কাদের মির্জার নেতৃত্বে জাপা নেতাকে আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পাটির (জাপা) সাধারণ সম্পাদক মো. সাইফুল ইসলাম ওরফে স্বপনকে (৫৯) তুলে নিয়ে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন করা হয়েছে। বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জার নেতৃত্বে তাঁর অনুসারীরা বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত পাঁচ ঘণ্টা পৌরসভা ভবনের তৃতীয় তলার একটি কক্ষে আটকে রেখে তাঁকে নির্যাতন করেছেন বলে অভিযোগ সাইফুল ইসলামের ছেলে মাহমুদুল ইসলামের।
পরিবারের দাবি, সাইফুল ইসলামকে নির্যাতনের পাশাপাশি তাঁর ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ও মুঠোফোন ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। গতকাল রাত ১১টার দিকে তাঁকে উপজেলা জাপার সভাপতি আবদুল লতিফের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে রাতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে আজ বৃহস্পতিবার সকালে তাঁকে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী, আহত সাইফুল ইসলামকে ঢাকায় একটি বাসায় রাখা হয়েছে। আজ বিকেল পর্যন্ত তিনি অনেকটা অচেতন ছিলেন।
মাহমুদুল ইসলাম অভিযোগ করেন, তাঁর বাবা গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির দলীয় প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। তাঁর বাবার সঙ্গে কাদের মির্জার কোনো পূর্ববিরোধ নেই। তবুও গতকাল বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে তাঁর বাবাকে বসুরহাটের কালামিয়া ম্যানশন নামের একটি বিপণিবিতানের সামনে থেকে কাদের মির্জার নেতৃত্বে তাঁর অনুসারীরা পৌরসভা কার্যালয়ে ধরে নিয়ে যান। এ সময় কাদের মির্জার সঙ্গে কয়েকজন পুলিশ সদস্য ছিলেন।
মাহমুদুল ইসলাম বলেন, কাদের মির্জা তাঁর বাবাকে পৌরসভা কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়ার পর ভবনের তৃতীয় তলার একটি কক্ষে আটকে রাখেন। এরপর অনুসারীদের মাধ্যমে তাঁর বাবার হাত-পা বেঁধে নির্মম নির্যাতন চলানো হয়। শরীরের এমন কোনো স্থান নেই যেখানে কাদের মির্জা ও তাঁর অনুসারীরা নির্যাতন করেননি। বিকেল থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত তাঁর বাবার ওপর নির্যাতন চলতে থাকে। কাদের মির্জা বারবার তাঁর বাবার কাছ থেকে শেখানো স্বীকারোক্তি আদায় এবং তা ভিডিও রেকর্ড করার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে রাত সাড়ে আটটার দিকে ছোট ভাই মইনুল ইসলামকে তাঁর এক বন্ধু ফোন করে বাবাকে পৌরসভা ভবনে আটকে নির্যাতনের ঘটনাটি জানান। খবর পেয়ে ছোট ভাই পৌর ভবনের সামনে গেলেও তাঁকে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আবদুল লতিফকে ডেকে পাঠিয়ে নির্যাতনে গুরুতর আহত বাবাকে তাঁর কাছে হস্তান্তর করেন। এরপর তাঁর ছোট ভাইসহ পরিবারের সদস্যরা বাবাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।
কাদের মির্জা ও তাঁর অনুসারীরা তাঁর স্বামীকে নির্মম নির্যাতন করে পুরো শরীর থেঁতলে দিয়েছে। হাত-পা ভেঙে দিয়েছে।
উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আবদুল লতিফ প্রথম আলোকে বলেন, রাতে পৌরসভা জাতীয় পার্টির সভাপতি নুরুল হক ওরফে সবুজকে ফোন করেন কাদের মির্জা। তিনি তাঁর মাধ্যমে তাঁকে পৌরসভা কার্যালয়ে ডেকে পাঠান। পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে তিনি পৌরসভা কার্যালয়ে গিয়ে একটি কক্ষে দলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলামকে বসা অবস্থায় পান। তখন তাঁকে বেশ অসুস্থ মনে হয়েছে। পরে তাঁর ছেলেসহ পরিবারের সদস্যরা তাঁকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে গেছেন।
সাইফুল ইসলামের স্ত্রী চরফকিরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সংরক্ষিত নারী সদস্য নাজমা ইসলাম বলেন, ‘কাদের মির্জা ও তাঁর অনুসারীরা তাঁর স্বামীকে নির্মম নির্যাতন করে পুরো শরীর থেঁতলে দিয়েছে। হাত-পা ভেঙে দিয়েছে। কাদের মির্জা আগে থেকেই মুঠোফোনে তাঁর স্বামীকে গালমন্দ করত, হুমকি দিত। যে কারণে গত ছয় মাস তাঁর স্বামী বসুরহাট যাননি। বুধবার বিকেলে একটি কাজে তিনি বসুরহাট বাজারে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হন।’ এ ঘটনায় কাদের মির্জার দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে আবদুল কাদের মির্জার মুঠোফোনে আজ বৃহস্পতিবার একাধিকবার ফোন করলেও ব্যস্ত পাওয়া যায়। পরে বিকেলে তাঁর মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়ে জাপা নেতাকে নির্যাতনের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলেও তিনি কোনো জবাব দেননি।
কাদের মির্জা ঘোষিত উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইউনুছের কাছে আজ বিকেলে জাপা নেতাকে নির্যাতনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বুধবার তিনি পৌরসভায় যাননি, সারা দিন জেলা শহরে ছিলেন। তবে এ রকম একটি ঘটনা আজ তিনি শুনেছেন। কিন্তু ঘটনার বিস্তারিত কিছু তিনি জানেন না।
আজ দুপুরে কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুদ্দিন আনোয়ার বলেন, জাপা নেতাকে নির্যাতনের বিষয়টি তাঁর জানা নেই। পরিবারের কেউ এ বিষয়ে থানায় কোনো অভিযোগ করেননি। তিনি কেবলই শুনেছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
পুলিশের সামনে থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি সাইফুদ্দিন আনোয়ার বলেন, পুলিশ তো থাকে তার দায়িত্বে, আর কাদের মির্জার সঙ্গে সারাক্ষণই তো অনেক লোকজন থাকে, তিনি অনেকের সঙ্গে কথা বলেন। এ রকম কোনো ঘটনা দায়িত্বরত পুলিশ তাঁকে জানায়নি।