মাদারীপুরের শিবচরের বাংলাবাজার ও মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া নৌপথের ফেরি চলাচলে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসি) বলছে, স্রোতের কারণে নিরাপত্তার ঝুঁকিতে থাকায় ফেরি চালানো যাচ্ছে না। শীত মৌসুমে কুয়াশার কারণে নির্বিঘ্নে ফেরি চলাচল করবে কি না, তা নিয়েও শঙ্কা আছে। এমন পরিস্থিতিতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে শরীয়তপুর-মাদারীপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ।
পদ্মা নদীতে তীব্র স্রোত থাকায় গত জুলাই ও আগস্টে কয়েক দফায় পদ্মা সেতুর পিলারে ফেরির ধাক্কা লাগে। এরপরই নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ১৮ আগস্ট থেকে ওই নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয়। এরপর স্রোত কিছুটা কমে এলে ৪ অক্টোবর ফেরি চালু করা হয়। তবে ১১ অক্টোবর আবার ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
বিআইডব্লিউটিসি ও বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করার জন্য পদ্মা নদী পার হতে বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথ ব্যবহার করে। ওই নৌপথে যাত্রী পারাপার করা হয় লঞ্চে। আর যানবাহন পারাপার করা হয় ফেরিতে। ফেরি ও লঞ্চগুলো পদ্মা সেতুর নিচ দিয়ে চলাচল করে।
বাংলাবাজার ঘাট থেকে শিমুলিয়া ঘাটে যাওয়ার পথে গত জুলাই ও আগস্ট মাসে পদ্মা সেতুর তিনটি পিলারে চারবার ফেরির ধাক্কা লাগে। এরপর নদীতে স্রোতের তীব্রতা বেড়ে গেলে ১৮ আগস্ট থেকে ওই নৌপথে ফেরি চালানো বন্ধ রাখা হয়। ছোট গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স, সরকারি দপ্তরের জরুরি গাড়ি পারাপার করার জন্য জাজিরার সাত্তার মাতবর, মঙ্গল মাঝির ঘাটে ২৫ আগস্ট নতুন একটি ফেরিঘাট স্থাপন করা হয়। কিন্তু নাব্যতাসংকটে ওই ঘাট চালু করা যায়নি।
বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথে ফেরি চালানোর জন্য বিআইডব্লিউটিএর খনন বিভাগ, নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগ, সার্ভে বিভাগ, পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ, পদ্মা সেতুর নিরাপত্তার দায়িত্ব থাকা সেনাবাহিনীর সমন্বয়ে একটি দল নৌপথটিতে পর্যবেক্ষণ করছে। কিন্তু কবে নাগাদ ফেরি চালানো যাবে, তা স্পষ্ট করে বলছে না কোনো বিভাগ। ওই দল বিভিন্ন সময় নৌপথ পরিদর্শন করে একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে শিমুলিয়া থেকে বাংলাবাজার যাওয়ার সময় ফেরিগুলো ১৩, ১৪ ও ১৫ নম্বর পিলারের নিচ দিয়ে চলাচল করবে। আর বাংলাবাজার থেকে শিমুলিয়া যাওয়ার পথে ১৯, ২০ ও ২১ নম্বর পিলারের নিচ দিয়ে চলাচল করবে। পদ্মা নদীতে প্রতি ঘণ্টায় ২ দশমিক ৫০ নটিক্যাল মাইল স্রোতের গতি থাকলে ফেরি চালানো হবে।
রোববার সকালে পদ্মা সেতুর ১৪ থেকে ১৭ নম্বর পিলার এলাকায় স্রোতের গতি ছিল ৩ দশমিক ৮৬ থেকে ৩ দশমিক ৫১ নটিক্যাল মাইল। আর ১৮ থেকে ২০ নম্বর পিলার এলাকায় স্রোতের গতি ছিল ৩ দশমিক ৬৭ থেকে ৩ দশমিক ৪৫ নটিক্যাল মাইল। নির্বিঘ্নে ফেরি চালানোর জন্য বিআইডব্লিউটিএ ১১ কিলোমিটার নৌপথে ২ শতাধিক স্থানে মার্কিং, ৯টি স্থানে বিকন বাতি, ৪টি স্থানে বয়া স্থাপন করেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিআইডব্লিউটিসির এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, স্রোতের কারণে পদ্মা সেতুর পিলারে ফেরির ধাক্কা লাগবে, এমন আশঙ্কায় ফেরি চালানো হচ্ছে না। কিছুদিনের মধ্যে কুয়াশার প্রভাব থাকবে নদীতে। তখন এই ঝুঁকি আরও বাড়বে।
বিআইডব্লিউটিএর নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের উপপরিচালক ওবায়দুর করিম খান প্রথম আলোকে বলেন, ফেরি কেন চালানো হচ্ছে না, তা বিআইডব্লিউটিসি বলতে পারবে। বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথে বিআইডব্লিউটিএর দিক থেকে কোনো সমস্যা নেই। নৌপথ প্রস্তুত আছে। বিআইডব্লিউটিসি স্রোতের কারণে ঝুঁকি নিয়ে ফেরি চালাতে রাজি হচ্ছে না।
দুই মাসের বেশি সময় ধরে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েছে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। যাত্রীরা লঞ্চ, স্পিডবোট ও অনুমোদনবিহীন ট্রলারে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে। আর পণ্যবাহী ট্রাক পারাপার করা হচ্ছে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথ দিয়ে। সেখানেও সব সময় যানজট লেগে থাকছে।
শরীয়তপুরের নড়িয়ার পাটের ব্যবসায়ী শাহজাহান হাওলাদার বলেন, ‘ঢাকার কেরানীগঞ্জের একটি মিলে পাট নিয়ে আমাদের গাড়ি পাটুরিয়া হয়ে যাচ্ছে। দৌলতদিয়া ঘাটে চার-পাঁচ দিন বসে থাকার পর ফেরির সিরিয়াল পাওয়া গেছে। এতে আমাদের অনেক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে।’
জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিসির মেরিন বিভাগের পরিচালক আশিকুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্রোতের কারণে ফেরি চালানো যাচ্ছে না। ওই নৌপথের বিষয়ে সরকারের চারটি সংস্থা পর্যবেক্ষণ করছে। একটি সংস্থার মতামতে ফেরি চালানো যাবে না। চারটি সংস্থার সমন্বিত ইতিবাচক মতামত পেলে ফেরি চালানো হবে। সামনে কুয়াশা পড়বে। তখন কিছুটা সমস্যা হতে পারে।’