বিল বাকি, বিদ্যুতের অভাবে পড়ে আছে পানি শোধনাগার
৪ কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে পানি শোধনাগার। পৌরসভার বিল বাকি থাকায় বিদ্যুৎ-সংযোগ দিচ্ছে না বিদ্যুৎ বিভাগ।
ঝিনাইদহের মহেশপুর পৌরসভায় চার কোটির অধিক টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে পানি শোধনাগার। আশা ছিল পৌর এলাকার বাসিন্দাদের বিশুদ্ধ পানির চাহিদা মেটানোর। নির্মাণকাজও শেষ হয়েছে দুই বছর আগে, কিন্তু বিদ্যুৎ-সংযোগ না পাওয়ায় সেটি আর চালু করা যাচ্ছে না।
পশ্চিমাঞ্চল বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা (ওজোপাডিকো) বলছে, মহেশপুর পৌরসভার বিল বকেয়া থাকায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী নতুন কোনো সংযোগ দেওয়া হচ্ছে না। পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, বর্তমান পরিষদ চলমান বিল পরিশোধের পাশাপাশি বকেয়া বিলও দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কম আয়ের পৌরসভা হওয়ায় একসঙ্গে বকেয়া পরিশোধ করতে পারছে না।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মহেশপুর পৌর এলাকার ৯৬ নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের মাত্রা স্বাভাবিকেরে চেয়ে বেশি। দীর্ঘ দিন এ পানি পান করলে মারাত্মক রোগব্যাধি হতে পারে। তা ছাড়া পৌরসভার সরবরাহ করা পানিতে অতিমাত্রায় আয়রন থাকায় তা পানের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় পাইপলাইনের মাধ্যমে সুপেয় পানি সরবরাহের লক্ষ্যে আর্সেনিক ও আয়রন দূরীকরণ প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য মহেশপুর পৌরসভা একটি প্রকল্প নেয়। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ৪ কোটি ২৯ লাখ ৬৪ হাজার ৭৭৫ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২০১৭ সালের ৬ জুন প্রকল্পটির কাজ বাস্তবায়নে ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের তত্ত্বাবধানে ২০১৯ সালে কাজ শেষ হয়। মো. ইউনুছ অ্যান্ড ব্রাদার্স (প্রা.) লিমিটেড নামের চট্টগ্রামের এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি করেছে।
মহেশপুর পৌরসভার মেয়র আবদুর রশিদ খান জানান, বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের কারণে ওজোপাডিকো পৌরসভার সব ধরনের নতুন বিদ্যুৎ-সংযোগ প্রদান বন্ধ রেখেছে। ফলে তিনটি পাম্প হাউস ও ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে বিদ্যুৎ-সংযোগ তারা দিচ্ছে না। ফলে ঠিকাদার বিদ্যুৎ-সংক্রান্ত অবশিষ্ট কাজ শেষ করতে পারছেন না। প্ল্যান্টটি চালু না হওয়ায় যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ কারণে তাঁরা বিকল্প ব্যবস্থায় পরীক্ষামূলক চালুর চেষ্টা করছেন।
ওজোপাডিকো মহেশপুর কার্যালয়ের আবাসিক প্রকৌশলী সেকেন্দার হাসান জাহাঙ্গীর জানান, বিদ্যুৎ-সংযোগ নেওয়ার জন্য পৌরসভা থেকে আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু পৌরসভার কাছে তিন কোটির অধিক টাকা বকেয়া রয়েছে। এত টাকা বকেয়া রেখে কোনো ধরনের বিদ্যুৎ-সংযোগ না দেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ রয়েছে। কিছু বকেয়া দিয়ে আবেদন করলে পৌরবাসীর কথা চিন্তা করে কর্তৃপক্ষ বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে।
পৌর মেয়র আবদুর রশিদ খান বলেন, আগের পরিষদ বিল বকেয়া রেখে গেছেন, যা সুদ বেড়ে দুই কোটির অধিক হয়েছে। বর্তমান পরিষদ সাধ্যমতো পূর্বের বকেয়া পরিশোধ ও চলমান বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করে যাচ্ছে। মন্ত্রণালয়ে এককালীন অর্থ বরাদ্দের জন্য যোগাযোগ করা হয়েছে। প্রকল্পটি চালু না হওয়ায় যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যে কারনে বিকল্প ব্যবস্থায় চালুর চেষ্টা করছেন। পৌরবাসীর পানিবাহিত স্বাস্থ্যঝুঁকি রোধ করতে শর্ত সাপেক্ষে বিদ্যুৎ-সংযোগ দিয়ে পানি শোধনাগারটি চালুর দাবি জানান মেয়র।