জেলা আ.লীগের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে যুবলীগ-ছাত্রলীগের বিক্ষোভ

গোপালগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের বিক্ষোভ মিছিল
ছবি: প্রথম আলো

গোপালগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হবে না বলে আওয়ামী লীগ থেকে জানানো হয়েছিল। সে অনুযায়ী মেয়র পদে মনোনয়নের জন্য আবেদন করেছেন আওয়ামী লীগের ১০ জন নেতা। এর মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগ থেকে জানানো হয়েছে, দলীয় ব্যানারে নির্বাচন না হলেও মেয়র পদে একজনকে সমর্থন দেবেন তাঁরা। বিষয়টি নিয়ে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আজ শুক্রবার বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছেন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা।

এ বিক্ষোভ-সমাবেশের নেতৃত্বে ছিলেন জেলা যুবলীগ সভাপতি ও মেয়র প্রার্থী জি এম সাহাব উদ্দিন আজম এবং জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নিউটন মোল্লা। জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে মিছিলটি বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এরপর মিছিলটি চৌরঙ্গীর মোড়ে পৌঁছে এক প্রতিবাদ সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। সমাবেশে বক্তারা পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তকে হঠকারী বলে উল্লেখ করেছেন। এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন তাঁরা।

সমাবেশে বক্তারা জানান, ১৩ মে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার-সংক্রান্ত মনোনয়ন বোর্ডের সভায় গোপালগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনকে উন্মুক্ত ঘোষণা করা হয়। বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়। আওয়ামী লীগের ব্যানারে ১০ জন মেয়র পদে মনোনয়নের জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু দলীয়ভাবে নির্বাচন উন্মুক্ত ঘোষণা করার পর ওই ১০ জনই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে দলীয় কার্যালয়ে জেলা আওয়ামী লীগ একটি প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে। এতে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলী খান জানান, নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী শেখ রকিব হোসেনকে সমর্থন করবে জেলা আওয়ামী লীগ। দলীয় প্রধানের নির্দেশে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ওই ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের মাত্র ১৩-১৪ জন নেতা।

প্রতিবাদ সমাবেশে মেয়র প্রার্থী ও জেলা যুবলীগ সভাপতি জি এম সাহাব উদ্দিন আজম বলেন, আওয়ামী লীগের যে কমিটির সিদ্ধান্তে নির্বাচন উন্মুক্ত করা হয়েছে, তাতে কোনো পরিবর্তন এলে তা সেই কমিটিরই মাধ্যমে আসতে হবে। পরবর্তী সময়ে যা আওয়ামী লীগের মুখপাত্রের বরাতে প্রকাশ হওয়ার কথা। কাউকে কোনো নোটিশ না দিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কীভাবে একটি জরুরি সভা আহ্বান করে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে দলের সমর্থন দেন। মাহবুব আলী খান দলীয় প্রধানের নাম ভাঙিয়ে সবাইকে বিভ্রান্ত করছেন। এটি তাঁর ব্যক্তিগত হটকারী সিদ্ধান্ত। সমাবেশ থেকে এ সিদ্ধান্তের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়।

ছাত্রলীগ ও যুবলীগের বিক্ষোভ সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ইলিয়াস হক। একজন প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ার বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেন তিনি। ইলিয়াস বলেন, ‘আমি জেলা আওয়ামী লীগের একটি দায়িত্বশীল পদে রয়েছি। দুঃখজনক হলেও সত্য যে আমিও জেলা আওয়ামী লীগের জরুরি সভার কথা জানি না। আমি মনে করি গঠনতন্ত্র মোতাবেক ওই সভা আহ্বান করা হয়নি। ৭১ সদস্যবিশিষ্ট জেলা কমিটিতে সভার কোরাম পূরণের জন্য এক-তৃতীয়াংশ সদস্যের উপস্থিত থাকতে হবে। অথচ ওই সভায় মাত্র ১৩-১৪ জন উপস্থিত ছিলেন।’

জেলা আওয়ামী লীগের ওই ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন সভাপতি চৌধুরী এমদাদুল হক। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘দলীয় মনোনয়নে নির্বাচন না হলেও যে যাঁর মতো করে কোনো প্রার্থীকে সমর্থন দিতে পারেন। গতকাল আওয়ামী লীগ কার্যালয় সভা করে সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শেখ রকিব হোসেনকে সমর্থন দেওয়া হয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের আলোকে এটা করা হয়েছে কি না, এটা আমি বলতে পারব না। কারণ, আমার কাছে এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা আসেনি। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলী খানের কাছে এ বিষয়ে নির্দেশ এসেছে বলে জানতে পেরেছি। এটা তিনি ভালো বলতে পারবেন।’ এ বিষয়ে সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলী খানের মুঠোফোনে কল করা হলে একটি সভায় আছেন বলে সংযোগ কেটে দেন। পরে দলীয় কার্যালয়ে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।

আগামী ১৫ জুন গোপালগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনের ভোট হওয়ার কথা। নির্বাচনে মেয়র পদে মোট ১১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। এর মধ্যে ১০ জনই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। অপর প্রার্থী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের। প্রার্থীদের মধ্যে বৃহস্পতিবার জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এম বদরুল আলম বদর তাঁর প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। শেখ রকিব হোসেনের প্রতি তাঁর সমর্থনের কথা জানিয়েছেন। শেখ রাকিব সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর চাচাতো ভাই।