চালু হলো না ঢাকা-শিলিগুড়ি রেলপথের মিতালী এক্সপ্রেস
পর্যটক ভিসা চালু না হওয়ায় আজ শনিবার ২৬ মার্চ চলাচল শুরু করতে পারেনি ঢাকা-শিলিগুড়ি রেলপথে যাত্রীবাহী মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেন। পর্যটক ভিসা চালু হলে বাংলাদেশের চিলাহাটি এবং ভারতের হলদিবাড়ি সীমান্ত হয়ে ঢাকা থেকে ভারতের নিউ জলপাইগুড়ি (শিলিগুড়ি) পর্যন্ত ট্রেনটি চলাচল শুরু করবে।
চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেল সংযোগটি অনেক পুরোনো। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর সেটি বন্ধ হয়। সেই বন্ধ থাকা রেলপথটি আবার চালুর উদ্যোগ নেয় দুই দেশের সরকার। এর ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর মালবাহী ট্রেন এবং ২০২১ সালের ২৭ মার্চ যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এর পর থেকে করোনার প্রকোপ অব্যাহত থাকায় যাত্রীবাহী ট্রেনটি চলাচল বন্ধ থাকলেও মালবাহী ট্রেন চলাচল অব্যাহত আছে।
করোনার বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ায় পথটি দিয়ে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের দাবি সামনে আসে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ওই দাবি আরও জোরালো হয়। এর মধ্যে ওই ট্রেন চালুর প্রস্তুতিতে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালকের দপ্তর থেকে ১৫ মার্চ সময়সূচি ও ভাড়া নির্ধারণের একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনটি ভারতের নিউ জলপাইগুড়ি থেকে প্রতি রবি ও বুধবার ছেড়ে আসবে বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে। সেটি হলদিবাড়ি রেলস্টেশনে বেলা ১২টা ৫৫ মিনিটে, নীলফামারীর চিলাহাটি স্টেশনে দুপুর ১টা ৫৫ মিনিটে এবং ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে পৌঁছাবে রাত ১০টা ৩০ মিনিটে। অপর দিকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ৫০ মিনিটে ছাড়বে নিউ জলপাইগুড়ির উদ্দেশে। এরপর ট্রেনটি চিলাহাটিতে ভোর ৫টা ৪৫ মিনিটে, হলদিবাড়িতে ৬টা ৫ মিনিটে ছেড়ে নিউ জলপাইগুড়ি পৌঁছাবে সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ঢাকা থেকে ভারতের নিউ জলপাইগুড়ির দূরত্ব ৫৯৫ কিলোমিটার। এ পথে ঢাকার ক্যান্টনম্যান্ট স্টেশন থেকে নিউ জলপাইগুড়ির ভাড়া হবে (১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ৫০০ টাকা ট্রাভেল ট্যাক্সসহ) এসি বাথ ৪ হাজার ৯০৫ টাকা, এসি চেয়ার ৩ হাজার ৮০৫ টাকা, সাধারণ আসন ২ হাজার ৭০৫ টাকা।
নীলফামারী শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি এস এম শফিকুল আলম বলেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে দুই দেশের মধ্যে যাত্রীবাহী ট্রেন মিতালী এক্সপ্রেস চলাচল শুরু করবে। কিন্তু সেটি হলো না।’
নীলফামারী শিল্প ও বণিক সমিতির সাবেক সভাপতি আবদুল ওয়াহেদ সরকার বলেন, ‘ঢাকা থেকে সরাসরি ভারতের শিলিগুড়ি পর্যন্ত যাবে যাত্রীবাহী ট্রেনটি। এতে করে দার্জিলিং, মিরিক, গ্যাংটক, কার্শিয়াং, কালিংপং, গরুবাথান, নেপাল, ভুটানসহ বিভিন্ন দর্শনীয় এলাকায় এই পথে সহজে যেতে পারবেন এ অঞ্চলের পর্যটকেরা। একইভাবে ভারতের পর্যটকেরা এই পথে সহজে আসতে পারবেন বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান কক্সবাজার, টেকনাফ, সেন্ট মার্টিন, রাঙামাটি, বান্দরবান, সুন্দরবনসহ বিভিন্ন পর্যটন এলাকায়।’
এ বিষয়ে চিলাহাটির স্টেশনের মাস্টার আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘বিভিন্ন মাধ্যমে ওই ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ার কথা শুনেছিলাম। দাপ্তরিকভাবে এ–সংক্রান্ত কোনো সিদ্ধান্ত আমার কাছে আসেনি।’
বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মিহির কান্তি গুহ বলেন, ‘ভিসা–সংক্রান্ত জটিলতা থাকায় আপাতত ট্রেন চলাচলের বিষয়টি স্থগিত রাখা হয়েছে। আমাদের আলাপ-আলোচনা চলছে, দ্রুত ট্রেন চালু করা হবে।’