কক্সবাজারে তরুণীর মৃত্যু নিয়ে রহস্য, ২ বন্ধু আটক

পুলিশের হাতে আটক ওই তরুণীর দুই বন্ধু
ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা থেকে চার বন্ধুর সঙ্গে কক্সবাজার সৈকতে ভ্রমণে এসেছিলেন ঢাকার যাত্রাবাড়ীর এক তরুণী। ওঠেন একটি হোটেলে। গত শনিবার রাতে ওই তরুণীকে মুমূর্ষু অবস্থায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আজ বুধবার দুপুরে হাসপাতালটির নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) মৃত্যু হয়েছে তাঁর।

ওই তরুণী (১৯) পরিবারের সঙ্গে থাকতেন ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায়। গ্রামের বাড়ি বরগুনায়। পুলিশের দাবি, অতিরিক্ত মদ্যপানে তরুণীর মৃত্যু হয়েছে। তবে মদের সঙ্গে নেশাজাতীয় কিছু মিশিয়ে তাঁকে ধর্ষণ করা হয়েছে কি না, এ বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। মরদেহ কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। সম্প্রতি রাজধানীর একটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন ওই তরুণী।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সেলিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, চার ছেলেবন্ধুর সঙ্গে ওই তরুণী ১১ মে দুপুরে ঢাকা থেকে বাসে কক্সবাজার বেড়াতে আসেন। কলাতলী সৈকতের পাশে বিচ হলিডে নামে একটি আবাসিক হোটেলের দ্বিতীয় তলার ২০২ ও ২০৩ নম্বর কক্ষে ওঠেন তাঁরা। ১৪ মে রাতে তরুণী অসুস্থ হলে মুমূর্ষ অবস্থায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে ১৬ মে তরুণীকে হাসপাতালের আইসিইউতে নেওয়া হয়। চার দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ওই তরুণীর দুই ছেলেবন্ধু কামরুল আলম (২০) ও আরিফ রহমানকে (২১) আটক করা হলেও অপর দুই বন্ধু আত্মগোপনে গেছেন।

পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আটক কামরুল ও আরিফ পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের স্বীকার করেছেন, হোটেলকক্ষে বসে তাঁরা পাঁচ বন্ধু একসঙ্গে একাধিকবার মদ্যপান করেন। অতিরিক্ত মদ্যপানে তরুণী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁরা তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করান। কিন্তু মদে অন্য কিছু মেশানো হয়েছে কি না, এ ব্যাপারে কামরুল ও আরিফ কিছু বলেননি। একসঙ্গে পাঁচজন মদ্যপান করলেও চার ছেলেবন্ধুর কিছুই হয়নি। এতেই সন্দেহ হচ্ছে, তরুণীর মদে নেশাজাতীয় কিংবা বিষাক্ত কিছু মেশানো হতে পারে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাতে এলে রহস্য উদ্‌ঘাটিত হবে।
ওই তরুণীর চার বন্ধু সবার বাড়ি ঢাকার যাত্রাবাড়ী। এর মধ্যে কামরুল আলম ও আরিফ রহমানকে আজ বিকেলে পুলিশ ৫৪ ধারায় আটক দেখিয়ে কক্সবাজার আদালতে পাঠিয়েছে। বর্তমানে তাঁদের আদালতের কারা হেফাজতে রাখা হয়েছে।

মেয়ের খোঁজে আজ সকালে ঢাকা থেকে কক্সবাজার পৌঁছান ওই তরুণীর বাবা। দুপুরে হাসপাতালের আইসিইউতে মেয়ের মৃত্যুর খবর পেলে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। ছেলেবন্ধুদের সঙ্গে চার দিন ধরে মেয়ে কক্সবাজারে, পুলিশের কাছ থেকে এমন তথ্য শুনে হতবাক হন তরুণীর বাবা। তিনি বলেন, চার দিন আগে এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে তাঁর মেয়ে ঘর থেকে বেরিয়েছিলেন। খারাপ উদ্দেশ্যে ফুঁসলিয়ে মেয়েকে ওরা (ছেলেবন্ধুরা) কক্সবাজার নিয়ে এসে হত্যা করতে পারেন।

এ ঘটনায় সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা হয়নি জানিয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মুনীর উল গীয়াস বলেন, মামলার প্রস্তুতি চলছে। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।