স্মৃতিস্তম্ভ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে দিনাজপুরের ইয়াসমিন
আজ ২৪ আগস্ট। ১৯৯৫ সালের এই দিনে ধর্ষণের পর হত্যার শিকার দিনাজপুরের কিশোরী ইয়াসমিনের লাশ ফেলে রাখা হয়েছিল মহাসড়কের পাশে। পরের বছর থেকে তার স্মরণে এই দিনে পালন করা হয় নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস। তার স্মরণে দিনাজপুরের দশমাইল এলাকায় ২০০১ সালের জানুয়ারিতে জেলা পরিষদের অর্থায়নে নির্মিত হয় শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ ইয়াসমিন যাত্রীছাউনি ও পাঠাগার। সেগুলোর অবস্থা এখন বেহাল।
গতকাল সোমবার সকালে দশমাইল এলাকায় স্মৃতিস্তম্ভ যাত্রীছাউনি ও পাঠাগার ভবনটিতে গিয়ে দেখা যায়, যাত্রীছাউনিতে কোনো যাত্রী নেই। নিচতলায় হলরুমের মতো জায়গাটায় সিগারেটের উচ্ছিষ্ট আর ধুলাময়লা। দ্বিতল ভবনে ওঠার সিঁড়ির গোড়ায় কলাপসিবল গেটে ঝুলছে তালা। সিঁড়ির নিচে জমে আছে ময়লা পানি ও আবর্জনা। তার পাশেই ছোট একটি কক্ষে পোস্ট অফিসের কার্যক্রম চলছে। ভবনের সামনের অংশ দখলে নিয়েছেন ফল ব্যবসায়ীরা।
ভবনটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে ভবনের দ্বিতীয় তলায় পাঠাগার চালু করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত সাখাওয়াত হোসেন সরকার। প্রতিবছর ২৪ আগস্ট তাঁর উদ্যোগে ইয়াসমিন স্মরণে মিলাদ মাহফিল ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হতো। দু-একটি খবরের কাগজ রাখতেন তিনি। প্রায় সময় এসে সময় দিতেন সেখানে। প্রায় তিন বছর আগে তাঁর মৃত্যুর পর থেকে অবহেলিতই থেকে গেছে পাঠাগারটির কার্যক্রম।
প্রয়াত সাখাওয়াত হোসেনের স্ত্রী স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য উম্মে জহরত বলেন, তাঁর স্বামীর প্রচেষ্টায় দিনাজপুর সদর আসনের সাবেক সাংসদ প্রয়াত এম আবদুর রহিমের সহযোগিতায় এই যাত্রীছাউনি ও পাঠাগার নির্মাণ করা হয়েছিল। স্বামীর মৃত্যুর পর পাঠাগারটির কার্যক্রম নেই। ভবনটিও দখল হওয়ার পথে। পাঠাগারটি সঠিকভাবে পরিচালনা করতে জেলা পরিষদসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
ভবনের সামনে দখলে নেওয়া ফল ব্যবসায়ীরা পাঠাগার সম্পর্কে বলতে পারেন না কিছুই। ফল ব্যবসায়ীদের একজন বলেন, ভবনের দ্বিতীয় তলায় যে কী হয়, কী আছে; তাঁরা তা জানেন না। কোনো দিন খুলতেও দেখেননি। কাউকে আসতে দেখেননি এখানে।
দশমাইল এলাকার ওষুধ ব্যবসায়ী আবু বেলাল চৌধুরী বলেন, ভবন প্রতিষ্ঠার পর কয়েক বছর পাঠাগারটিতে স্থানীয় তরুণ-যুবকদের যাতায়াত ছিল। তারপর ১০-১২ বছর ধরে কোনো কার্যক্রম নেই।
এদিকে ইয়াসমিন স্মরণে আজ মঙ্গলবার সকালে দশমাইল এলাকায় দেশব্যাপী ধর্ষণ, হত্যা, নির্যাতন প্রতিহত করা এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতির বিরুদ্ধে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন জেলা মহিলা পরিষদের সদস্যরা। সংগঠনের সভাপতি কানিজ রহমান বলেন, ইয়াসমিন হত্যার ঘটনা দেশের মানুষের চেতনাকে নাড়া দিয়েছিল। কিন্তু এখনো দেশে প্রতিনিয়ত ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা ঘটছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি চলছে দেশে। ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিটি ঘটনার বিচার তিনি দ্রুত বিচার আইনে করার দাবি জানান।
জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুল ইমাম চৌধুরী বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে পাঠাগারটি চালু এবং অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।