বালাসী-বাহাদুরাবাদ রুটে লঞ্চ সার্ভিস চালু হচ্ছে শনিবার

উদ্বোধনের অপেক্ষায় গাইবান্ধার বালাসীঘাটে আনা বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের লঞ্চ
ছবি: প্রথম আলো

গাইবান্ধার বালাসী থেকে জামালপুরের বাহাদুরাবাদ নৌরুটে লঞ্চ সার্ভিস চালু হচ্ছে শনিবার। এ দিন পরীক্ষামূলকভাবে লঞ্চ সার্ভিসের উদ্বোধন করবেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

প্রতিমন্ত্রী বেলা ১১টায় প্রথমে জামালপুরের বাহাদুরাবাদ টার্মিনাল ভবনের উদ্বোধন করবেন। পরে বাহাদুরাবাদ লঞ্চঘাটে উদ্বোধন করবেন বাহাদুরাবাদ-বালাসী রুটে লঞ্চ সার্ভিস। তিনি নৌপথে গাইবান্ধার বালাসীঘাট যাবেন। সেখানেও বালাসী-বাহাদুরাবাদ রুটে লঞ্চ সার্ভিস ও বালাসী নৌ টার্মিনাল ভবনের উদ্বোধন করবেন। এরপর তিনি বালাসীতে সুধী সমাবেশে যোগ দেবেন।

শুক্রবার বিকেলে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নেজারত ডেপুটি কালেক্টরেট (এনডিসি) এস এম ফয়েজ উদ্দিনের সই করা এক চিঠিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে ফয়েজ উদ্দিন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ইতিমধ্যে দুই ঘাটে যাত্রীবাহী দুটি লঞ্চ এনে রাখা হয়েছে।

গাইবান্ধা রেলস্টেশন সূত্রে জানা যায়, ব্রিটিশ সরকার ১৯৩৮ সালে তিস্তামুখ ঘাট-বাহাদুরাবাদ নৌরুট চালু করে। এপারে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার তিস্তামুখ ঘাট ওপারে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরাবাদ ঘাট। তখন থেকে এই রুটের মাধ্যমে ঢাকা-দিনাজপুর রেল যোগাযোগ চালু ছিল। উত্তরাঞ্চলের আটটি জেলার মানুষ ট্রেনে করে তিস্তামুখ ঘাটে যেতেন। এরপর তিস্তামুখ ঘাট-বাহাদুরাবাদ রুটে ফেরি পারাপার হতেন। ওপারে বাহাদুরাবাদে গিয়ে ট্রেনে উঠে ঢাকায় যেতেন। সে সময় কম খরচে নিরাপদে ঢাকা যাতায়াত করা যেত।

১৯৯০ সালে নদীর নাব্যতা সংকটের কারণে তিস্তামুখ ঘাটটি একই উপজেলার বালাসীতে স্থানান্তর করা হয়। এ জন্য প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে ত্রিমোহিনী থেকে বালাসী পর্যন্ত নতুন প্রায় ৬ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হয়। তখন বালাসী-বাহাদুরাবাদ রুটের মাধ্যমে একইভাবে রেল যোগাযোগব্যবস্থা চালু ছিল। তৎকালীন বালাসীঘাটে রেলওয়ের অন্তত নানা ধরনের ৩০টি নৌযান ছিল। ২০১৫ সালের পর থেকে এসব নৌযান বিক্রি শুরু হয়। বর্তমানে এখানে রেলের প্রায় ১১টি নৌযান আছে। অবশিষ্ট নৌযানগুলো বিক্রির প্রক্রিয়া চলছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের রাজশাহী পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে এসব বিক্রি করা হচ্ছে।

১৯৯৬ সাল থেকে যমুনা নদীতে নাব্য হ্রাসের কারণে বালাসী-বাহাদুরাবাদ রুটে ফেরি চলাচল বন্ধের উপক্রম হয়। ১৯৯৮ সালের জুন মাসে যমুনা বহুমুখী সেতু চালু হয়। ফলে ২০০০ সাল থেকে এই রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অকার্যকর হয়ে পড়ে বালাসীঘাট। তখন থেকে প্রায় ২২ বছর বালাসী-বাহাদুরাবাদ রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ আছে। অবশ্য শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে ঝুঁকিপূর্ণ পারাপার অব্যাহত ছিল।

বালাসী-বাহাদুরাবাদ নৌরুটে লঞ্চ সার্ভিস চালুর দাবিতে নানা আন্দোলন কর্মসূচি চলতে থাকে। রুটটি চালু হলে ঢাকার সঙ্গে উত্তরের আট জেলা ভ্রমণে দুই-তিন ঘণ্টা সময় কম লাগবে। ঢাকা-রংপুর জাতীয় মহাসড়ক ও যমুনা সেতুর ওপর চাপ কমবে। স্থানীয় জনগণের দাবির মুখে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ উভয় পাশে ১৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নৌ টার্মিনাল ভবন নির্মাণ করে। শেষ পর্যন্ত গাইবান্ধাবাসীর বহুল প্রত্যাশিত বালাসী-বাহাদুরাবাদ রুটে লঞ্চ সার্ভিস চালু হচ্ছে।