শসার জন্য প্রসিদ্ধ ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা। শৈলকুপার মদনডাঙ্গা শসার বড় পাইকারি বাজার। এই বাজারে গতকাল মঙ্গলবার প্রতি কেজি শসা ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন কৃষকেরা। এখান থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে ঝিনাইদহ শহরের সবজি বাজারে প্রতি কেজি শসা ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। একইভাবে মদনডাঙ্গার আড়তে ২৫ টাকা কেজির ক্ষীরা জেলা শহরে ৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতিদিন সকালেই মদনডাঙ্গাসহ পাশের বাজারগুলো থেকে শসা ও ক্ষীরা চলে আসে ঝিনাইদহ শহরে। জেলা শহরে এগুলো আনতে খরচ হয় কেজিতে ৩ টাকা। অথচ খুচরা বাজারে কেজিতে প্রায় দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। তাঁদের দাবি, বাজারে এখনো শসা-ক্ষীরা তেমনটা আসছে না। তাই বিক্রির কোনো সঠিক মূল্য নেই। একেক দিন একেক দামে বিক্রি হচ্ছে।
কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহে প্রতিবছর ১০০ হেক্টরে শসা ও ক্ষীরার চাষ হয়। এ বছর ৪৫ হেক্টর জমিতে শসা, আর ৫০ হেক্টরে ক্ষীরার চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে শসা আর ক্ষীরা উৎপাদন হয় ১৮ মেট্রিক টন। সেই হিসাবে জেলায় ১ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন শসা ও ক্ষীরা উৎপাদিত হচ্ছে, যা পাইকারদের মাধ্যমে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় চলে যায়।
গতকাল সকালে সরেজমিনে মদনডাঙ্গা বাজারে কথা হয় গাড়াগঞ্জ এলাকার কৃষক সুজন খানের সঙ্গে। তিনি জানান, ১৩ শতক জমিতে ক্ষীরা, আর ১০ শতক জমিতে শসার চাষ করেছেন তিনি। গত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি শসা ও ক্ষীরার বীজ বপন করেন। নানা পরিচর্যার পর বিক্রি করতে শুরু করেছেন। ৪০ থেকে ৪৫ দিন পরিচর্যার পর শসা ও ক্ষীরা উঠতে শুরু করে। তিনি গত দুই দিনে কিছু শসা ও ক্ষীরা বিক্রি করেছেন। গতকাল ৩০ টাকা কেজি দরে ক্ষীরা, আর ৪০ টাকা কেজি দরে শসা বিক্রি করেছেন।
মদনডাঙ্গা বাজারে শসা বিক্রি করতে এসেছিলেন রানীনগর গ্রামের আমিরুল ইসলাম। তিনি জানান, ১৮ শতক জমিতে শসার চাষ করেছিলেন। এখন রমজান মাস চলছে। তারপরও ৩৫ টাকায় শসা বিক্রি করতে হয়েছে। এই দামে শসা বেচলে চাষের খরচই উঠে না। তাঁর অভিযোগ, এই শসা বাজারে খুচরা ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু তাঁরা উৎপাদন করে কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
মদনডাঙ্গা বাজার থেকে শসা আর ক্ষীরা কিনে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যান ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান। ৩৫ টাকার শসা ৬০ টাকায় বিক্রির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা এখান থেকে অল্প পণ্য কিনে ঝিনাইদহসহ পাশের বাজারগুলোতে নিয়ে যান। তাঁরা একটু বেশি লাভে বিক্রি করেন। তারপর খুচরা ব্যবসায়ীরা আরেক দফা লাভে সেগুলো বিক্রি করছেন। ফলে ৩৫ থেকে ৪০ টাকার শসার দাম ৬০ থেকে ৬৫ টাকা উঠছে।
দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে আড়তদারেরা খুচরা ব্যবসায়ীদের, আবার ব্যবসায়ীরা আড়তদারদের ওপর দোষ চাপান। ঝিনাইদহ শহরের কাঁচামাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোকাদ্দেস হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, কিছু ছোট পণ্য বিক্রি হতে চায় না। যে কারণে তাঁদের একটু বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। তবে তাঁরা কেজিতে ৫ টাকার বেশি লাখ করেন না।
খুচরা ব্যবসায়ী সোহেল রানা জানান, আড়ত থেকেই পাইকারি বেশি মূল্যে শসা কিনতে হচ্ছে। যে কারণে খুচরাও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ঝিনাইদহের সহকারী পরিচালক জিয়াউল হক প্রথম আলোকে বলেন, কাঁচা বাজারে তাঁরা কোনো ক্রয়-বিক্রয় রসিদ রাখেন না। যে কারণে বেশি মূল্যটা কে নিচ্ছে, সেটা নিশ্চিত করাটা মুশকিল। এ জন্য তাঁরা ক্রয়-বিক্রয় রসিদ রাখার বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ইতিমধ্যে আলাপ-আলোচনা করেছেন। এ বিষয়ে আরও বেশি তৎপরতা চালাবেন বলে আশ্বাস দেন তিনি।
ঝিনাইদহ শহরের মতো রাজধানী ঢাকা শহরেও প্রায় একই দামে শসা বিক্রি হতে দেখা গেছে। গতকাল কারওয়ান বাজারের খুচরা বিক্রেতা মো. ইব্র্রাহিম জানান, দেশি শসা তিনি ৬০ টাকা, হাইব্রিড শসা ৫০ টাকায় বিক্রি করছেন।