শুধু টিকা নিয়ে ঘাপলা নয়, স্ত্রীর হয়ে ‘হাজিরা দিতেন’ পটিয়ার ওই স্বাস্থ্যকর্মী
চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ইপিআই) মো. রবিউল হোসেনের বিরুদ্ধে টিকাকরণে অনিয়মসহ নানা বিষয়ে আগেই অভিযোগ উঠেছিল। এর মধ্যে রয়েছে তাঁর স্ত্রী স্বাস্থ্য সহকারী কুলসুমা আকতার অনুপস্থিত থাকলে তিনি নিজেই হাজিরা দিয়ে দেন। মাসখানেক আগে ঊর্ধ্বতনের কাছে লিখিতভাবে এসব অভিযোগ করেছিলেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কর্মকর্তা (ইউএইচএফপি)। কিন্তু ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
পরে গত শুক্র ও শনিবার সরকারি নির্দেশনা না মেনে আগেভাগে হুইপের ইউনিয়ন পটিয়ার শোভনদণ্ডীতে টিকাকরণ করেন তিনি। উপজেলার সব টিকা তাঁর হেফাজতেই থাকে। ইউনিয়নে আগেভাগে দুই হাজার টিকাকরণের ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর বিষয়টির তদন্ত শুরু করেছে চট্টগ্রামের বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তর। প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে বলে তদন্ত–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।
রবিউল হোসেন দাবি করেছিলেন, হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর মৌখিক নির্দেশনায় তিনি শোভনদণ্ডী ইউনিয়নে টিকা দিয়েছেন। তবে হুইপ তাঁর নির্দেশের বিষয়টি সঠিক নয় বলে জানান। এর আগেও রবিউলের বিরুদ্ধে নানা স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ আনা হয়েছিল। এর মধ্যে গুরুতর অভিযোগ হচ্ছে, তাঁর স্ত্রী স্বাস্থ্য সহকারী কুলসুমা আকতার অনুপস্থিত থাকলেও হাজিরা খাতায় স্ত্রীর স্বাক্ষর তিনি নিজে করে দেন। স্ত্রী আগে চন্দনাইশ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত ছিলেন। ২০১৯ সালে তিনি পটিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি হয়ে আসেন।
তবে জানতে চাইলে কুলসুমা আকতার বলেন, ‘এগুলো ষড়যন্ত্রমূলক। আজ আমার স্বামীর বিরুদ্ধে একটা অভিযোগ উঠেছে বলেই যার যেমন ইচ্ছে নিউজ করছে। আমার হাজিরা স্বামী দেয় বলা হচ্ছে, সেটাও ষড়যন্ত্রমূলক।’
রবিউলের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য সহকারীদের টিকাসংক্রান্ত ইনজেকশন, সিরিঞ্জ দিতে হয়রানি করা ও বিভিন্ন প্রশিক্ষণে স্বাস্থ্য সহকারীদের ভাতা দিতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে কেটে রাখা বা দেরিতে দিয়ে হয়রানি করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। পাশাপাশি উপজেলা হাসপাতালে এসে কেউ করোনার টিকার নিবন্ধনে সহযোগিতা চাইলে বা টিকা দেওয়ার সময় মানুষকে হয়রানি এবং টাকা নেওয়ার অভিযোগও আছে। এ ছাড়া রবিউল ঠিকাদারদের কাছ থেকে অনৈতিকভাবে চাঁদা দাবি করেন বলেও লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
এক মাসের বেশি সময় আগে ইউএইচএফপি সব্যসাচী নাথ এ বিষয়গুলো বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ও সিভিল সার্জনকে অবহিত করেন। পরে লিখিতভাবে তাঁদের জানানো হয়েছিল। সব্যসাচী নাথ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি যোগ দিয়ে কিছু অনিয়মের অভিযোগ ঊধ্বর্তনদের জানিয়েছিলাম। ওই সবের ব্যবস্থা নেওয়ার আগেই ইউনিয়ন পর্যায়ে এই অনাকাঙ্ক্ষিত টিকাদানের বিষয়টি ঘটিছে। আগেভাগে টিকাদানের জন্য তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়।’
রবিউলের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, রবিউলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল। সেসবও আলোচনায় ছিল। তবে অতটা গুরুতর কিছু নয়।
অভিযোগ অস্বীকার করে রবিউল বলেন, তিনি কখনো কারও কাছ থেকে চাঁদা বা টিকাকরণের জন্য টাকা নেননি।
রবিউল হোসেন পটিয়া কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। তাঁর বাড়ি পটিয়ার সাংসদ ও হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর একই ইউনিয়ন শোভনদণ্ডীতে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক কর্মচারী বলেন, রবিউল সব সময় হাসপাতালে প্রভাব খাটান। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পাত্তা দেন না।
রবিউলের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক হাসান শাহরিয়ার কবীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগেও অভিযোগ পেয়েছিলাম। এ জন্য মৌখিকভাবে সতর্ক করা হয়েছে। তবে সে কাজের লোক। আবার কাজ করতে গিয়ে যদি সরকারি সিদ্ধান্ত বা ঊর্ধ্বতনকে না মানে, তা হলে তো হবে না। তাই নানা বিষয় নিয়ে এই কমিটি করা হয়।’
তিন সদস্যের কমিটির আজ সোমবার রাতে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। তদন্তে নির্দেশনা না মেনে অবৈধভাবে টিকাদানের বিষয়টি প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে বলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।