রংপুরে বিপৎসীমার নিচে তিস্তার পানি, রাতে বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা
রংপুরে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে নেমে এসেছে। গতকাল শুক্রবার রাতে পানি বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। আজ শনিবার সকাল ৯টায় রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার তিস্তা পয়েন্টে পানি দশমিক ২০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে রাতের দিকে আবারও পানি বৃদ্ধির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) রংপুর কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমা ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার। সেখানে আজ সকাল ছয়টায় ৫২ দশমিক ৪৫ সেন্টিমিটার দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে। একই স্থানে সকাল নয়টায় পানি আরও কমে ৫২ দশমিক ৩৫ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হয়। সেই সঙ্গে জেলার কাউনিয়া উপজেলার তিস্তা পয়েন্টে সকাল ছয়টায় পানি প্রবাহিত হয়েছে ২৮ দশমিক ৯৭ সেন্টিমিটার দিয়ে। সেখানে বিপৎসীমা ২৯ দশমিক ২০ সেন্টিমিটার। সকাল নয়টায় এই পয়েন্টে পানি একটু বেড়ে ২৯ সেন্টিমিটার হয়েছে।
পাউবোর রংপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবিব গণমাধ্যমে পাঠানো বন্যা পূর্বাভাসের সর্বশেষ তথ্যে জানান, তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বাড়তে পারে।
এদিকে তিস্তার তীরবর্তী রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের চরাঞ্চলের মানুষ পানিবন্দী হওয়ার শঙ্কায় নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন। বন্যাকবলিত এলাকার বাসিন্দারা জানান, তিস্তার পানি কখনো বাড়ছে, কখনো কমছে। আশঙ্কা হচ্ছে, আজ রাতের যেকোনো সময় পানি বাড়তে পারে। আজ চরে পানি উঠতে শুরু করলেও দুপুরের দিকে পানি কিছুটা কমে যায়। এ ছাড়া লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের শংকরদহ এলাকায় নদীভাঙন দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নদীভাঙনের কারণে ইতিমধ্যে ঘরবাড়ি ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে কিছু কিছু পরিবার। লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের শংকরদহ গ্রামের চান মিয়ার ৪০ শতাংশ আবাদি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘বানের পানি কখনো কমে, কখনো বাড়ে। শেষমেশ যে কী হইবে, বলা যাইতোছে না।’ একই গ্রামের চান মিয়ার ৫০ শতাংশ আবাদি জমি নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘এবারের বন্যার ধরন একটু আলাদা। কখন যে পানি হঠাৎ বাড়ি যায়, সেইটায় ভয় লাগে।’
লক্ষ্মীটারী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল্লাহেল হাদী বলেন, ভারতের উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢল নেমে আসছে। পানিবন্দী অবস্থা থেকে মানুষকে উদ্ধারের জন্য ইউনিয়ন পরিষদের একমাত্র নৌকাটি ব্যবহার করা হচ্ছে।
এদিকে কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনা, উত্তর চিলাখাল, সাউথপাড়া, মটুকপুরসহ চার গ্রামের ৫০০ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। অনেকেই বাড়িঘর ছেড়ে শুকনা স্থানে ছুটে গেছেন বলে ইউপি সূত্রে জানা গেছে। এ ছাড়া গজঘণ্টা ইউনিয়নের ছালাপাক, মহিষাসুর, রমাকান্ত, আলালচর, জয়দেব এলাকা এবং নোহালী ও আলমবিদিতর ইউনিয়নের অনেকে পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।
পাউবোর রংপুর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রাতে পানি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। পানির স্রোতের কারণে তিস্তা ব্যারাজের সব কটি (৪৪টি) জলকপাট খুলে রেখে সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সতর্কাবস্থায় থাকতে বলা হয়েছে।