পুলিশ কর্মকর্তা স্বামীকে ভিডিও কলে রেখে স্ত্রীর আত্মহত্যা
পরিবারের সদস্যদের না জানিয়ে পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আমির হোসেনকে (৩৭) বিয়ে করেছিলেন মাহফুজা বেগম (২২)। মাহফুজার পরিবার বিষয়টি মেনে নিলেও আমিরের পরিবার মেনে নেয়নি। একপর্যায়ে মাহফুজা জানতে পারেন, আমির হোসেনের আরেক স্ত্রী এবং সেই ঘরে সন্তান রয়েছে। এর পর থেকে তাঁদের মধ্যে অশান্তি শুরু হয়।
এর জের ধরে স্বামীকে মুঠোফোনে ভিডিও কলে রেখে ঘরের বৈদ্যুতিক পাখার সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করেন মাহফুজা বেগম। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সুনামগঞ্জ শহরের বাঁধনপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
আমির হোসেনের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায়। তিনি বর্তমানে সুনামগঞ্জের দিরাই থানায় কর্মরত আছেন। মাহফুজা বেগমের বাবার বাড়ি সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার সুলেমানপুর গ্রামে।
মাহফুজার পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, মাহফুজা সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে পড়ার সময় সুনামগঞ্জ পৌর শহরে থাকতেন আমির হোসেন। ওই সময় তাঁদের মধ্যে পরিচয় ও একপর্যায়ে প্রেমের সর্ম্পক হয়। বছরখানেক আগে বিয়ে করেন তাঁরা। এর পর থেকে শহরের বাঁধনপাড়া এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছিলেন এ দম্পতি। আমির হোসেনের পরিবার এ বিয়ে মেনে নেয়নি। এর মধ্যে তিন মাস আগে মাহফুজা জানতে পারেন, আমির হোসেনের আরেক স্ত্রী এবং সেই ঘরে সন্তান রয়েছে। ওই সন্তান নিয়ে তাঁর প্রথম স্ত্রী ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাবার বাড়িতে থাকেন। এটা নিয়ে দুজনের সঙ্গে মনোমালিন্য শুরু হয়।
মাহফুজার মা খালেদা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, আমির হোসেনের মা ও প্রথম স্ত্রী প্রায়ই মাহফুজাকে মুঠোফোনে কল করে গালাগাল করতেন। গতকাল বুধবার রাতেও একইভাবে তাঁকে গালাগাল করা হয়। মাহফুজা বিষয়টি আমির হোসেনকে জানালেও তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি। উল্টো মাহফুজাকে মাঝেমধ্যেই নানাভাবে নির্যাতন করতেন আমির। তাঁদের পরিবারে অশান্তি লেগেই ছিল।
তবে স্ত্রীর সঙ্গে কোনো ঝামেলা ছিল না বলে মন্তব্য করেছেন আমির হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর স্ত্রী অনেক জেদি ছিলেন। মাঝেমধ্যে রাগ করে মুঠোফোন ভেঙে ফেলতেন। আজ দুপুরে তাঁকে ভিডিও কলে রেখে মাহফুজা গলায় ফাঁস দিতে গেলে তিনি সঙ্গে সঙ্গে বাড়িওয়ালাকে কল করে বিষয়টি জানান। কিন্তু বাড়িওয়ালা গিয়ে অনেক চেষ্টা করেও দরজা খুলতে পারনেনি। পরে সুনামগঞ্জ সদর থানা–পুলিশ গিয়ে দরজা ভেঙে বৈদ্যুতিক পাখার সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় মাহফুজার লাশ পান।
নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে আমির হোসেন বলেন, ‘আমি তাঁকে আমার আগের বিয়ের বিষয়টি নিয়ে অনেকবার বুঝিয়েছি। এরপরও মাঝেমধ্যে রাগ করত সে। এর আগেও আত্মহত্যা করবে বলে হুমকি দিয়েছিল। কিন্তু সত্যি সত্যি সে আত্মহত্যা করে বসবে ভাবতেই পারিনি।’
লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন সুনামগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী। তিনি বলেন, বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো যাবে।