দেশে হাঁপানি রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। দুই দশক আগে রোগীর সংখ্যা যেখানে ছিল ৭০ লাখ, তা বেড়ে এখন কোটির ওপরে। তবে হাঁপানিতে মৃতের সংখ্যা কমেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নগরায়ণ, পরিবেশদূষণের মাত্রা বাড়ায় মানুষের মধ্যে হাঁপানি রোগটিও বাড়ছে।
আগামীকাল বুধবার ৫ মে গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ ফর অ্যাজমা (গিনা) বিশ্ব হাঁপানি দিবস পালন করছে। বাংলাদেশ এর সদস্য হওয়ায় দেশেও হাঁপানি দিবস পালিত হচ্ছে। গিনা জানিয়েছে, বিশ্বে প্রায় ৩৪ কোটি হাঁপানি রোগী রয়েছে। এ ছাড়া গ্লোবাল অ্যাজমা নেটওয়ার্ক বলছে, সারা বিশ্বে হাঁপানির কারণে প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার মানুষ মারা যায়।
বাংলাদেশেও হাঁপানি রোগ বাড়ছে। ‘ন্যাশনাল অ্যাজমা প্রিভিলেন্স সার্ভে’ ১৯৯৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, তখন রোগী ছিল ৭০ লাখ। সর্বশেষ জরিপ হয় ২০১০ সালে। তখন রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৯০ লাখে।
জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক মু. সাইদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, দেশে এখন কোটির ওপরে হাঁপানি রোগী রয়েছে। এ ছাড়া বক্ষব্যাধি হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন যে পরিমাণে রোগী চিকিৎসা নিতে আসে, তার ৩০ শতাংশ হাঁপানি রোগী। রোগী বাড়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আগে হাঁপানির সমস্যা দেখে দিলে মানুষ চিকিৎসাকেন্দ্রে যেত না। তাই কী পরিমাণে রোগী আছে, তা জানা যেত না। এ ছাড়া আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থাও ছিল না। তবে দেশে এখন হাঁপানির সব ধরনের আধুনিক চিকিৎসা রয়েছে। মানুষও সচেতন। লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছে। হাঁপানি রোগীর সংখ্যা বাড়লেও মৃতের সংখ্যা কমেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে ২০১৯ সালে হাঁপানিতে মারা গেছেন ৩৮ হাজার ২৯০ জন ও ২০২০ সালে ৩২ হাজার ৭৫ জন মারা যান। তবে নগরায়ণ, পরিবেশদূষণের কারণেও হাঁপানির রোগী বাড়ছে বলে তিনি মনে করেন।
হাঁপানি রোগী বাড়ার কারণ হিসেবে গিনার বাংলাদেশ কো–অর্ডিনেটর কাজী সাইফুদ্দিন বেন্নুর প্রথম আলোকে বলেন, এ রোগটা একটু শহরকেন্দ্রিক। এ ছাড়া পরিবেশ অন্যতম কারণ। পরিবেশ দ্রুত খারাপ হচ্ছে, বায়ূদূষণ, ধূমপান বৃদ্ধি, বাচ্চাদের খেলাধুলার সুযোগ কমে যাওয়াও এই রোগ বাড়ার অন্যতম কারণ। এ ছাড়া বংশগত কারণেও হাঁপানি হয়। হাঁপানি অল্প বয়সেই প্রথমে দেখা দেয়। মধ্যবর্তী বয়সে কিছুটা কমে যায়। বয়স বাড়লে পরবর্তী সময়ে আবার দেখা দেয়। হাঁপানির চিকিৎসা ব্যয়বহুল না। তবে দীর্ঘমেয়াদি।
হাঁপানির মূল লক্ষণ হিসেবে সাইফুদ্দিন বলেন, কাশি, শ্বাসকষ্ট ও তার সঙ্গে বাঁশির মতো আওয়াজ হওয়া, বুকে চাপ অনুভব করা, অল্পতে হয়রান হওয়া।
কাজী সাইফুদ্দিন বলেন, যাদের হাঁপানির সমস্যা আছে, তাদের করোনা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কারণ, করোনা প্রথমে আক্রমণ করে শ্বাসনালি ও ফুসফুসে, যা হাঁপানি রোগীর আগে থেকেই দুর্বল থাকে। হাঁপানি রোগীদের কোনো অবস্থাতেই চিকিৎসায় গাফিলতি করা যাবে না। হাঁপানি চিকিৎসায় ইনহেলার বা মুখে স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা হয়। অনেকে ভয় পায় যে প্রাথমিক পর্যায়ে স্টেরয়েড ব্যবহারে ভাইরাসের আক্রমণ বেশি হয় কি না। কিন্তু বিশ্ব সংস্থা জানিয়েছে, ইনহেলার, মুখের বা ইনজেকশনের স্টেরয়েড প্রয়োজনে ব্যবহার করা যাবে। অতিরিক্ত শ্বাসকষ্ট হলে হাঁপানি রোগীদের নেবুলাইজার দেওয়া হয়। কিন্তু করোনাকালীন তা ব্যবহার করতে অনুৎসাহিত করা হয়। এতে দুটো ক্ষতি হতে পারে—রোগীর মুখে বা আশপাশে যদি করোনার জীবাণু থাকে তাহলে নেবুলাইজার ব্যবহারের সময় জীবাণুটা নেবুলাইজারের হ্যাসের সঙ্গে ফুসফুসের অনেক ভেতরে দ্রুত ঢুকে যায়। এ ছাড়া যে গ্যাসটা তৈরি হয়, তা থেকে আশপাশের মানুষদের সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
অ্যাজমা অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সভাপতি বশির আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, নিয়ন্ত্রিত জীবনের মাধ্যমে হাঁপানি রোগ থেকে ভালো থাকা যায়। হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে পরিবেশদূষণের বিষয়ে সরকারকে ভাবার পাশাপাশি স্বাস্থ্যশিক্ষার ও সচেতনতা কার্যক্রম চালানোর ওপর জোর দেন তিনি।