মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের ভেলুয়াপুঞ্জির পাঁচটি জুমের প্রায় তিন হাজার পানগাছ কেটে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। পাশের ডলুছড়াপুঞ্জির লোকজনের পাশে দাঁড়ানোর জের ধরে গত মঙ্গলবার গভীর রাতে এ ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ পুঞ্জির বাসিন্দাদের। তাঁরা বুধবার রাতে কুলাউড়া থানায় মামলা করেছেন।
মামলার এজাহার, পুলিশ, স্থানীয় বাসিন্দা ও বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ডলুছড়া ও ভেলুয়াপুঞ্জি পাশাপাশি পড়েছে। ডলুছড়ায় ৫০টি ও ভেলুয়াপুঞ্জিতে ৭০টি খাসিয়া পরিবারের বসবাস। পান চাষ ও বিক্রি করে তাদের জীবিকা চলে। ডলুছড়ায় প্রায় ১০ হেক্টর টিলাভূমির মালিকানা নিয়ে পুঞ্জির লোকজনের সঙ্গে বন বিভাগের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। সম্প্রতি বন বিভাগের স্থানীয় মুরইছড়া বিটের উদ্যোগে সেখানে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন প্রজাতির বনজ গাছের বাগান করা হয়। বনায়নে ৫০ জন উপকারভোগীর একটি প্রাথমিক তালিকা তৈরি করা হয়। উপকারভোগীদের বাড়ি আশপাশের বিভিন্ন এলাকায়।
১০ আগস্ট ওই বাগানের ২৫ হাজার চারাগাছ উপড়ে ফেলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ওই দিনই বন বিভাগের মুরইছড়া বিটের বিট কর্মকর্তা অর্জুন কান্তি দস্তিদার কুলাউড়া থানায় মামলা করেন। এতে ডলুছড়াপুঞ্জির মন্ত্রী (পুঞ্জিপ্রধান) লবিং সুমেরসহ কয়েকজনকে আসামি করেন। এর জের ধরে পরদিন ১১ আগস্ট বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকাররা পান কিনতে ডলুছড়াপুঞ্জিতে যেতে চাইলে বন বিভাগের উপকারভোগী লোকজন রাস্তায় তাঁদের বাধা দেন। এ নিয়ে পুঞ্জির লোকজন ও উপকারভোগীদের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়। এ সময় পার্শ্ববর্তী ভেলুয়াপুঞ্জির লোকজন ডলুছড়াপুঞ্জির পক্ষে এগিয়ে আসেন।
পরে বিরোধ মিটমাটে ১৮ আগস্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে একটি বৈঠক হয়। সেখানে পুলিশের কর্মকর্তাসহ উভয় পক্ষের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে বিরোধপূর্ণ জমিতে আপাতত কোনো পক্ষকে না যেতে বলা হয়। এ ছাড়া ২৩ আগস্ট প্রশাসন ও পুলিশের কর্মকর্তারা জমি পরিদর্শন করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়।
এর মধ্যেই বুধবার সকালে ভেলুয়াপুঞ্জির লোকজন কাজ করতে গিয়ে দেখেন, তাঁদের পাঁচটি জুমের অধিকাংশ গাছের গোড়া কাটা। পুঞ্জির মন্ত্রী হেনরি তালাংয়ের ৫০০টি, পারমিত চিরামের ৮০০, উইলসন আমলরংয়ের ৪০০, রতন রিচিলের ৬০০ ও রেনিউইস পলংয়ের ৫০০টি পানগাছ কাটা পড়েছে। রাত ১১টার দিকে পুঞ্জির মন্ত্রী হেনরি তালাং বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন।এতে স্থানীয় টাট্রিউলি গ্রামের বাসিন্দা রফিক মিয়া, বশির আলী, হারিছ আলীসহ আটজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৩০-৪০ জনকে আসামি করেছেন। আসামিরা বন বিভাগের করা বিভিন্ন বাগানের উপকারভোগী। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, পানগাছ কাটায় পুঞ্জির বাসিন্দাদের সাড়ে ১৮ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
স্থানীয় খাসিয়া-গারোদের আন্তপুঞ্জি উন্নয়ন সংগঠন কুবরাজের সাধারণ সম্পাদক ফ্লোরা বাবলি তালাং বলেন, খাসিয়াদের উচ্ছেদ করার উদ্দেশে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি দাবি জানান।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে আসামিদের একজন হারিছ আলী দাবি করেন, পানগাছ কাটার ঘটনাটি সাজানো। এ ঘটনায় তাঁদের কেউ জড়িত নন। যোগাযোগের চেষ্টা করলে রফিক মিয়া ও বশির আলীর মুঠোফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে।
কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিনয় ভূষণ রায় বৃহস্পতিবার সকালে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ডলুছড়াপুঞ্জির ঘটনার জের ধরেই ভেলুয়াপুঞ্জির ঘটনাটি ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।