দুই বন্ধুর মৃত্যু একসঙ্গে, দাফনও পাশাপাশি

রুপম খান (ডানে) ও নিশাত
ছবি: সংগৃহীত

কলেজে যাওয়ার জন্য মোটরসাইকেল কেনার বায়না ধরে রুপম খান (১৭)। একমাত্র ছেলে রুপম খানের এমন বায়না শুনে প্রায় পাঁচ মাস আগে মোটরসাইকেল কিনে দিয়েছিলেন টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার উয়ার্শী ইউনিয়নের সাফর্তা গ্রামের রামিনুর রহমান খান।

সেই মোটরসাইকেলই কাল হলো। গতকাল রোববার এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় মির্জাপুর সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী রুপম খান। এর আগে রুপম তার বাল্যবন্ধু একই গ্রামের শাহ্ আলম খানের ছেলে নিশাত খানকে (১৭) সঙ্গে নিয়ে মির্জাপুর উপজেলা সদরে আসতে মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। বিকেলে মির্জাপুর-উয়ার্শী-বালিয়া সড়কের ভাওড়া গ্রামের নয়াপাড়া এলাকায় একটি ট্রাক মোটরসাইকেলটিকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই রুপম নিহত ও নিশাত মারাত্মক আহত হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় নিশাতকে কুমুদিনী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে রাত আটটায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়। সে উপজেলার নতুন কহেলা কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। তারা দুইজনই মির্জাপুরের সিয়াম একাডেমি নামক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে গত বছর এসএসসি পরীক্ষায় পাস করেছে।

আজ সোমবার বেলা ১১টায় উয়ার্শী ইউনিয়নের সাফর্তা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে একই সঙ্গে তাদের দুজনের জানাজা হয়। গ্রামটির কবরস্থানে পাশাপাশি তাদের দাফন করা হয়।

এদিকে তাদের মৃত্যুতে পুরো গ্রামসহ আশপাশের গ্রামগুলোতে শোকের ছায়া নেমে আসে। জানাজার আগে ও পরে তাদের বন্ধু, প্রতিবেশী ও আত্মীয়দের কান্নায় হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।

সাফর্তা গ্রামের বাসিন্দা উয়ার্শী এম ইয়াছিন অ্যান্ড ইউনুছ খান উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মামুনর রহমান খান জানান, রুপম মা–বাবার একমাত্র সন্তান। নিশাতের আরও এক ভাই ও দুই বোন রয়েছে। মোটরসাইকেল মেরামতের জন্য উপজেলা সদরের টিভিএস নামক প্রতিষ্ঠানে যেতে তারা বাড়ি থেকে বের হয়েছিল। তারা সম্পর্কে প্রতিবেশী চাচাতো ভাই। ছোটবেলা থেকেই দুইজনের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা ছিল। স্কুলে যাওয়া-আসা, খেলাধুলা সব একই সঙ্গে করত। তাদের জানাজায় হাজারো মানুষ অংশ নিয়েছে।

ওই গ্রামের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা আম্বার আলী খান জানান, ‘তাদের ঘনিষ্ঠতা দেখে মনে হতো একই বাগানের দুইটি ফুল। সেই ফুল দুটি ঝরে গেছে।’

মির্জাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলম চাঁদ জানান, রুপম ও নিশাত খানের লাশ আইনি প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত ট্রাকের চালককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।