জানান, পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর গতকাল বিকেলে শ্রীবরদীর চরশিমুলচড়া গ্রামের বাড়িতে গিয়ে ছেলে-মেয়ের কবর জিয়ারত করেন তিনি।
তানাজের নানা মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘৩১ মার্চ দুই সন্তানকে নিয়ে আমার মেয়ে, মেয়ের জামাই মিলে আমার মেজ ছেলে কুয়েতপ্রবাসী সোহাবুর রহমানকে আনতে ঢাকায় যাচ্ছিল। তারা হাসিখুশি মুখে ভোরবেলায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল। কিন্তু দুর্ঘটনায় আমার নাতি ও নাতনির জীবন চলে গেল। এ ঘটনার পর আমাদের পরিবার থেকে হাসি চলে গেছে। পরীক্ষায় তানাজের ভালো ফলের খবর শুনে পরিবারে এখন আনন্দের পরিবর্তে বিষাদের ছায়া নেমে এসেছে।’