ট্রাফিক পুলিশের সাহসিকতায় ডাকাতের কবল থেকে বাঁচলেন বাসযাত্রীরা
তখন রাত সোয়া ১০টা বাজে। সারা দিনের কাজের ক্লান্তি নিয়ে বাসায় ফেরার জন্য নবীনগর বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষা করছিলেন সাভার ট্রাফিক পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) হেলাল উদ্দিন। আবাসস্থল সাভারের পৌর কমিউনিটি সেন্টারে ফিরে কখন বিশ্রাম নেবেন, মাথায় ছিল সেই চিন্তা। এর মধ্যে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি ছুটে আসেন হেলাল উদ্দিনের কাছে। জানান, পাশেই ঢাকাগামী সাভার পরিবহনের একটি বাসে ডাকাতি হচ্ছে।
তথ্যটি জানার পর বাসায় ফেরার সিদ্ধান্ত পাল্টান হেলাল। ছুটে যান ডাকাতের কবলে পড়াদের উদ্ধারে। হানিফ পরিবহনের একটি বাসে উঠে পড়েন তিনি। ৩০০ থেকে ৪০০ গজ দূরে গিয়ে সাভার পরিবহনের বাসটিকে হানিফ পরিবহনের বাস দিয়ে ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দেন। এর আগেই হানিফ বাস থেকেই তিনি দেখতে পান সাভার পরিবহনের বাসের জানালা দিয়ে লাফিয়ে বাস থেকে নেমে দৌড়ে নিজেদের রক্ষা করছেন যাত্রীরা। অনেকে জানালা দিয়ে নামতে গিয়ে আহত হচ্ছেন।
হেলাল দ্রুত নেমে বাসের গেটে পৌঁছে খেয়াল করলেন অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি কাফনের আদলে কাপড় পরে বাসচালকের ঠিক পাশেই ধারালো ছুরি হাতে দাঁড়িয়ে আছেন। এলোমেলোভাবে ছুরি নাড়াচ্ছেন। পেছন থেকে তিনি জাপটে ধরলেন ওই অস্ত্রধারীকে। ধ্বস্তাধস্তিতে সামান্য আহত হলেন। খেয়াল করলেন আরও অন্তত চারজন দেশীয় অস্ত্রধারী বাসের জানালা দিয়ে লাফিয়ে পালিয়ে গেলেন। প্রথমে কেউ এগিয়ে না এলেও পরে তাঁর চিৎকারে কয়েকজন যাত্রী এগিয়ে এসে তাঁরাও অস্ত্রধারীকে আটক করতে সহায়তা করলেন। উত্তেজিত জনতা বাস থেকে ওই অস্ত্রধারীকে নামিয়ে বেধড়ক মারধর করে। পরে হেলাল আটক ব্যক্তিকে আশুলিয়া থানা–পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন।
হেলালের সাহসিকতায় রক্ষা পান বাসটির ২০–২২ জন যাত্রী। সোমবার রাতের এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ইমরান খান বলেন, পুলিশের ওই লোক না থাকলে বড় বিপদ হতে পারত। তিনি সময়মতো উপস্থিত হওয়াতে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেনি।
ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশের চাকরি মানেই তো নিজেকে সব সময় জনগণের কল্যাণে নিয়োজিত রাখা। জনগণের জানমাল রক্ষা করা। সেখানে ডিউটিতে আছি নাকি ছুটি হয়েছে, সেটি মুখ্য নয়। বিপদগ্রস্ত যাত্রীদের কীভাবে রক্ষা করতে হবে, সেটিই আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। মানুষের জীবন বাঁচাতে গিয়ে নিজের ক্ষতি হতে পারে, এমন চিন্তা আসলে কোনো পুলিশ সদস্যেরই মাথায় থাকে না।’
সাভারের পৌর কমিউনিটি সেন্টারে হেলাল উদ্দিন তাঁর ইউনিটের অন্য সদস্যদের সঙ্গে থাকেন। পরিবারের অন্যান্য সদস্য থাকেন গ্রামের বাড়ি বরগুনা জেলার বেতাগী থানার ঝোপখালী গ্রামে। হেলাল দায়িত্ব পালনে কতটা আন্তরিক, তা বোঝা গেল তাঁর সহকর্মীদের কথায়ও।
হেলাল উদ্দিনের সাহসিকতার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করলেন ঢাকা জেলা ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহহিল কাফী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ট্রাফিক পুলিশের এ সদস্য যে সাহসিকতা ও দায়িত্ববোধের পরিচয় দিয়েছেন, তা সত্যিই খুব প্রশংসনীয়। সড়কের শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি জনগণের বিপদে তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেওয়ায় অনেক যাত্রী বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছেন।