সিলেটে বন্যার পানি নেমে গেছে, পাঠদান শুরু
সিলেটে বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়া স্কুল-কলেজ থেকে পানি নেমে গেছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা শেষে এখন পুরোদমে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত বেঞ্চ, চেয়ার ও টেবিল সংস্কারে দ্রুত বরাদ্দ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা।
একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান জানিয়েছেন, শ্রেণিকক্ষে পাঠদান কার্যক্রম শুরু হওয়ায় শিক্ষার্থীরা স্কুলে ফিরেছে। সপ্তাহখানেকের বেশি সময় ধরে প্রতিষ্ঠানগুলো বন্যার পানিতে প্লাবিত থাকায় অনেক আসবাব ও বই ভিজে নষ্ট হয়েছে। এ অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত আসবাব সংস্কার করা প্রয়োজন।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় মোট ১ হাজার ৪৭৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। এর মধ্যে ৪১৫টি বিদ্যালয় পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সেগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। বন্যায় বিদ্যালয়ের ভবন, আসবাব, বই, খেলার মাঠসহ অনেক কিছু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টাকার অঙ্কে ক্ষতির পরিমাণ ১ কোটি ৫১ লাখ ৮৪ হাজার টাকা।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাখাওয়াত এরশাদ প্রথম আলোকে বলেন, আজ সোমবার জেলার সব কটি বিদ্যালয়েই শ্রেণিকক্ষে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। যখন যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পানি নেমেছে, তখনই পাঠদান উপযোগী পরিবেশ তৈরি করে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। এখন সব কটি বিদ্যালয়েই পাঠদান চলছে।
এদিকে জেলায় প্লাবিত হওয়া উচ্চবিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও কলেজ থেকেও পানি নেমে যাওয়ায় পাঠদান শুরু হয়েছে। জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় মোট ৬০৭টি উচ্চবিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসা আছে। এর মধ্যে বন্যাকবলিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১২২। তবে ৮৫টি প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ ছিল। এর বাইরে ২৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় সেখানেও পাঠদান বন্ধ ছিল। বন্যায় প্লাবিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মোট ৩ কোটি ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবু সাঈদ মো. আবদুল ওয়াদুদ প্রথম আলোকে বলেন, বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় পুনরায় পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সর্বশেষ গত শনিবার বন্যায় বন্ধ থাকা বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু হয়েছে। যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন পাঠানো হয়েছে। নিশ্চয়ই এসব সংস্কারে দ্রুততম সময়ের মধ্যে উদ্যোগ নেওয়া হবে। আগামী ৫ জুন থেকে বিদ্যালয়গুলোতে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া শুরু হবে। এখন প্রস্তুতি চলছে।
বন্যায় প্লাবিত হয়েছিল জেলার কোম্পানীগঞ্জ থানা সদর সরকারি মডেল উচ্চবিদ্যালয়। পানি নামার পর গত বৃহস্পতিবার থেকে বিদ্যালয়টিতে পুনরায় পাঠদান শুরু হয়েছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শংকর চন্দ্র দাশ জানান, তাঁদের বিদ্যালয়ে ৬১৮ জন শিক্ষার্থী আছে। বন্যার পানি বাড়িঘর থেকে এখনো পুরোপুরি না সরায় শতভাগ শিক্ষার্থী উপস্থিতি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। গড়ে ৬৭ শতাংশ শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে উপস্থিত হচ্ছে বলে তিনি জানান।
শংকর চন্দ্র দাশ প্রথম আলোকে বলেন, বন্যার পানিতে তাঁর প্রতিষ্ঠানের মেঝে ফেটে গেছে। বেশ কয়েকটি দরজাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে অন্তত ৮–১০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সুষ্ঠু পাঠদানের জন্য দ্রুততার সঙ্গে এসব সংস্কার করা জরুরি হয়ে পড়েছে।