‘মেয়ে বলেছিল, মা ঘন ডাল রান্না করিস, বাড়িতে আসে খাব। আমি ওর জন্য মাছ আর ঘন ডাল রান্না করেছিলাম। পরে শুনি আমার মা-টা আর নাই। ঘন ডাল আমার মায়ের খুব পছন্দ। আজকে ওর ধর্ম পরীক্ষা ছিল। সকালে তিন ভাইবোন একসঙ্গে খিচুড়ি খেয়েছে। সাইকেল নিয়ে প্রতিদিন স্কুলে যায়। আজকে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর শুনি আমার বুকের ধন মারা গেছে।’
আজ রোববার বিকেলে বাড়ির উঠানে বসে এভাবেই আহাজারি করছিলেন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত স্কুলছাত্রী তিথি রানীর মা কনিকা ঘোষ। স্বজনদের কেউ কেউ তাঁর পাশে বসে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। পাশেই বাক্রুদ্ধ হয়ে বসে ছিলেন বাবা পরেশ চন্দ্র ঘোষ। বাড়ির অদূরে শ্মশানে দাহ হচ্ছিল তিথি রানীর মরদেহ।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার ডুকরে কেঁদে ওঠেন কনিকা ঘোষ। বলছিলেন, ‘মা-টার জন্ম হয়েছিল রোববারে আবার চলেও গেল রোববারে। জন্মের দিন বৃষ্টি হয়েছিল, আজকেও বৃষ্টি হলো। আমার কলিজাটাক রাখে ভগবান আমাকে ক্যান নিয়া গেল না। সারা জীবনের জন্য বিদায় নিল আমার মা। আমি এই কষ্ট কীভাবে সহ্য করব?’
আজ সকালে স্কুলড্রেস পরে বাইসাইকেলে স্কুলে যাচ্ছিল তিথি রানী। বাড়ির পাশে কাঁচা রাস্তা থেকে পাকা সড়কে ওঠার সময় একটি মোটরসাইকেল তাকে ধাক্কা দেয়। শিশুটি সড়কের ওপরে পড়ে গেলে দ্রুতগতিতে আসা একটি থ্রি-হুইলার (পাগলু) তার ওপর দিয়ে চলে যায়। স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথেই শিশুটি মারা যায়। সকাল সোয়া ৯টার দিকে পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার ধামোর ইউনিয়নের জুগিকাটা এলাকায় পঞ্চগড়-আটোয়ারী সড়কে মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত তিথি রানী আটোয়ারী উপজেলার ধামোর ইউনিয়নের জুগিকাটা এলাকার পরেশ চন্দ্র ঘোষের মেয়ে। সে গোয়ালপাড়া বিউটিফুল মাইন্ড কিন্ডারগার্টেনের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী ছিল।
পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের চিকিৎসক মো. রহিমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা শিশুটিকে মৃত অবস্থায় পেয়েছি। সে মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছিল। মাথার বাইরে রক্তক্ষরণের সঙ্গে ইন্টারনাল রক্তক্ষরণে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।’
বিকেলে জুগিকাটা এলাকায় তিথিদের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, স্বজনদের ভিড়। বাড়ির অদূরে শ্মশানে দাহ করা হচ্ছে তিথির মরদেহ। উঠানে বসে আহাজারি করছেন মা কনিকা ঘোষ। পাশেই বাক্রুদ্ধ হয়ে বসে আছেন বাবা পরেশ চন্দ্র ঘোষ। স্বজনেরা মায়ের মাথায় হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দিচ্ছেন।
স্বজনেরা জানান, দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে তিথি দ্বিতীয়। তিথির বড় বোন স্থানীয় একটি কলেজে উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্রী আর ছোট ভাই স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। তিথির বাবা পরেশ চন্দ্র ঘোষ মৌসুমি ব্যবসায়ী। সাইকেল চালাতে শেখায় মেয়ের স্কুলে যাওয়ার সুবিধার জন্য বছরখানেক আগে একটি বাইসাইকেল কিনে দিয়েছিলেন তিনি।