২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

ভরা মৌসুমে আরও বাড়ল চালের দাম

প্রতিবছর এই সময় বাজারে চালের দাম কম থাকে। এবার চিত্র উল্টো। তদারকি বাড়ানোর তাগিদ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের।

চাল
ফাইল ছবি

চলতি মাসের শুরুতে একজন ক্রেতা যে দামে চাল কিনেছেন, মাসের শেষে এসে চাল কিনতে গেলে তাঁকে বড় ধাক্কাই খেতে হবে। কারণ, তিন সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে সব ধরনের চালের দাম অনেকটা বেড়েছে। সর্বশেষ গত এক সপ্তাহে চালের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি দুই থেকে পাঁচ টাকা। সব মিলিয়ে তিন সপ্তাহে চালের দাম বেড়েছে পাঁচ থেকে আট টাকা।

দেশে এখন চলছে বোরো ধানের ভরা মৌসুম। প্রতিবছর এই সময় চালের দাম কমতির দিকে থাকে। কিন্তু এবার চিত্র উল্টো, যা দেখে বিস্মিত বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আবদুর রশিদও। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার লাইফে (জীবনে) এই ভরা মৌসুমে এভাবে মিনিকেট চালের দাম বাড়তে দেখিনি। দাম বাড়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে, বড় ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্টরা (শিল্পপতিরা) হয়তো ধান ও চাল মজুত রেখেছে। এ ক্ষেত্রে তদারকি বাড়ানো দরকার।’

দেশের অন্যতম বড় চালের মোকাম নওগাঁ, কুষ্টিয়ার খাজানগর ও ঢাকার পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে চালের দাম বাজার চিত্র দেখা যায়। নওগাঁয় এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) চালের দাম ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেড়েছে। জেলার পার-নওগাঁ চাল মোকামের মোটা চাল (স্বর্ণা) কেজিপ্রতি ৪৬ টাকা, মাঝারি (বিআর-২৮, বিআর-২৯) ৪৮ টাকা, সরু চাল হিসেবে পরিচিত জিরা নন-শর্টার ৬০ টাকা, জিরা শর্টার (মিনিকেট) ৬৪ টাকা ও কাটারি নন-শর্টার ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাইকারিতে দাম বাড়ার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও। সেখানে প্রতি কেজি মোটা চাল তিন টাকা, মাঝারি দুই টাকা ও সরু চাল চার থেকে পাঁচ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।

কুষ্টিয়ার খাজানগর মোকামে গতকাল শনিবার কেজি প্রতি মিনিকেট চাল বিক্রি হয় ৬৩ থেকে ৬৪ টাকায়, যা গত ২৯ এপ্রিল ছিল ৫৬ টাকা। অপরদিকে রাজধানীর মিরপুর-১ নম্বর ও মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেট বাজারে গতকাল পাইকারিতে মোটা চাল ৪৭ থেকে ৪৮ টাকা ও মাঝারি চাল ৫০ থেকে ৫২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। আর মিনিকেট প্রতি কেজি ৬৫-৬৬ টাকা এবং নাজিরশাইল ৭৮-৮০ টাকায় বিক্রি হয় বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে খুচরা পর্যায়ে এক সপ্তাহ আগের চেয়ে কেজিপ্রতি তিন-চার টাকা বেশি দামে চাল বিক্রি করতে দেখা যায়। দাম বাড়ার পর গুটিস্বর্ণা প্রতি কেজি ৫৩-৫৪ টাকা, বিআর-২৮ চাল ৫৪-৫৫ টাকা, মিনিকেট ৬৮-৭০ টাকা এবং নাজিরশাইল ৮২-৮৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর মিরপুর-১ চাল আড়ত ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক হারুন-অর-রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, মিল পর্যায়ে চালের দাম প্রতিনিয়ত বাড়ছে। চালের চাহিদা জানিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকার চালকলে ফোন করলেই মালিকেরা বাড়তি দামের কথা শুনিয়ে দিচ্ছেন।

চালকল মালিকেরা বলছেন, ধানের দাম বাড়ার কারণে চাল উৎপাদনের খরচও বেড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রকারভেদে প্রতি মণ ধানের দাম ৮০ থেকে ২০০ টাকা বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। নওগাঁর অন্যতম বড় ধানের বাজার পত্নীতলা উপজেলার মধুইল বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতি মণ (৪০ কেজি) জিরা ধান মানভেদে (শুকনা ও ভেজা ধান) বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩৪০ থেকে ১ হাজার ৩৬০ টাকায়।

মধুইল বাজারের ধানের আড়তদার আমিনুল ইসলাম বলেন, এবার পাকা ধান কাটার আগমুহূর্তে প্রচুর বৃষ্টির কারণে খেতেই ধানের একটা অংশ নষ্ট হয়েছে। চাল ব্যবসায়ীদের মধ্যে বেশি ধান কেনার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। ফলে প্রতিদিনই ধানের দাম বাড়ছে।

বাজারে এখন ডাল, তেল, চিনিসহ প্রায় সকল নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য পণ্য ও সাবান, টুথপেস্টসহ নিত্যব্যবহার্য পণ্যের দাম চড়া। এ অবস্থায় চালের মূল্যবৃদ্ধি বিপাকে ফেলছে মানুষকে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা]