রং ও দুধ চা দিয়ে শুরু, এখন ৩৫ প্রকারের চা বিক্রি করে স্বাবলম্বী গাইবান্ধার মোস্তাফিজুর
২০১৫ সালে এসএসসি পাস করেন মোস্তাফিজুর রহমান। অর্থাভাবে এরপর আর লেখাপড়া হয়নি। চাকরির খোঁজে ঢাকায় যান। কাজ শুরু করেন শাহবাগ এলাকার একটি চা–দোকানে। সেখানেই দোকানমালিক আলী হায়দারের কাছে চা বানানো শেখেন। ২০১৮ সালে বাড়ি ফিরে নিজেই চায়ের দোকান দেন। শুরুতে বিক্রি করতেন দুধ চা ও রং চা। দোকানের আয় দিয়ে সংসার চলত না। দুই মাস আগে নতুন উদ্যোমে দোকান শুরু করেন। চালু করেন ৩৫ প্রকারের চা বিক্রি।
নানা স্বাদের চা পান করতে এখন মোস্তাফিজুর রহমানের (৩০) দোকানে মানুষ ভিড় করছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তাঁর সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতি মাসে আয় করছেন ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলা সদরের নুরপুর এলাকায় এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম মোস্তাফিজুরের। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় তিনি।
গাইবান্ধা শহর থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরে পলাশবাড়ী উপজেলা সদর। সদরের রাব্বির মোড়ে মসজিদ–সংলগ্ন মোস্তাফিজুরের চায়ের দোকান। দোকানটি সকাল ১০টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত খোলা থাকে। শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) বিকেলে সরেজমিনে দেখা গেছে, চা বানাতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন মোস্তাফিজুর। দুই কর্মচারী তাঁকে সহায়তা করছেন। দোকানে টাঙানো ব্যানারে নানা প্রকার চায়ের নাম ও মূল্য দেওয়া রয়েছে। ক্রেতারা তালিকা দেখে পছন্দমতো চায়ের অর্ডার করছেন। কেউ কেউ চা পান করছেন। কেউ কেউ অপেক্ষা করছেন।
কাচ, সিরামিক ও মাটির কাপে চা বিক্রি করছেন মোস্তাফিজুর। দাম পাঁচ টাকা থেকে শুরু করে ৭০ টাকা পর্যন্ত। এর মধ্যে স্পেশাল খেজুর গুড়ের চা, স্পেশাল গাওয়া চা, মালাই চা ও ভ্যানিলা চা, মটকা চা, মরিচ, তেঁতুল, মাল্টা ও চকলেট চা, হরলিক্স চা, দুধ চা, লাল চা, জিঞ্জার চা, মেডলি বক্স, বিভিন্ন ধরনের গ্রিন টি, মসলা চা উল্লেখযোগ্য। মিল্ক কফি, ব্ল্যাক কফি, ক্যাপাচিনো কফি এবং ব্রাউন কফিও পাওয়া যায় মোস্তাফিজুরের মাইশা টি স্টলে।
দোকানে চা পান করতে আসা পলাশবাড়ী উপজেলা সদরের ব্যবসায়ী সুরুজ হক বলেন, ‘আমরা নিয়মিত এখানে চা খেতে আসি। এখানে চায়ের গুণগত মান অত্যন্ত ভালো। মোস্তাফিজুর অনেক সুন্দর করে চা বানিয়ে দেন। তাঁর বানানো চা খেলে ভালো লাগবে।’ গাইবান্ধা শহরের সুখনগর এলাকার কলেজছাত্র জিসান মাহমুদ বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখে এখানে চা খেতে এসেছি। মরিচ ও তেঁতুল চা খেলাম। অসাধারণ স্বাদ পেলাম। ভালো লাগল।’
মোস্তাফিজুর রহমান শুরুতে পলাশবাড়ী উপজেলা সদরে মহাসড়কের পাশে হাইস্কুল মার্কেটে চায়ের দোকান দিয়ে শুরু করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ব্যবসা করে দেখলাম। মানুষ ব্যতিক্রম কিছু চায়। তাই অনেক চিন্তাভাবনা করে এই ব্যবসা শুরু করি। সফলও হয়েছি।’ এখনো নিজের দোকান নেই উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘আপাতত ফুটপাতে ব্যবসা চালাচ্ছি। নিজের দোকান নেওয়ার মতো সামর্থ্য নেই। সরকারিভাবে ঋণ বা কোনো সহযোগিতা পেলে ব্যবসাটা বাড়িয়ে নিতে পারতাম।’
মোস্তাফিজুর রহমানের বাবা আবু বক্কর সিদ্দিক। মা মোর্শেদা বেগম গৃহিণী। নুরপুর এলাকায় কয়েক শতক বসতভিটা ছাড়া তাঁর কোনো সহায়-সম্পদ নেই। আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ছেলের পরিশ্রমের কারণে সংসারে আর অভাব নেই। দুই ছেলের লেখাপড়ার খরচসহ সংসারের যাবতীয় খরচ দোকান থেকে চালানো হচ্ছে।
মোস্তাফিজুরের মেজ ভাই মোকাব্বর রহমান স্নাতক শ্রেণিতে পড়ছেন। সবার ছোট আবদুল মোত্তালিব এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী। দুই ভাই মোস্তাফিজুর রহমানের চায়ের দোকানের কাজে সহায়তা করেন। মোস্তাফিজুরের স্ত্রী শাপলা বেগমও স্বামীকে সহযোগিতা করেন। তিনি বলেন, ‘বাড়ির কাজের পাশাপাশি দোকানের দুধ জ্বাল করাসহ অন্যান্য কাজে সহযোগিতা করছি। তাকে উৎসাহ দিচ্ছি।’