নাশকতা সৃষ্টির চেষ্টার অভিযোগে করা মামলায় খুলনা মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলামসহ বিএনপি ও জামায়াতের ১৮ জন নেতা–কর্মীর বিচার শুরু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার খুলনা মহানগর স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-২–এর বিচারক আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।
মামলার অপর আসামিরা হলেন বিএনপি নেতা মো. সাজ্জাদ আহসান, মো. বাকার বকশী, মো. ফরহাদ বকশী, মো. আসলাম, আবদুর রহিম চৌধুরী, আবদুল মজিদ গাজী, কাজী নূর মোহাম্মদ, সৈয়দ শামীম আহসান, শেখ মাবুবুর রহমান, মো. বায়জীদ, অহিদুল ইসলাম ও যুবদল নেতা মো. সাইফুল ইসলাম বকশী। এ ছাড়া আসামিদের তালিকায় জামায়াতের খুলনা মহানগর আমির আবুল কালাম আজাদ, মনিরুল ইসলাম, এস এম জাহাঙ্গীর আলম, মোল্যা মাসাদুর রহমান ও এম আকরাম হোসেন মোল্লার নাম আছে।
তবে মামলার অভিযোগপত্রে বিএনপির কর্মী অহিদুজ্জামানের নাম থাকলেও তিনি মারা যাওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়নি। এর আগে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর খুলনা মহানগরের সোনাডাঙ্গা থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) উজ্জল সরকার এ মামলা করেছিলেন।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর রাতে সোনাডাঙ্গা থানার তেঁতুলতলা মোড়ে বিএনপি ও জামায়াতের নেতা–কর্মীরা নাশকতার উদ্দেশ্যে জড়ো হয়েছিলেন বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এতে ওই নেতা–কর্মীরা ক্ষিপ্ত হয়ে সরকার উচ্ছেদ, শেখপাড়া এলাকার বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র (কেপিআই), বাংলাদেশ বেতার খুলনা ভবন ধ্বংস, সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক নাশকতা করা, খুলনাকে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে সরকারকে বিব্রত করার চেষ্টা করছিল বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে। এজাহারে বলা হয়েছে, ওই সময় নাশকতার উদ্দেশ্যে বিএনপি ও জামায়াতের নেতা–কর্মীরা অস্ত্র, লাঠিসোঁটা ও ইটের টুকরা নিয়ে শেখপাড়ার তেঁতুলতলা মোড়ে জড়ো হয়েছিলেন। পরে আসামিরা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে সেখান থেকে দৌড়ে পালিয়ে যান।
আসামিপক্ষের আইনজীবী রফিকুল ইসলাম বলেন, ওই মামলায় নজরুল ইসলামসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছিল। এ ছাড়া ১৪০ থেকে ১৫০ জন অজ্ঞাতনামা আসামি ছিলেন। ২০১৯ সালের ২৭ জুলাই ওই থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হরষিৎ মণ্ডল আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। অভিযোগপত্রে ১৯ জনের নাম ছিল। একই বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর অভিযোগপত্র আমলে নেন আদালত। কয়েক দফায় বিচারক বদলির পর আজ মঙ্গলবার মামলার বিচারকাজ শুরু হলো।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম বলেন, কল্পকাহিনি সাজিয়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলকভাবে এই মামলা করা হয়েছে। মামলার কোনো ভিত্তি নেই। স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচারব্যবস্থা থাকলে অভিযোগ গঠনের আগেই মামলাটি নিষ্পত্তি হয়ে যেত। বর্তমান সরকার যে পুলিশ তথা রাষ্ট্রকে অপব্যবহার করছে, সেটার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হলো মামলা দায়ের, অভিযোগ গঠন ও বিচারের নামে প্রসহন। এটা বিরোধী দল-মতের নেতা–কর্মীদের হয়রানি ছাড়া আর কিছুই নয়।
নজরুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। গত ৯ ডিসেম্বর কেন্দ্র থেকে ঘোষিত মহানগরের আহ্বায়ক কমিটিতে তাঁকে বাদ দেওয়া হয়। পরে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তাঁকে খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।