এবার রুমার সেই সেতুর পাশে বিশাল পাহাড় কাটছে এলজিইডি
বান্দরবানে রুমা উপজেলার পলিকা খালের ওপর নির্মিত সড়কবিহীন সেই সেতুর সঙ্গে লাগোয়া পাহাড় কাটছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। সংস্থাটি বলছে, সড়ক নির্মাণের জন্য এই পাহাড় কাটা হচ্ছে। অথচ এ জন্য কোনো দরপত্র হয়নি। নেওয়া হয়নি পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি।
গতকাল বুধবারও পাহাড় কাটা হয় ওই এলাকায়। গত সোমবার পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা সরেজমিন গিয়ে পাহাড় কাটার প্রমাণ পান। তাঁরা বলেন, দরপত্র ছাড়া ১০ থেকে ৪০ ফুট উঁচু করে বিপজ্জনকভাবে পাহাড়ের প্রায় ৯০ হাজার ঘনফুট মাটি কাটা হয়েছে।
রুমার স্থানীয় লোকজন ও জনপ্রতিনিধিরা জানান, প্রথম আলোসহ কয়েকটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর ২৮ আগস্ট থেকে এলজিইডি পলিকা খালের সেতুর দুই পাশে সড়কের কাজ শুরু করে। সেতুর দক্ষিণ পাশে প্রাকৃতিক বনাঞ্চলে ঢাকা বিশাল পাহাড়টি দিনরাত কাটা চলে। গণমাধ্যমের সংবাদের ভিত্তিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ২৪ আগস্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ওই তদন্ত কমিটি ৫ সেপ্টেম্বর সেতুটি পরিদর্শনের আগেই পাহাড় কাটা হয়েছে।
তদন্ত কমিটির প্রধান ও অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মিজানুর রহমান সেতু পরিদর্শন শেষে সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের বলেন, এলজিইডির পরিকল্পনায় রুমা থেকে গালেংগ্যা পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার সড়কটি তালিকাভুক্ত রয়েছে। কিন্তু বাজেট বরাদ্দের সীমাবদ্ধতার কারণে সড়ক নির্মাণের আগে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। এখন সেতু থেকে ১ দশমিক ২০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। তবে সড়কটি নির্মাণ শুরুর পর কাজের দরপত্র আহ্বান করা হবে বলে এলজিইডির প্রকৌশলীরা তাঁকে জানিয়েছেন।
সেতু ঘেঁষে সড়ক নির্মাণে পাহাড় কাটা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে মিজানুর রহমান বলেন, পাহাড় কাটার বিষয়টি তদন্ত কমিটির এখতিয়ারের মধ্যে নেই। সেতুসংলগ্ন সড়ক হলেও গালেংগ্যা পর্যন্ত অবশিষ্ট ২১ কিলোমিটার সড়কের প্রকল্প এখনো অনুমোদিত হয়নি।
রুমা উপজেলার সদর থেকে চার কিলোমিটার দূরে পলিকাপাড়াসংলগ্ন ৬৮ মিটার দীর্ঘ পলিকা সেতু ৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। সেতুটি গত জুনে নির্মাণ শেষ হলেও পলিকা খালের দক্ষিণ পাশে বিশাল পাহাড় ও উত্তর পাশে পাড়া ছাড়া কোনো সড়ক ছিল না।
পরিবেশ অধিদপ্তর বান্দরবানের রসায়নবিদ আবদুছ সালাম ও পরিদর্শক আশফাকুর রহমান বলেন, এলজিইডি পলিকাপাড়া এলাকায় পাহাড় কাটার অভিযোগ তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেছে। সেখানে ১০ থেকে ৪০ ফুট উচ্চতায় পাহাড় কেটে তিন ধাপে ৬০০ ফুট দীর্ঘ সড়ক করা হয়েছে। তিন ধাপে প্রায় ৯০ হাজার ঘনফুট পাহাড়ের মাটি কেটে পরিবেশ ও প্রতিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করা হয়। দরপত্র আহ্বানের আগেই নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল সাদাত মো. জিল্লুর রহমান ও সহকারী প্রকৌশলী জামাল উদ্দিন পাহাড়টি কেটেছেন। এ জন্য ঠিকাদার কাউকে পাওয়া যায়নি।
জানতে চাইলে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল সাদাত মো. জিল্লুর রহমান বলেন, পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর অনেকটা চাপের মুখে প্রায় সোয়া এক কিলোমিটার সড়ক করা হচ্ছে। দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।
তবে নাজমুল সাদাত মো. জিল্লুর রহমান দাবি করেন, পাহাড় কাটা হয়নি। পাহাড়ের পাশ ঘেঁষে যতটুকু সম্ভব ক্ষতি না করে সড়কটির গতিপথ নেওয়া হচ্ছে। তারপরও পাহাড় কাটার ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তরে আবেদন করা হয়েছে।
সরেজমিন দেখা যায়, সেতুর দক্ষিণ পাশের পাহাড়টি মাঝবরাবর বনাঞ্চল উজাড় করে কেটে নামানো হয়েছে। পাথুরে পাহাড়টি সেতুসংলগ্ন অংশে প্রায় ৪০ ফুট উঁচু করে কাটা হয়েছে। পাহাড় কাটার কারণে বনাঞ্চলের বেশ কিছু গাছ উপড়ে পড়ে গেছে।
পাহাড় কাটার অনুমতির বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মুফিদুল আলম বলেন, এলজিইডির বিষয়টি বান্দরবানের অফিস তদন্ত করেছে। প্রতিবেদন পাওয়া গেলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এলজিইডি আবেদন করলেও অনুমতি পাওয়ার আগে পাহাড় কাটতে পারে না বলে তিনি জানিয়েছেন।