২০০৮ সাল থেকে ফরিদপুরে কোনো রাজনীতি ছিল না: আবদুর রহমান
২০০৮ সাল থেকে ফরিদপুরে কোনো রাজনীতি ছিল না বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান। তিনি বলেছেন, যাঁরা রাজনীতি করেছেন বা করতে চেয়েছেন, তাঁদের তা করতে দেওয়া হয়নি। আরেক দল ছিল যারা সব সুযোগ–সুবিধা পেয়ে রাজনীতি করেনি, লুটপাট করেছে। এই দুইয়ের সংঘাতে ফরিদপুরে রাজনীতি ছিল একেবারে অনুপস্থিত।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এই মন্তব্য করেন। শহরের গোয়ালচামট এলাকার হাজরাতলার মোড়ে অবস্থিত একটি হোটেলের মিলনায়তনে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই পরিস্থিতির জন্য তিনি ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনের সাংসদ সাবেক মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফকে দুষছেন। তবে সভায় বক্তৃতায় তিনি সাংসদ মোশাররফের নাম উল্লেখ করেননি। আবদুর রহমান ফরিদপুর-১ আসনের সাবেক সাংসদ।
আবদুর রহমান বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি ফরিদপুর-১ (বোয়ালামারী, আলফাডাঙ্গা, মধুখালী) আসন থেকে এক লাখ পাঁচ হাজার ভোটে নিবাচিত হন। এত ব্যবধানে নির্বাচিত হয়ে তিনি যেন অপরাধ করে ফেলেছিলেন। আর এই অপরাধের কারণে তিনি ফরিদপুর শহরে ঢুকতে পারেননি। তাঁর যখন সংসদীয় এলাকায় যেতে হতো তখন ফরিদপুর শহরের রাজবাড়ী রাস্তার মোড় পার হতেন, তখন বাঁ দিকে চোখ দিয়ে তাকাতেও পারেননি, তাঁকে ডান দিকে তাকিয়ে এলাকায় যেতে হয়েছে।
আবদুর রহমান বলেন, ‘আল্লার মাইর দুনিয়ার বাইর, অর্থাৎ যে যতটুকু পানিতে নামবেন, তাঁকে ততটুকু ভিজতে হবে। এ থেকে নিস্তার নেই।’
ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবল চন্দ্র সাহার বাড়িতে ২০২০ সালের ১৬ মে রাতে দুই দফা হামলার ঘটনা ঘটে। ওই হামলার ঘটনায় ২০২০ সালের ৭ জুন পুলিশের বিশেষ অভিযানে সাবেক মন্ত্রী ও ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনের সাংসদ খন্দকার মোশাররফের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে আলোচিত দুই ভাই সাজ্জাদ হোসেন ওরফে বরকত এবং ইমতিয়াজ হাসান ওরফে রুবেলসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর এক দিন পর ৯ জুন ঢাকা চলে যান খন্দকার মোশাররফ। এর পর থেকে জেলা আওয়ামী লীগের নেত্রীরা খন্দকার মোশাররফের অপরাজনীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে শুরু করেন।
সাংসদ মোশাররফকে সমালোচনা করে জেলা আওয়ামী লীগের নেত্রীরা বিভিন্ন সময়ে বক্তব্য দিলেও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কোনো নেতাকে প্রকাশে এ ব্যাপারে মুখ খুলতে আগে দেখা যায়নি। আবদুর রহমানই প্রথম কেন্দ্রীয় নেতা, যিনি মোশাররফের ব্যাপারে কোনো সভায় বক্তব্য দিলেন।
সভায় আবদুর রহমান বলেন, ‘আপনারা অনেকে বলেছেন, ২০০৮ সালে ফরিদপুর-৩ আসনে নৌকাকে জিতাইছেন অনেক কষ্ট কইরা। আমি বলি, ২০০৮ সালেও আপনারা জেতেননি। যদি বলেন, কেন? আমি বলব—সে বছর জামায়াত নেতা মুজাহিদ ছিলেন এ আসনে চারদলীয় জোটের প্রার্থী। বিএনপির চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৮৪ হাজার ভোট পান। দুই ভোট যদি এক হইতো তাহলে আপনাদের অবস্থা কী হইতো তা আপনারা একটু চিন্তাভাবনা করেন।’
মঞ্চের সামনের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে আবদুর রহমান বলেন, ‘আপনারা দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত নেতা ও কর্মী। এই সম্মেলনে আপনাদের যথাযথ মূল্যায়ন হবে। সাবেক ছাত্রনেতাদের জেলা আওয়ামী লীগে পদ দেওয়া হবে। আমি নিজে এ কাজ বিভিন্ন জায়গার সম্মেলনে মনিটরিং করেছি। এখানেও তা–ই হবে।’ তিনি বলেন, সাবেক ছাত্রনেতা, উঠতি নেতাদের প্রতি বিনীত প্রার্থনা, আবার কেউ টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কাজে যুক্ত সে কথা যেন দয়া করে তাকে শুনতে না হয়।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবল চন্দ্র সাহার সভাপতিত্বে বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য ফারুক হোসেন।
শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে এ বর্ধিত সভা শুরু এবং ইফতারের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। আবদুর রহমান পৌনে তিনটার দিকে ছাদ খোলা একটি গাড়িতে করে ছাত্রলীগের বড় আকারের একটি মোটরসাইকেলের শোভাযাত্রার সঙ্গে সভাস্থলে এসে পৌঁছান।